হাইলাইটস:
•গরমকালে ছাতুর শরবত একটি এনার্জি ড্রিংক হিসাবে কাজ করে
•ছাতুর পুষ্টিগুন প্রচুর
•ছাতুর উপকারিতাগুলি দেখে নিন
Sattu for summer: শহর কলকাতায় এখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী ছুঁইছুঁই। প্রবল গরম থেকে বাঁচতে মানুষ কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। এই গরমে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এড়াতে চাইলে প্রতিদিন ছাতু (Sattu) খেতে পারেন। ছাতু মূলত পুষ্টিগুনে ভরপুর, তার সাথে জলেরও ঘাটতি মেটাতে পারে এটি পানীয় আকারে পান খেলে। গরমকালে এটি শরীরকে ভিতর থেকে ঠান্ডা রেখে শরীরের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক রাখে (Sattu for summer)। ছাতু গরমকালে খাওয়ার মতো একটি সুপার কুল এবং এনার্জি সমৃদ্ধ খাবার।
ছাতু কী এবং কীভাবে তৈরি হয়?
মূলত কালো ছোলা থেকে ছাতু তৈরি করা হয়, যাকে বলা হয় ছোলার ছাতু। আরেক প্রকার ছাতু ভাজা ছোলা এবং বার্লি মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এইগুলি পিষে ছাতুর গুঁড়ো তৈরি করা হয়। যা আমরা জলে গুলে শরবতের আকারে খেতে পারি। আবার ছাতুর তৈরি লিট্টিও খেতে পছন্দ করেন অনেকে। গরমকালে মানুষ নানাভাবে ছাতু ব্যবহার করে (Sattu for summer)। ছাতুর উৎপত্তি অবাঙালিদের হাত ধরেই। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে এটির প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ছাতুতে প্রায় ৬০-৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে।
ছাতুর সরবত বানাবেন কীভাবে?
•প্রথমে এক গ্লাস ঠান্ডা জল নিন।
•তাতে দুই চামচ ছাতু মেশান।
•আধ চামচ চিনি মেশান অথবা লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। স্বাদের জন্য পাতিলেবুর রসও মেশাতে পারেন। আপনার ছাতুর শরবত প্রস্তুত।
ছাতুর পুষ্টিগুণ:
ছাতু পুষ্টিগুনে ভরপুর। ফাইবার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, কম সোডিয়াম, ভিটামিন এবং উপকারি ফ্যাট রয়েছে ছাতুর মধ্যে। এটি গরমকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। আবার এই শরবতটি পান করলে শরীরে শক্তিরও সঞ্চার হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ছাতু খাওয়া স্বাস্থ্যকর এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য এটি অন্যতম সেরা খাবার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। একাধিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, এটি শরীরের নানাবিধ উপকার করার পাশাপাশি অনেকক্ষণ আমাদের পেট ভরে রাখে, ফলে বারবার খেতে হয় না। ফলশ্রুতিতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। অর্থাৎ ছাতু ওজন কমাতেও সাহায্য করে। ছাতু খাওয়ার এত উপকারিতা থাকার ফলে ছাতুকে ‘দেশি হরলিক্স’ নামেও ডাকা হয়।
ছাতু খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি হল:
হজম শক্তিকে শক্তিশালী করে:
ছাতুর মধ্যে অদ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে, যা পাকস্থলী ও অন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি কোলন থেকে চর্বিযুক্ত এবং তৈলাক্ত খাবার সহজে অপসারণ করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে এবং হজমশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। এতে বিভিন্ন প্রকারের ভিটামিন এবং খনিজ থাকে যা দেহের সাথে সাথে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও কাজ করে।
গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে:
গরমকালে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। ছাতু কিন্তু হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। এবং তার সাথে শরীরকে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা থেকেও রক্ষা করে। ফলে ছাতু প্রচুর পরিমাণে জল শোষণ করে ধরে রাখতে পারে। তাই অনেকেই সকালে খালি পেটে ছাতুর সরবত খান ও খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সুন্দর ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী:
ছাতু প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই দুটি ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একদিকে যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, তেমনই অন্যদিকে প্রোটিন শরীরের অন্দরে যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করে। ফলে আপনার ত্বক এবং চুল সুস্থ থাকে।
শরীরের শক্তি বাড়ায়:
গরমকালে অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য আমাদের অত্যধিক ঘাম হয়, ফলে দেহে শক্তির অভাব দেখা দেয়। আর ঠিক তখনই শরীরে চলে আসে ক্লান্তিভাব। ছাতু আপনাকে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেবে। তাই গরমকালে প্রতিদিন এক গ্লাস করে ছাতুর শরবত খেতে ভুলবেন না।
শিশুদের বিকাশে ছাতু উপকারী খাদ্য:
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে যে সকল খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন পড়ে তা সবই উপস্থিত রয়েছে ছাতুতে। তাই বাজার চলতি নানারকম হেলথ ড্রিঙ্কের পরিবর্তে শিশুদের নিয়মিতভাবে ছাতু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। প্রসঙ্গত, ছাতুতে খনিজগুলি শিশুদের হাড় এবং দাঁতের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এবং রক্তাল্পতার মতো সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:
ছাতু হল ‘লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ ফুড। ছাতুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে শর্করা খুব ধীরে ধীরে রক্তে মিশে। ফলে এটি সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করা বেড়ে যাওয়ার কোনো সমস্যা হয় না। অন্যদিকে এতে উপস্থিত ফাইবারের গুণে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই সঙ্গে রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকে এবং শরীরে কমে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা। তবে ডায়াবেটিস আক্রান্তকারী রোগীদের জন্য এটি খাওয়ার সময় মিষ্টি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
বয়স্কদের জন্য উপকারী:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিতে শুরু করে। এক্ষেত্রে ছাতু বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত, নিয়মিত ছাতু খেলে একাধিক বার্ধক্যকালীন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না। ফলে শেষ বয়সে এসে প্রতিদিন ছাতু খাওয়ার চেষ্টা করুন।
এইরকম স্বাস্থ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কিত প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।