Khaman Dhokla Recipe: মিসেস পারমার এই রেসিপির সাথেই উস্কে দিলেন তাঁর প্রয়াত স্বামীর স্মৃতিও
Khaman Dhokla Recipe: কোভিড-১৯ এমন একটি মহামারী হিসাবে ধরা দিয়েছিল, যা বিশ্ববাসীকে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেছিল। যার ফলে আমাদের জীবনযাত্রারও একাধিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। সেই সময় সারা দেশ তথা বিশ্বজুড়ে লকডাউন থাকায় অনেকেই আবার বাড়িতে নিত্য নতুন রান্না করে কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিল। কারও কারও কাছে আবার এটি হয়ে উঠেছিল বেঁচে থাকার রসদ। আজ আমি (প্রিশিকা) এমনই এক গুজরাতি গৃহিনী এবং বিজনেস ওমেনের বাড়িতে এসেছি, যিনি লকডাউনের সময় থেকে রান্নার প্রতি ভালোবাসা উজাড় করে চলেছেন।
মিসেস পারমারের জীবনে কোভিড মহামারীর প্রভাব:
কোভিড-১৯ সকলের জীবনেই ভয়, উদ্বেগ এবং ক্ষতির তরঙ্গ নিয়ে এসেছে। কেউ কেউ প্ৰিয়জনকে হারালেও অনেকে আবার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর স্বাদও অনুভব করেছেন। লকডাউনের মধ্যে, অনেকেই নতুন শখও খুঁজে পেয়েছে। মিসেস পারমারও এমন একজন যিনি রান্নার প্রতি তাঁর ভালো বাসাকে পুনরায় আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
মিসেস পারমারের বাড়ি পরিদর্শন
আমি মিসেস পারমারের বাড়িতে পৌঁছতেই, তিনি ঐতিহ্যবাহী গুজরাতি অভিবাদন দিয়ে আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন। বললেন, “জয় শ্রী কৃষ্ণ।” মিসেস পারমারের আতিথেয়তা দেখে আমিও আপ্লুত হলাম। এর পর কথোপকথনের মাধ্যমেই উঠে এল গুজরাতি খাবারের প্রসঙ্গ, যা তৎক্ষণাৎ আমাকে উত্তেজিত করল।
গুজরাতিদের জন্য রান্না একটি আবেগ
তিনি রান্না করতে পছন্দ করেন কিনা জানতে চাইলে মিসেস পারমার বলেন, “আমি একজন গুজরাতি, আমি সবসময় রান্না পছন্দ করি।” তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, ছোটবেলা থেকেই তাঁকে তাঁর মা গৃহস্থালির সমস্ত কাজ, বিশেষ করে রান্না শেখার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। বিশেষ করে গুজরাতি মহিলাদের জন্য, রান্না করা শুধুমাত্র একটি কাজ নয় বরং এটি জীবনে বেঁচে থাকার রসদ। এই ঐতিহ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে।
ব্যবসার কাজ এবং বাড়ির ভারসাম্য বজায় রাখা
মিসেস পারমার শুধুমাত্র একজন গৃহিনী নন, তিনি এখন বিজনেস ওমেনও বটে। তিনি আইএমসির মার্কেটিংয়ে কাজ করেন। আমি যখন মিসেস পারমারকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কীভাবে তাঁর গৃহস্থালির দায়িত্ব এবং তাঁর কর্মজীবনের ভারসাম্য বজায় রাখেন? তিনি আমাকে জানালেন, তিনি তাঁর অফিসিয়াল কাজ এবং তাঁর গৃহস্থালির দায়িত্ব উভয়ে মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এই ভারসাম্য বজায় রাখা তাঁর মঙ্গল এবং সুখের জন্যও অপরিহার্য।
লকডাউনের সময় বাড়িতে প্রথম খামান ধোকলা তৈরি
কথোপকথনের মধ্যেই উঠে এল গুজরাতি স্পেশাল ডিশ খামানের প্রসঙ্গ। বেসনের তৈরি এই সুস্বাদু গুজরাতি রেসিপিটি তিনি শেয়ারও করলেন আমাদের সাথে। আসলে লকডাউনের সময়, অন্য অনেকের মতো তিনিও রান্না নিয়ে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নিলেন কিভাবে তিনি বাড়িতে প্রথম খামান বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বললেন, “প্রথম দিকে, আমি বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছি, ডিশটি সঠিকভাবে তৈরি হয়নি এবং আমার ছেলেমেয়েরাও আমাকে এটি তৈরি করা বারণ করেছিল।” তবে তিনি কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন, একাধিক ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে ভুলগুলি বিশ্লেষণ করার পরে, তিনি অবশেষে রেসিপিটি পারফেক্ট বানাতে পেরেছিলেন। তাঁর হাতের তৈরি প্রথম খামারটি পরিবারের সকলের পাশাপাশি তাঁর প্রয়াত স্বামীরও খুব পছন্দ হয়েছিল।
একটি তিক্ত স্মৃতিও তিনি ভাগ করে নিলেন
মিসেস পারমার যখন তাঁর প্রয়াত স্বামীর কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে বিষণ্ণতার সুর শোনা যাচ্ছিল। আসলে তাঁর স্বামীরই প্রিয় খাবার ছিল খামান। আর তিনি যতবারই তা তৈরি করেন, তাঁর স্বামীর কথাই মনে পড়ে যায়। তিনি নরম স্বরে বললেন, “আমি তাঁকে অনেক মিস করি, কিন্তু জীবন চলতেই হবে।” আমিও তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে গিয়ে তাঁর মনোবল বাড়িয়ে তুললাম।
এরপর রান্নাঘরে গিয়ে আবেগের সাথে তিনি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নিলেন খামান রেসিপি।
খামান ধোকলা তৈরির জন্য উপকরণগুলি হল:
- বেসন ১০০ গ্রাম
- সাইট্রিক অ্যাসিড ১/২ টেবিল চামচ
- কাঁচা লঙ্কা ৪-৫টি
- চিনি ১ টেবিল চামচ
- নুন স্বাদ মতো
- কারি পাতা
- কালো সর্ষে ১ টেবিল চামচ
- গণেশ মার্কা সরিষার তেল পরিমান মতো
- ইনোর প্যাকেট ১টি (লেবুযুক্ত ইনো এড়িয়ে চলুন)
- জল পরিমান মতো
- ধনে পাতা (গার্নিশের জন্য)
খামান ধোকলা তৈরির সম্পূর্ণ রেসিপি:
১. বেসনের ব্যাটার প্রস্তুত করা:
- প্রথমে মিসেস পারমার একটি বড় মিক্সিং বাটিতে ১০০ গ্রামের মতো বেসন নিলেন।
- তারপর তাতে এক চিমটে নুন, ১/২ টেবিল চামচ সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ১ টেবিল চামচ চিনি যোগ করলেন।
- এবার অল্প অল্প করে জল দিয়ে তিনি একটি ব্যাটার প্রস্তুত করে নিলে। অবশ্যই নুন ও চিনি সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হওয়া পর্যন্ত তিনি মিশ্রণটি নাড়িয়ে গেলেন।
- এরপর ব্যাটার প্রস্তুত হয়ে গেলে অন্তত ২০ মিনিটের জন্য ব্যাটারটি ঢাকা দিয়ে রাখলেন।
২. স্টিমিং পদ্ধতি:
- এবার পালা স্টিমিং পদ্ধতির, তাই প্রথমে মিসেস পারমার গ্যাসে একটি বড় কড়াই বসিয়ে তাতে পরিমান মতো জল দিলেন।
- এরপর ওই কড়াইয়ে একটি স্টিলের রিং বা স্ট্যান্ড রাখলেন, আসলে এর উপরই ভাপে খামান তৈরি করা হবে।
- তারপর জল ফুটতে শুরু করায় খামান তৈরির পরবর্তী ধাপ প্রস্তুত করলেন তিনি।
৩. প্যান বা প্লেট গ্রিজ করা:
- এরপর যে পাত্রটিতে খামানটি তৈরি হবে সেই পাত্রে সামান্য গণেশ মার্কা সরিষার তেল দিয়ে ভালো করে গ্রিজ করে নিলেন তিনি।
৪. গরম জলে ভাপানো পদ্ধতি:
- পাত্রটি গণেশ মার্কা সরিষার তেল দিয়ে গ্রিজ করা হয়ে সেটি কড়াইয়ে রাখা স্ট্যান্ডের উপর রাখলেন এবং কিছু সেকেন্ডের জন্য ঢাকা দিয়ে দিলেন।
৫. ইনো মেশানো:
- ২০ মিনিট পর ওই ব্যাটারটিতে ইনোর একটি এবং সামান্য জল যোগ করলেন।
- এবার ভালো করে ব্যাটারটি নাড়াচাড়া করলেন। মাঝে মাঝে অল্প অল্প করে জলও দিলেন। আসলে ব্যাটারটি যেন খুব ঘন নয় বা খুব পাতলা নয়।
৬. ভাপে তৈরি হল খামান ধোকলা:
- তারপর কড়াইয়ের ঢাকা খুলে পাত্রটির মধ্যে বেসনের পুরো মিশ্রণটি দিয়ে দিলেন তিনি।
- এরপর মাঝারি আঁচে ১০-১৫ মিনিট আবারও ঢাকা দিয়ে রান্না করতে দিলেন।
- এবার মাঝে মাঝে একটি ছুরি দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন খামান ধোকলা তৈরি হয়েছে কী না।
৭. তড়কা প্রস্তুত করা:
- যতক্ষণ খামান ভাপানোর সময় চলছে তখন অন্যদিকে তড়কা প্রস্তুতের জন্য প্রথমে কড়াইয়ে একটি ছোট প্যান বসিয়ে তাতে ১ টেবিল চামচ গণেশ মার্কা সরিষার তেল গরম করে নিলেন।
- তেল গরম হয়ে এলে তাতে কালো সর্ষে, চেরা কাঁচা লঙ্কা, কারি পাতা এবং হাফ কাপ জল দিয়ে দিলেন।
- তারপর স্বাদ মতো চিনি এবং হিমালয়ান নুন যোগ করে একটু নেড়েচেড়ে নিলেই প্রস্তুত হয়ে গেল তড়কা। এবার তা ঠান্ডা হতে দিলেন।
৮. সর্বশেষ পদ্ধতি:
- খামান তৈরি হয়ে গেলে তা গ্যাস থেকে নামিয়ে কিছুটা ঠান্ডা হতে দিলেন তিনি।
- ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর মিসেস পারমার একটি ছুরি দিয়ে চৌকো চৌকো পিস করে কেটে নিলেন।
- তারপর উপর থেকে ভালো করে তড়কাটি ছড়িয়ে দিলেন। এমন ভাবে ছড়ালেন যেন খামানের কোণেও তড়কার স্বাদ প্রবেশ করে।
- সবশেষে ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে প্রস্তুতি করে নিলেন গুজরাতি স্পেশাল ডিশ খামান ধোকলা।
পরিবেশন পদ্ধতি:
গুজরাতি এই স্পেশাল ডিশ খামান ধোকলা তৈরি হয়ে গেলে এবার পরিবেশন এবং স্বাদ নেওয়ার পালা। মিসেস পারমার আমাকে (প্রিশিকা) অতি যত্ন সহকারে খামান পরিবেশন করলেন। আমি প্রথম কামড় দিয়ে এতটাই আপ্লুত যে, দোকানের চেয়েও এটি বেশি ভালো হয়েছে বলেই মনে হল। পরের বার থেকে আমি মিসেস পারমারের হাতের তৈরি খামানই খাব, পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম তাঁকে।
গণেশ মার্কা সরিষার তেল তাঁর পরিবারের প্রিয়
খামান রান্নার সময় ব্যবহৃত গণেশ মার্কা সরিষার তেল সম্পর্কে বার বার মিসেস পারমারকে জিজ্ঞাসা করায়, তিনি জানালেন যে, যে তিনি কয়েক বছর ধরে এই সরিষার তেলই ব্যবহার করছেন। মিসেস পারমারের মতে, “এটি স্বাস্থ্যকর এবং আমার হাতের তৈরি সমস্ত খাবারে একটি দুর্দান্ত স্বাদ দেয়।” তিনি আরও বলেন, “আমার পরিবার স্বাদ পছন্দ করে এবং আমি এটি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করি।”
উপসংহার:
মিসেস পারমারের বাড়িতে গিয়ে শুধুমাত্র একটি রান্নাই শিখলাম না, তাঁর জীবনের আবেগঘন মুহূর্তও ভাগ করে নিলাম আমরা। তাঁর কাছে এই রান্নাটি শুধুমাত্র তাঁর পরিবারের মানুষকে আনন্দ দেওয়াই নয়, এই রান্নাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর প্রয়াত স্বামীর স্মৃতিও। এই স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই তিনি আমাদের সঙ্গেও শেয়ার করে নিলেন এই রেসিপিটি।
এইরকম আরও রেসিপি পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজের সাথে যুক্ত থাকুন।
We’re now on WhatsApp. Click to join
Like this post?
Register at One World News to never miss out on videos, celeb interviews, and best reads.