Shorshe Ilish Recipe: রিমি দিদির হাতের তৈরি এই সর্ষের ইলিশের স্বাদ কখনই ভোলার নয়
Shorshe Ilish Recipe: একটি রন্ধনসম্পর্কীয় যাত্রার অনুসন্ধান করতে একজন রিপোর্টার হিসাবে, আমি গিয়েছিলাম রিমি দিদির বাড়িতে। রিমি দিদি মনে-প্রাণে একজন বাঙালি। শুধু তাই নয়, তার হাতের সুস্বাদু এবং খাঁটি বাঙালিয়ানা খাবারের জন্যও তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন। আজ শুধুমাত্র আমি রন্ধনসম্পর্কীয় যাত্রাই করিনি, সেই সঙ্গে বাঙালিয়ানা খাবারের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনেছি। আমি নিজেও যেহেতু বাঙালি, তাই বাঙালি খাবারের সাথে আমার টান চিরকালের। রিমি দিদিও একটি উষ্ণ হাসি দিয়ে আমাকে স্বাগত জানালেন তার বাড়িতে। রিমি দিদির বাড়িতে প্রবেশ করলেই মশলা সুবাসে ভরে গেল চারিদিক। মাছের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা কারও অজানা নয়, তার আরও একবার সাক্ষী থাকলাম আমি।
বাঙালিয়ানা খাবারের ঐতিহ্য
“স্বাগতম, সঞ্জনা! আজ, আমি আপনার সাথে একটি বিশেষ রেসিপি শেয়ার করতে যাচ্ছি৷ এটা আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি,” রিমি দিদি উৎসাহের সাথে বলেছিলেন। “এটি একটি ক্লাসিক বাঙালি খাবার, যা সর্ষের তেল দিয়ে রান্না করা হয়। রেসিপিটির নাম – ‘সর্ষে ইলিশ’।
ইলিশ মাছের সাথে বাঙালির ইমোশন জড়িয়ে আছে। মূলত এই মাছটি তার সুন্দর গন্ধ এবং দুর্দান্ত স্বাদের জন্যই পরিচিত। এই মাছ একটি বিশেষ স্থান ধারণ করে বাঙালি রন্ধন ঐতিহ্যে। তাই রিমি দিদিও এই রেসিপিটি রান্না করে বুঝিয়ে দিলেন কেন এটি তার বংশপরম্পরায় ধরে চলে আসছে।
গণেশ মার্কা সরিষার তেলের বংশপরম্পরা ধরে ব্যবহার
রান্নাটি শুরু করার সাথে সাথে, রিমি দিদি গণেশ মার্কা সরিষার তেলের ব্যাপারে কিছু কথা শেয়ার করেছেন আমাদের সাথে। “আমাদের পরিবারের সকলে রান্নার জন্য গণেশ মার্কা সরিষার তেলই ব্যবহার করতেন। বিশেষ করে এই সরিষার তেলের গন্ধ, স্বাদ এবং গুণমানের জন্যই আমাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। আমরা ছোটবেলা থেকেই গণেশ মার্কা সরিষার তেলই ব্যবহার করছি” তিনি মনে করিয়ে দিলেন। “আসলে সরিষার তেল একটি অনন্য গভীরতা যোগ করে আমাদের খাবারে, যে কারণে আপনি এটি আমাদের বেশিরভাগ রেসিপিতে পাবেন।” জানালেন তিনি।
গণেশ মার্কা সরিষার তেল মূলত উচ্চমানের সরিষার তেলের জন্যই পরিচিত। এর সমৃদ্ধ স্বাদ এবং শক্তিশালী গন্ধের জন্য বাঙালি পরিবারগুলিরও প্রথম পছন্দ এই তেল। রিমি দিদির মতে, এই তেলটি শুধু একটি রান্নার উপাদান নয়, বাঙালি খাবারের খাঁটি স্বাদ বের করে আনারও মূল অস্ত্র এই তেল।
উপকরণ
রিমি দিদি এই রেসিপিটির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হল:
- ইলিশ মাছ ৫০০ গ্রাম
- সর্ষে গুঁড়ো ৩ টেবিল চামচ
- কালো জিরে ১/২ চা চামচ
- কাঁচালঙ্কা ৫-৬টি
- হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ
- স্বাদ মতো নুন
- সামান্য গরম জল
- গণেশ মার্কা সরিষার তেল (স্বাদ ও গন্ধের জন্য দিদির সবচেয়ে পছন্দ)
ইলিশ মাছের প্রস্তুতি
১. মাছ পরিষ্কার এবং ম্যারিনেট করা: রিমি দিদি প্রথমে ভালো করে ইলিশ মাছ ধুয়ে নিয়েছিলেন। তিনি তিনবারের মতো ধুয়ে তবেই মাছগুলি ম্যারিনেট করেছিলেন। এবার ম্যারিনেটের জন্য সামান্য হলুদ গুঁড়ো, নুন এবং অল্প গণেশ মার্কা সরিষার তেল দিয়ে ১০ মিনিটের জন্য ম্যারিনেট করে নিয়েছিলেন। “স্বাদের জন্য ম্যারিনেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন।
২. স্যালো ফ্রাই করা: ম্যারিনেটের পর মাছগুলি স্যালো ফ্রাই করার জন্য প্রথমে রিমি দিদি একটি ননস্টিক প্যান বসিয়ে একে একে ম্যারিনেট করা মাছের পিসগুলি দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি জানান, “ম্যারিনেটের সময় বেশি করে গণেশ মার্কা সরিষার তেল দিয়েছিলাম, তাই আর স্যালো ফ্রাইয়ের সময় তেল দেওয়ার দরকার নেই।” তিনি আরও জানালেন, “আলাদা করে স্যালো ফ্রাইয়ের দরকার হয় না, তবে আমরা বাড়িতে এই রকম ভাবেই করে থাকি, যাতে একটু ক্রিপসি হয়। অনেকের এই ইলিশ মাছের গন্ধটা ভালো লাগে না, তবে এই তেলটার জন্য সেই গন্ধটাও চলে যায়।”
স্যালো ফ্রাই করতে করতে রিমি দিদির থেকে জানতে চাইলাম, তিনি এই রান্নাটি কোথা থেকে শিখেছেন? উত্তরে তিনি জানান, “আমার জেঠিমার কাছ থেকেই আমার যাবতীয় রান্না শেখা। আসলে এই রেসিপিটি বাঙালির কাছে ইমোশন। আর ইলিশ মাছে যদি সর্ষের তেল না থাকে, তবে ব্যাপারটা ঠিক জমে না। এই রেসিপিটি বাঙালির প্রতিটি ঘরের রেসিপি।” তিনি আরও জানালেন, “আমাদের বাড়ির প্রত্যেকেই এই রেসিপিটি রান্না করেন।” রিমি দিদিকে গনেশ মার্কা সরিষার তেলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জানান, “আমাদের বংশপরম্পরায় প্রত্যেকেই এই তেল ব্যবহার করেন। যেহেতু এটি কাচ্চি ঘানি, তাই আমার গোটা পরিবার গনেশ মার্কা সরিষার তেল ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করে না।”
মশলা প্রস্তুত করা –
১. ভাজা মাছগুলি তুলে রাখা: স্যালো ফ্রাই হয়ে যাওয়ার পর একটি প্লেটে মাছগুলি রিমি দিদি তুলে রাখলেন। এবার ওই তেলের সাথে আরও একটু গনেশ মার্কা সরিষার তেল যোগ করলেন তিনি। তিনি জানালেন, “স্যালো ফ্রাইয়ের অবশিষ্ট তেল ফেলবো না আমি, কারণ তাতে ইলিশের মাছের রস ঢুকেছে, যা রান্নায় স্বাদ আরও বাড়াবে।” কড়াইয়ে আরও একটু গণেশ মার্কা সর্ষের তেল দেওয়ার সময় রিমি দিদিকে প্রশ্ন করলাম যে, কেন তাঁর পরিবারের সকলেও গনেশ মার্কা সরিষার তেলই ব্যবহার করেন? উত্তরে তিনি জানালেন, “এই তেলের এত বেশি ঝাঁঝ এবং এত ভালো গন্ধ, যাই খাবার বানানো হোক না কেন, এই তেল ছাড়া কোনও কথা হবে না।” তিনি এও জানালেন, “ভবিষ্যতেও আমরা গনেশ মার্কা সরিষার তেলই ব্যবহার করব।” সঙ্গে তিনি জানান, “সর্ষে ইলিশের প্রধান উপকরণই হল সর্ষের তেল।”
২. মশলা তৈরি: এরপর তেল গরম হওয়ার পর তিনি কালো জিরে এবং চেরা কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিলেন। ফোড়ন থেকে সুগন্ধ বেরোলে তিনি তাতে দিয়ে দিলেন সর্ষে পেস্ট। তিনি জানান, ‘এই পেস্টটিতে আমি অল্প হলুদ গুঁড়ো, সামান্য নুন, লাল লঙ্কার গুঁড়ো এবং পরিমান মতো গরম জল ব্যবহার করেছি। তবে আপনি চাইলে বাটাও ব্যবহার করতে পারেন।” এবার সর্ষে পেস্ট দেওয়ার পর রান্না দিয়ে দারুন সুগন্ধ বের হয়। বিশেষ করে সর্ষের তেলের গন্ধে চারিদিক ভরে উঠে। রান্না করতে করতে রিমি দিদিকে জিজ্ঞাসা করা করলাম, জেঠিমার দিয়েই কি তাঁর রান্না শেখা? উত্তরে দিদি জানান, “আমার জেঠিমা অসাধারণ রাঁধুনি ছিলেন, তিনি ইলিশেরও একাধিক ভালো ভালো পদ রান্না করতেন।”
গ্রেভি তৈরি করা
১. জল যোগ করা: গ্রেভি তৈরির জন্য রিমি দিদি রান্নায় তাতে যোগ করলেন সামান্য গরম জল। “রান্নার গন্ধ এবং স্বাদের জন্য আমরা মশলা ব্যবহার করি, তবে গ্রেভি তৈরি করতে অবশ্যই জল ব্যবহার করতে হবে।” তিনি ব্যাখ্যা করলেন। এদিকে মাঝে মাঝে রান্নাটি নাড়তেও থাকলেন তিনি, যাতে সমস্ত মশলা ভালোভাবে মিশে যায়।
২. মাছ সেদ্ধ করা: সুন্দর গ্রেভি তৈরি হওয়ার পড়ে তিনি পরিমান মতো নুন দিলেন। তিনি জানালেন, “মাছে নুন দিয়েছিলাম, তাই এখন অল্প করেই নুন যোগ করলাম। এবার ১০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রান্না করার পর গ্রেভি ফুটে উঠলে স্যালো ফ্রাই করা ইলিশ মাছগুলি আসতে আসতে করে তিনি দিয়ে দিলেন।
৩. সর্বশেষ ধাপ: এরপর গ্রেভি ফুটে উঠলে মাছগুলি ভালো করে উল্টে পাল্টে দিলেন যাতে মাছের মধ্যেও গ্রেভি ঢুকে যায়। তিনি জানালেন, “উপর দিয়ে আরও একটু গণেশ মার্কা সরিষার তেল ছড়িয়ে দেব স্বাদ এবং গন্ধের জন্য।” সঙ্গে বললেন, “I love to cook ganesh, because it the the best”। এবার ৫-৭ মিনিট ঢাকা দিয়ে রান্নার করার পর গ্যাস বন্ধ করে উপর থেকে ফ্লেভারের জন্য দুটো কাঁচালঙ্কা ছড়িয়ে দিলেন রিমি দিদি। এবার ১০ মিনিটের মতো আবারও ঢাকা দিয়ে রাখলেন রান্নাটি। সত্যি বলতে রান্নাটির গ্রেভি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে, খাবারটি ঠিক কতটা মশলাদার এবং সুস্বাদু হয়েছে।
বাঙালিয়ানা রান্নার আনন্দ
গরম গরম সর্ষে ইলিশ তৈরি করে, রিমি দিদি অতি যত্ন সহকারে আমাকে একটি প্লেটে খাবার পরিবেশন করলেন। এই অপূর্ব স্বাদের সর্ষে ইলিশে এক কামড় দিতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলাম আমি। তবে এর আগেও আমি একাধিকবার সর্ষে ইলিশ খেয়েছি, কিন্তু আজকে রিমির দিদির হাতের এই সর্ষে ইলিশের স্বাদ কখনই ভোলার নয়। বিশেষ করে গণেশ মার্কা সরিষার তেলের গন্ধ রান্নাটির আরও বেশি স্বাদ বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন তার গোটা পরিবার গণেশ মার্কা সর্ষের তেলই ব্যবহার করেন তা অনুভব করা গেল। দিদির হাতের তৈরি এই খাবারটি অনায়াসে ৪-৫ জনকে পরিবেশন করা যেতে পারে।
আমি রিমি দিদির বাড়ি থেকে একটি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে বের হলাম। রিমি দিদির পারিবারিক গল্প এবং তার হাতের তৈরি বাঙালি খাবার, যা চিরকাল আমার মনের মনিকোঠায় রয়ে যাবে। ইলিশ মাছের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা এবং সর্ষে ইলিশের রেসিপি একজন বাঙালি হিসাবে আমি অনুভব করতে পেরেছি।
এইরকম আরও রেসিপি পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজের সাথে যুক্ত থাকুন।
We’re now on WhatsApp. Click to join
Like this post?
Register at One World News to never miss out on videos, celeb interviews, and best reads.