দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে একাধিক ট্রেন বাতিলের খবর
হাইলাইটস:
•ফের রেল অবরোধ কুড়মি সম্প্রদায়ের
•রেলের পাশাপাশি সড়কপথও অবরোধ করে রেখেছে তারা
•তাদের ন্যায্য অধিকার না পাওয়া অবধি এই আন্দোলন চলবে না হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা
Kurmi Protest: অতীতেও আমরা দেখেছি নিজেদের ন্যায্য দাবিতে বারবারই পথে নেমেছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের কুড়মি সমাজের সদস্যরা৷ তাদের বক্তব্য, ব্রিটিশ আমল থেকেই তারা আদিবাসী জনজাতিভুক্ত।ফলে সেই তালিকায় তাদেরও স্থান দিতে হবে। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া এই চার জেলার মূলত জঙ্গলমহল এলাকায় কুড়মি সম্প্রদায়ের বসবাস। এ রাজ্যে কুড়মি সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা হল প্রায় ৬৬ লক্ষ। ফলে রাজ্যের নির্বাচনেও বিশাল বড়ো ফ্যাক্টর হল কুড়মি সম্প্রদায়।
সামনেই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জঙ্গলমহলে ভালো ফল করে। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের হারানো জমি কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু বিজেপি অন্য চাল দেয়, আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রপতি করেছেন দ্রৌপদী মুর্মুকে। যার প্রচার এই রাজ্যেও কিছু কম হয়নি।পঞ্চায়েত হোক বা রাজ্যের বিধানসভা অথবা দেশের লোকসভা নির্বাচন আদিবাসী সম্প্রদায় সবসময়ই একটি বড়ো ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে। এইদিকে গত ১লা এপ্রিল থেকে সমগ্র জঙ্গলমহল এলাকায় শুরু হয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ডাকা ‘ঘাঘর ঘেরা’ নামের অবরোধ কর্মসূচি (Kurmi Protest)। তার সাথে ডাক দেওয়া হয়েছে রেল অবরোধেরও। ফলে এতেই কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছে দক্ষিণ-পূর্ব শাখার রেল চলাচল।
এবার এসটি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে লাগাতার রেল অবরোধের ডাক দিলেন কুড়মি সম্প্রদায়ের সদস্যরা। এর ফলে এ দিন সকাল থেকেই সমগ্র জঙ্গলমহল অর্থাৎ পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলায় ট্রেন চলাচল কার্যত ব্যাহত। সবচেয়ে বড়ো প্রভাব পড়েছে বাঁকুড়া জেলায়। বাতিল করতে হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব শাখার একাধিক ট্রেন৷ এমনকি খড়্গপুর ডিভিশনের খড়্গপুর-আদ্রা লাইনেও বেশ কিছু ট্রেন বাতিল হয়েছে। আবার পুরুলিয়া-হাওড়া পুরুলিয়া এক্সপ্রেস পুরুলিয়ার বদলে আদ্রা থেকে ছেড়ে পুনরায় হাওড়ার উদ্যেশ্যে রওনা দেয়। এর ফলে ভোগান্তির স্বীকার হয়েছেন যাত্রীরা।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, খেমাশুলি এবং কুস্তাউরে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজনের রেল অবরোধের ঘোষণার প্রেক্ষিতে খড়্গপুর শাখায় মোট ৪৮টি ট্রেন আজ বাতিল করা হল। আজ ভোর ৫টা থেকে অবরোধের ঘোষণা করেছেন কুড়মিরা। তার জেরে ট্রেন বাতিল ছাড়াও দূরপাল্লার ৮টি ট্রেনের যাত্রাপথে কাটছাঁট করা হয়েছে। কারণ এই পথে স্টিল এক্সপ্রেস, ইস্পাত এক্সপ্রেস, গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস, নীলাচল এক্সপ্রেস, রাজধানী এক্সপ্রেস, জন শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন রয়েছে। আবার অন্যদিকে হাওড়া-আদ্র-চক্রধরপুর এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি-পুরুলিয়া এবং পুরুলিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেস আদ্রা পর্যন্ত যাবে। কাঁটাবাঁজি-টিটাগড়-হাওড়া এক্সপ্রেসের যাত্রা টাটানগর পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
রেল অবরোধের জেরে বাঁকুড়া স্টেশনে সকাল যাত্রী দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। কারণ বাঁকুড়ার অন্যতম যাতাযাতের মাধ্যম হল রেলপথ। নিত্যযাত্রীরা সময় মতো ট্রেন না পেয়ে বাড়ির দিকে রহনা দিচ্ছেন। শুধু বাঁকুড়া নয় পুরুলিয়া জেলাতেও একই ছবি দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর মাসেও আদিবাসী সমাজের রেল-সড়ক অবরোধের ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ৷ এবারে এই মারাত্মক গরমে আবারও ভোগান্তির শিকার হলেন সেই সাধারণ মানুষই।
অন্যদিকে এসটি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে সিআরআই রিপোর্ট পাঠানো হয়নি, এই অভিযোগ তুলেই গতকাল থেকে খেমাশুলিতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল আদিবাসী সম্প্রদায়ের কুড়মি সমাজের সদস্যরা (Kurmi Protest)৷ আজ সকাল থেকে জাতীয় সড়কের পাশাপাশি শুরু হয় রেল অবরোধও৷ ফলে গতকাল থেকে হেনস্থার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, আগামীকাল সকাল ৬টার মধ্যে যদি তাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে জঙ্গলমহলের প্রতিটি রাস্তাতেই অবরোধ করা হবে৷ এবার দেখার বিষয় এই আন্দোলনটি কোনদিকে মোড় নেয়।
এইরকম গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে চোখ রাখুন ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার ওয়েবসাইটে।