Potato Cutlet Recipe: পূজার অতীতের সাথে জড়িয়ে আছে তাঁর মায়ের হাতের তৈরি রেসিপিটি
Potato Cutlet Recipe: ১৫ই অগাস্ট ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের দিনে, আমাদের প্রিয় ফুড ব্লগার প্রিশিকা, তাঁর প্রিয় বন্ধু পূজার বাড়িতে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে যান। তাঁর এই যাওয়ার উদ্দেশ্যটি শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য নয়, একটি নতুন রেসিপির মাধ্যমে তাঁর বন্ধুর শৈশবের স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করাই ছিল তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য। পূজার সঙ্গে প্রিশিকার একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর শৈশব জীবনের একটি প্ৰিয় ডিশ নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ার জন্য প্রিশিকাকে তাঁর বাড়িতেই আমন্ত্রণ জানান তিনি। এই ডিশটি তাঁর মা প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন তাঁর জন্য রান্না করতেন। তাই এই রেসিপিটি তাঁর হৃদয়ের খুব কাছের একটি রেসিপি। এই ডিশটি, একটি সাধারণ অথচ সুস্বাদু আলুর কাটলেট হলেও, শুধুমাত্র এটি একটি রেসিপি নয় বরং এটি প্রেম, ঐতিহ্য এবং অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করার আনন্দের প্রতীক।
পূজার শৈশবে ১৫ই অগাস্টের তাৎপর্য
পূজার জন্য, ১৫ই অগাস্ট সর্বদা একটি হলি-ডের চেয়ে বেশি কিছু ছিল। এটি একটি নস্টালজিয়ায় ভরা একটি দিন, স্কুল উদযাপনের স্মৃতি, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এদিন তাঁর মা তাঁকে বাড়িতে স্বাগত জানানোর জন্য বিশেষ খাবার তৈরি করতেন। স্বাধীনতা দিবসে স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগদানের পর, যেখানে করিডোরে জাতীয় সঙ্গীত প্রতিধ্বনিত হয় এবং দেশাত্মবোধক গান বাতাসে ভরে যায়, সেখানে পূজা আগ্রহের সাথে বাড়ি ফিরতেন। কারণ তিনি জানতেন যে, তাঁর মা তাঁর জন্য কিছু সুস্বাদু খাবার রান্না করেছেন। সেই ডিশটি হল, আলুর কাটলেট, যা পূজার জন্য ১৫ই অগাস্ট স্মরণীয় হয়ে উঠেছে – যা আজও তাঁর বড্ডো প্রিয়।
ডিশটির পিছনের আসল গল্প: আলুর কাটলেট
প্রিশিকা এবং পূজা রান্নাঘরে যাওয়ার সাথে সাথে এই আলুর কাটলেটের পিছনের গল্পটি শেয়ার করতে শুরু করেন পূজা। তিনি জানান যে, কীভাবে তাঁর মা প্রতি বছর ভালোবাসা এবং যত্ন সহকারে এই ডিশটি তৈরি করতেন। যদিও রেসিপিটি অত্যন্ত সহজ, তবে এই রেসিপিটির সঙ্গে তাঁর মায়ের স্নেহ জড়িয়ে থাকায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনেরই যেন এক আলাদা আনন্দ ছিল। আজও, পূজা এই ডিশটি প্রস্তুত করার মধ্যে অদ্ভূত একটা আনন্দ খুঁজে পায়, কারণ এটি তাঁর শৈশবের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
আলুর কাটলেটের তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি হল:
এই রেসিপিটি তৈরি করার আগে পূজা এটি তৈরি করতে যা যা প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির লাগে তার তালিকাও তৈরি করেছেন:
- ৪টি মাঝারি সাইজের আলু
- ১ চিমটে হলুদ গুঁড়ো
- ২ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
- ২ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো
- রেড চিলি ফ্লেক্স স্বাদমতো
- নুন স্বাদমতো
- ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো ( বিকল্প হিসাবে কর্নফ্লাওয়ারও ব্যবহার করতে পারেন)
- গণেশ মার্কা সরিষা তেল (পূজার মা ব্যবহার করতেন)
এই প্রতিটি উপাদানই তাৎপর্য বহন করে। যেমন হলুদ গুঁড়ো একটি সুন্দর সোনালি আভা যোগ করে, যেখানে গরম মশলা গুঁড়ো এবং রেড চিলি ফ্লেক্স ঝাল এবং মশলার স্বাদ নিয়ে আসে, যা এই খাবারটিকে আরামদায়ক অথচ উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে। চালের গুঁড়ো মিশ্রণটিকে একত্রে আবদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং কাটলেটগুলিকে একটি খাস্তা টেক্সচারও দেয়। পূজা গণেশ মার্কা সরিষার রান্নার তেল ব্যবহার করার জন্য জোর দেন, ঠিক যেমনটি তাঁর মাও করতেন, কারণ এটি বছরের পর বছর ধরে তার গুণমান, গন্ধ এবং সুগন্ধ বজায় রেখেছে।
ধাপ ১: আলু প্রস্তুত করা
পূজা প্রথমে আলু প্রস্তুত করে রান্নার প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি ৪টি মাঝারি সাইজের খোসা ছাড়ানো আলু নেন এবং তারপরে সূক্ষ্মভাবে গ্রেট করেন। তিনি একটি ঝাঁঝরি ব্যবহার করেই আলুগুলি গ্রেট করেন। এমন ভাবেই গ্রেট করলেন যাতে আলুর টুকরোগুলি দৃশ্যমান এবং কাটলেটগুলিকে তাদের বৈশিষ্ট্যযুক্ত টেক্সচার দিতে সাহায্য করবে।
আলু গ্রেট করা হয়ে গেলে, পূজা গ্রেট করা আলু কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখেন। এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ডিশটিকে খাস্তা বানাতে সাহায্য করবে। গ্রেট করা আলুগুলি প্রায় ৫ মিনিটের জন্য জলে রেখে দেওয়ার পর হাতে করে চিপে সমস্ত আলুর জল বাইরে বার করে দিয়ে গ্রেট করা আলুগুলি একটি পাত্রে রাখলেন।
ধাপ ২: মশলা যোগ করা
আলু প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় এবার মশলা যোগ করার সময় এসেছে। পূজা প্রথমে ওই গ্রেট করা আলুতে ১ চিমটি হলুদ গুঁড়ো ছিটিয়ে দেন। হলুদ গুঁড়ো শুধুমাত্র একটি সুন্দর রঙ-ই যোগ করে না, বরং এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা এটিকে খাবারের জন্য স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
এরপরে, তিনি তাতে ধনে গুঁড়ো এবং গরম মশলা গুঁড়ো যোগ করেন, যা গন্ধের গভীরতা নিয়ে আসে এবং কাটলেটগুলিকে সুগন্ধযুক্ত এবং সমৃদ্ধ করে তোলে। তারপর রেড চিলি ফ্লেক্স স্বাদ অনুযায়ী যোগ করলেন। পূজা পরামর্শ দেন যে, এটি পছন্দের উপর ভিত্তি করে দেওয়া দরকার।
অবশেষে, স্বাদ মতো নুন দিয়ে দিলেন। আসলে নুন নিশ্চিত করে যে, রান্নায় মশলা ঠিক আছে কী না।
ধাপ ৩: মিশ্রণ প্রস্তুত করা
এবার মিশ্রণটি প্রস্তুত করতে, পূজা চালের গুঁড়ো ব্যবহার করেন। তিনি জানান যে, তাঁর মা সর্বদা কর্নফ্লাওয়ারের পরিবর্তে চালের গুঁড়োই ব্যবহার করতেন। কারণ এটি একটি ঐতিহ্যগত পছন্দ যা কাটলেটগুলিকে একটি অনন্য টেক্সচার দেয়। চালের গুঁড়ো মিশ্রণটিকে একসাথে ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে এটি কাটলেটের আকার দিতে সহজ করে।
পূজা এই মশলাদার আলুর মিশ্রণে ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো যোগ করেন এবং সবকিছু ভালোভাবে মিশিয়ে নেন। মিশ্রণটি ভালোভাবে মেশানো উচিত, যাতে মশলাগুলি সমানভাবে ছড়িয়ে যায় কাটলেটের আকারে তৈরি করার সময়ও আটোসাটো অবস্থায় থাকে।
ধাপ ৪: কাটলেটের আকার দেওয়া
আলুর মিশ্রণটি প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর কাটলেটের আকার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান পূজা। প্রক্রিয়াটি সহজ করে তুলতে এবং একটি অভিন্ন আকৃতি দিতে পূজা একটি ছোট বাটি ব্যবহার করেন। প্রথমে ওই বাটির ভিতরে গণেশ মার্কা সরিষা তেল ভালো ভাবে গ্রিস করে নেন। তারপর তিনি আলুর মিশ্রণ থেকে সামান্য মিশ্রণ নিয়ে ওই গ্রিস করা বাটিতে রাখে। তারপর পূজা তাতে আলতো করে চাপ দেয় এবং এরপর হাতের উপর বাটিটি উল্টে দিতেই কাটলেটের আকৃতির মতোই আলুর কাটলেট বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
এই কৌশলটি, তাঁর মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত, তিনি জানান যে, প্রতিটি কাটলেটের একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ আকৃতি এবং আকার রয়েছে। তারপর কাটলেটগুলি একটি প্লেটে সাজিয়ে রাখা হয় ডুবো তেলে ভাজার জন্য।
ধাপ ৫: কাটলেট ভাজা
সর্বশেষ ধাপ হল, কাটলেটগুলিকে সোনালি-বাদামী করে ভাজা। পূজা মাঝারি আঁচে একটি প্যানে গণেশ মার্কা সরিষার তেল গরম করেন। তিনি তেলের তাপমাত্রা ঠিক রাখার উপর জোর দেন, কারণ তেল খুব গরম হয়ে গেলে কাটলেটগুলি পুড়ে যাবে।
তাই তেল ঠিক মতো গরম হয়ে গেলে পূজা আসতে আসতে কাটলেটগুলি প্যানে দিয়ে দিলেন। তিনি পরামর্শ দিলেন যে, সব কাটলেটগুলি একসঙ্গে না ভেজে ৩-৪টে করে ভাজলেই হবে। এবার সোনালি-বাদামী করে ভাজা হয়ে যাওয়ায় একে একে তিনি কাটলেটগুলি তুলে নিলেন। কাটলেটগুলি দেখেই মনে হচ্ছে, খুব খাস্তা এবং নরম হয়েছে।
ধাপ ৬: আলুর কাটলেট পরিবেশন করা
কাটলেটগুলি ভাজা শেষ হওয়ার সাথে সাথে, পূজা সেগুলিকে একটি টিস্যু পেপারে তুলে নিয়ে একটি প্লেটে রাখলেন, যাতে অতিরিক্ত তেল নিষ্কাশন হয়ে যায়। তারপর তিনি একটি সার্ভিং প্লেটে কাটলেটগুলি সাজিয়ে রাখলেন, যা প্রিশিকার খাওয়ার জন্য একেবারেই প্রস্তুত।
যখন প্রিশিকা প্রথম কামড় দিলেন, তখন তিনি এতটাই মুদ্ধ হয়ে গেলেন যে, কাটলেটের খাস্তা, মশলাদার দিকটিও তাঁর নজর এড়ালো না। মশলার সংমিশ্রণ এতটাই ভারসাম্যপূর্ণ যে কাটলেটগুলিকে আরও বেশি ক্রাঞ্চি করে তুলেছে। প্রিশিকাও অত্যন্ত আনন্দ সহকারে এই এই ডিশটি উপভোগ করেছিল।
উপসংহার: অতীতের সাথে একটি ডিশটির সম্পর্ক
এই সহজ অথচ হৃদয়স্পর্শী ডিশটি মাধ্যমে, পূজা এবং প্রিশিকা অতীতের স্মৃতিচারণ করেন। আলুর কাটলেট, যদিও এর উপাদান এবং প্রস্তুতি অত্যন্ত সহজ তবে এটি পূজার পারিবারিক ঐতিহ্য, শৈশবের স্মৃতি এবং স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আনন্দের সারাংশ বহন করে। পূজার জন্য, এটি তাঁর মাকে সম্মান জানানোর একটি উপায়।
প্রিশিকা, পূজার বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় শুধুমাত্র আলুর কাটলেটের স্বাদই ভাগ করে নেননি, তার সঙ্গে অতীতের স্মৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণেও এই খাবারের তাৎপর্য সম্পর্কেও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। এই গোটা দিনটি একটি সুন্দর মুহূর্তে শেষ হয় যে, দুই বন্ধুই অতীতের স্মৃতিচারণ করে এবং ভবিষ্যতে এই জাতীয় আরও স্মৃতি তৈরি করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।
এই ১৫ই অগাস্ট, দেশ যখন ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস স্বাধীনতা উদযাপন করল, তখন পূজা এবং প্রিশিকার জীবনেও সুন্দর কিছু মুহূর্ত মনের মনিকোঠায় গেঁথে রইল।
এইরকম আরও রেসিপি পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজের সাথে যুক্ত থাকুন।
We’re now on WhatsApp. Click to join
Like this post?
Register at One World News to never miss out on videos, celeb interviews, and best reads.