N. Biren Singh: মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন না এন বীরেন সিংহ! সমর্থকরা আটকালেন তাঁকে, ছিঁড়ে দেওয়া হল মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফাপত্র, ইম্ফলে চরম নাটকীয় পরিস্থিতি

N. Biren Singh: শুক্রবার মনিপুরের রাজভবনের উদেশ্যে ইস্তফা দিতে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পথ আটকালেন তাঁর সমর্থকরা

হাইলাইটস:

• শুক্রবার রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে যাচ্ছিলেন মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ

• ইম্ফলে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বীরেন সিংহের সমর্থকরা জমায়েত করে তাঁকে ইস্তফা দিতে আটকালেন

• শেষে বীরেন সিংহ টুইট করে জানান তিনি মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন না

N. Biren Singh: শুক্রবার দুপুরে রাজভবনে গিয়ে মনিপুরের রাজ্যপালের সাথে দেখা করার কথা ছিল মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের। এর এই সাক্ষাৎকে কেন্দ্র করেই জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, শুক্রবারই পদ থেকে ইস্তফা দেবেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী। জল্পনাকে সত্যি করতে রাজভবনের উদ্দেশ্যে রওনাও দিয়েছিলেন তিনি ইস্তফা দেওয়ার জন্য। তার পরেই তৈরী হয় এক নাটকীয় পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বীরেন সিংহের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে তাঁকে রাজভবন যাওয়া থেকে বিরত করেন। সমর্থকদের চাপে মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা তো দিতে পারলেনই না, উল্টে রাজ্যপালের কাছে যে ইস্তফাপত্রটি তিনি পেশ করতে যাচ্ছিলেন, সেটিও ছিঁড়ে ফেলে দেয় তাঁর সমর্থকরা। শেষমেশ টুইট করে মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন না। টুইটারে এন বীরেন সিং লেখেন, ‘এই কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে আমি ইস্তফা দিচ্ছি না৷’

মণিপুর প্রশাসন সূত্রের খবর, মণিপুরের বিজেপি শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ গতকাল দুপুর ২টো ২০ মিনিটে ২০ জন দলীয় বিধায়ককে নিয়ে রাজভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইম্ফলে নিজের বাসভবন থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেন, সমর্থকেরা তাঁর বাড়ি ঘিরে রেখেছে তাঁকে আটকানোর জন্য। সমর্থকদের দাবি, ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীকে। মহিলা সমর্থকরাও মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ না করার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন৷ কালো পোশাক পরা পুরুষ এবং মহিলারা মুখ্যমন্ত্রীর রাজভবনে যাওয়া আটকাতে তাঁর বাসভবনের গেটের সামনে বসে পড়েন৷ মণিপুরকে বিভক্ত করা যাবে না, সরকারের পতন মেনে নেওয়া হবে না, মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন চলবে না – এরকম সব স্লোগানও দিতে থাকেন বীরেন সিংহের সমর্থকরা৷ এই দৃশ্য দেখার পর নিজের বাসভবনে ফিরে যান বীরেন সিংহ। তারপরই মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়, মণিপুরের পূর্তমন্ত্রীকে। সমবেত জনতার সামনে তিনি ইস্তফাপত্রটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করেন। জানা যাচ্ছে, ইস্তফা পত্রটি পাঠ করার সময়ই কিছু মহিলা সমর্থক পূর্তমন্ত্রীর হাত থেকে ইস্তফাপত্রটি ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেন। অশোক স্তম্ভের সিলমোহর দেওয়া সেই ছেঁড়া ইস্তফাপত্রের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

গত মাস দুয়েক ধরেই কুকি এবং মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের কারণে উত্তপ্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্য। গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, স্বাভাবিক জীবনযাপনও ব্যাহত হয়েছে৷ অশান্তি এতটাই চরমে পৌঁছে গেছে যে, নামাতে হয়েছে সেনাও৷ এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই আঙুল উঠতে শুরু হয়েছিল। অবশ্য এক্ষেত্রে বীরেন সিংহের সঙ্কট উভয়মুখী। জাতিগত পরিচয়ে বীরেন সিংহ নিজে মেইতেই। কুকি-সহ জনজাতি গোষ্ঠীগুলি অভিযোগ জানাচ্ছে, গোষ্ঠীহিংসার সময়ে বীরেনের সরকারের আচরণ পুরোপুরি পক্ষপাত দুষ্ট ছিল। মণিপুর সরকার জনজাতি অধ্যুষিত পাহাড় অঞ্চলগুলিতে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অবহেলা করেছে বলে অভিযোগ তুলে ওই অঞ্চলে ‘পৃথক প্রশাসনের’ দাবি তুলেছে কুকি-সহ অন্যান্য জনজাতি গোষ্ঠীগুলি। অপরদিকে, রাজধানী ইম্ফল সহ সমতল এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের অভিযোগ, মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালানো কুকি জঙ্গিদের মোকাবিলায় সময় মতো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। অবশ্য বীরেন সিংহের সাফল্য বিজেপির ইতিহাসে ‘ব্যতিক্রমী’। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করার মাত্র ৫ মাসের মধ্যে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন এন বীরেন সিংহ।

গত রবিবার মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহকে এই বিষয়ে আলোচনার জন্য দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শাহ-এর সাথে বৈঠক শেষে একটি টুইট করে বীরেন সিংহ জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এব‌ং রাজ্য সরকার রাজ্যের পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম। বিরোধী দলগুলি বারংবার অভিযোগ তোলে- বীরেনের নেতৃত্বাধীন সরকার মণিপুরের জনগণের আস্থা হারিয়েছে। এই রূপ পরিস্থিতিতে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করারও দাবি তোলে বিরোধীরা। যদিও গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সর্বদল বৈঠক করে মণিপুরে জরুরি অবস্থা জারির হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি খারিজ করেন। তার বদলে রাজ্যের বিজেপি সরকারের উপরেই আস্থা রাখতে বলেন তিনি। রবিবারের ওই বৈঠক প্রসঙ্গে বীরেন সিংহ সমাজমাধ্যমে লেখেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন আমাদের, রাজ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আমরা যেন আমাদের কাজকে আরও শক্তিশালী করি।”

প্রসঙ্গত, দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে মণিপুরে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকা হিংসায় নিহতের স‌ংখ্যা ১৫০ ছুঁতে চলছে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সর্বদল বৈঠক করার পরেও একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। গত ৩রা মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন এটিএসইউএম -এর বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুরের শীর্ষ আদালত রাজ্য সরকারকে মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই মণিপুরে সংঘাতের সূচনা হয়।

এইরকম আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.