The Kerala Story Banned: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হল ‘দ্য কেরালা স্টোরি’

The Kerala Story Banned: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় নিষিদ্ধ হল সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি

হাইলাইটস:

বাংলায় নিষিদ্ধ হল ‘দ্য কেরালা স্টোরি’

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে নষ্ট না হয় সে কারণেই বাংলায় নিষিদ্ধ হল এই বিতর্কিত ছবিটি

এমনই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

The Kerala Story Banned: গত ৫ই মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের নতুন ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। ছবির ট্রেলার মুক্তির পরই এই ছবি নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। আর ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর শুরু হয় আরও বেশি বিতর্ক। এই ছবিকে নিয়ে এখন দারুণ চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর পর ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে বিনোদনের পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল পড়ে গিয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক দল এই ছবির বিরোধিতা করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শো বাতিল হয়েছে। এবার দেশের প্রথম রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হল ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটির প্রদর্শন (The Kerala Story Banned)।

গতকাল নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একাধিক বিষয়ে মুখ খোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই বিতর্কিত ছবিটি সম্বন্ধে বলেছেন, এই ছবিটি প্রদর্শিত হলে, ঘৃণা এবং হিংসা ছড়িয়ে পড়তে পারে। রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজার রাখতেই ছবিটির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হল বাংলায়। তাঁর মতে এই ছবির কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। এমনকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে, এমন কোনও বিষয়কে সুপ্রিম কোর্ট প্রশয় না দিতে বলেছে বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় এই ছবি প্রদর্শন হচ্ছে কিনা তা খোঁজ নেওয়ার জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ সামনে আসার পর থেকেই এই নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে।

গতকাল অর্থাৎ সোমবার বিকালে রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে জানানো হয়, “রাজ্যে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। এই সিনেমায় যেসব দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে আশঙ্কা করে কলকাতাসহ সব জেলাতে এই ছবির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হল। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেই রাজ্য প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত।” বাম তথা সিপিএম শাসিত কেরলের একাধিক ঘটনা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে এই ছবির গল্প। তবে মমতার সিদ্ধান্তে বিন্দুমাত্র সায় নেয় বঙ্গ সিপিএমের। বরং তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকে তীব্র বিরোধিতা করেছেন। অন্যদিকে কেরল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ছবির কড়া ভাষায় সমালোচনা করলেও সে রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়নি বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ছবিকে।

এদিকে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে এই নিয়ে সিপিএমকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে বিজেপি, সেই কারণে কেরলে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তিনি কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, “কেরলের মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। সিপিএম শাসিত রাজ্য নিয়ে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। সেই সিপিএমই বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে। এটা আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি। আপনার দল বিজেপির সঙ্গে কীভাবে হাত মেলায়? বিজেপির টাকাতেই কেরালা স্টোরির মতো বিকৃত সিনেমা দেখানো হচ্ছে।” তবে এই বিষয়ে সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচাৰ্য বলেন, ‘আরএসএসের নির্দেশে মমতা এই কাজ করেছেন। এর ফলে ছবিটার প্রচার বাড়বে, এবং তা আরও বেশি ব্যবসা করবে। ছবি ব্যান করার পক্ষপাতী আমরা নই।’

অন্যদিকে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-কে হাতিয়ার করে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্ক টানার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে সরব হয়েছেন তাঁরা। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত ভট্টাচাৰ্য এবং দিলীপ ঘোষ কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারকে আক্রমণ করেছেন। বিজেপি নেতা তথা টলিউড অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষও এই নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেন। আবার বাংলায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ করায় মমতা সরকারের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও। তিনি জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য এই ছবিকে ব্যান করে অন্যায় করেছে। কেন সত্যিটা দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে দিতে চাইছে না মমতাদি? সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়ে আপনি কী পাচ্ছেন? অপ্রত্যক্ষভাবে হলেও এটা সেইসব মানুষকে সমর্থন করা যারা আইএসআইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের চিন্তা-ভাবনাকে সাপোর্ট করে।’ তাঁর সাফ দাবি, ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচানোর জন্যই তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যের মতে, এই সিদ্ধান্ত ‘দুর্ভাগ্যজনক’।

গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র প্রযোজক তথা সৃজনশীল পরিচালক বিপুল শাহ জানান, “এরকম কিছু হলে আমরা আইনি পথে হাঁটব। আইনের যত রাস্তা আছে সব পথে গিয়ে আমরা আমাদের লড়াই চালাব।” অর্থাৎ তিনি সরাসরি আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন।

এই বিতর্কিত ছবিকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। এই ছবিতে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষকে আক্রমণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে আদালতে যাওয়া হয়েছিল। তবে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছবির মুক্তি আটকাতে অস্বীকার করে দেশের শীর্ষ আদালত-সহ মাদ্রাস ও কেরল হাইকোর্ট। কেরল হাইকোর্ট স্পষ্ট জানায়, এই ছবি মোটেই ‘ইসলামোফোবিক নয়’। তবে দেশের প্রথম রাজ্য হিসাবে বাংলায় নিষিদ্ধ হল এই বিতর্কিত ছবিটি। বাংলার পাশাপাশি ছবিটি প্রদর্শনে বাধা পড়েছে দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতেও। সেই রাজ্যের সরকারের পক্ষ থেকে ছবিটির প্রদর্শন নিয়ে কোনও আপত্তি না জানানো হলেও, সেখানকার হল-মালিকরা ছবিটির প্রদর্শনের সময় হলে ভাঙচুর হতে পারে আশঙ্কায় ছবিটি প্রদর্শন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে আবার বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে এই ছবিটি তাদের রাজ্যে একেবারেই কর মুক্ত।

কি এমন আছে ছবিতে, যা নিয়ে এত বিতর্ক তৈরি হয়েছে?

এই ছবিটি আসলে হিন্দু তরুণীদের ফাঁদে ফেলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা এবং তাদের আইএসআইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত করানোর প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আদা শর্মা। তাঁরই শালিনী থেকে ফাতিমা হয়ে ওঠার গল্প এই ছবিতে বর্ণিত হয়েছে। কেরলের প্রায় ৩২ হাজার হিন্দু মেয়েকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো এবং তাদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত করানো গল্পটি নিয়ে তৈরি ছবিটি সারা দেশে এখন শোরগোল ফেলে দিয়েছে। ছবিতে বিশেষ করে দেখানো হয়েছে যে, ঠিক কোন কৌশলে হাজার হাজার মহিলাকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করিয়ে আইএসআইএস জঙ্গি সংগঠনের নিয়োগ করা হয় সুপরিকল্পিতভাবে। তবে এই ছবি নিয়ে বিতর্ক হলেও মুক্তি পাওয়ার তিন দিনেই ছবিটি ৩৫ কোটির ব্যবসা করে ফেলেছে।

এইরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.