হাইলাইটস:
•আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অমর্ত্য সেনকে প্রতীচী ছাড়ার নোটিশ পাঠাল বিশ্বভারতী
•অন্যথা বলপ্রয়োগেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ
•তাদের এই হুঁশিয়ারিকে কার্যত নিন্দার চোখে দেখছেন রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহল
Amartya Sen: গত কয়েকমাস ধরে বিশ্বভারতী এবং অমর্ত্য সেনের পৈতৃক বাড়ি প্রতীচীর সংঘাত লেগেই রয়েছে। এবার সংঘাত যেন চরমে উঠল। কারণ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতীচী ছাড়ার জন্য উচ্ছেদ নোটিশ পাঠাল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে (Amartya Sen)। বিশ্বভারতীর তরফে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল অধিগ্রহণ করে আছেন। এবার আগামী ৬ই মে-র মধ্যে সেই ১৩ ডেসিমেল জমি খালি করার নির্দেশ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
উচ্ছেদ নোটিশ আগেই পাঠানো হয়েছিল বিশ্বভারতীর তরফে। তখন অমর্ত্য সেন সেই নোটিশের আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখেছিলেন অমর্ত্য সেন। এবং দাবি করেছিলেন, এই জমি তাঁর বাবার। ১.৩৮ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন করা হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে। অবশ্য মিউটেশন করার কথা জানানো হলেও বিশ্বভারতী তখনও তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তেই অনড় ছিল। এবার তারই জবাবে অমর্ত্য সেনের আইনজীবীকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে ইমেলে বলা হয়, ১৯৭১ সালের দখলদার উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী অর্থনীতিবিদকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতীকে দেওয়া চিঠিতে অমর্ত্য সেন সাফ জানান, ১৯৪৩ সাল থেকে প্রতীচী তাঁর পরিবারের বসতবাটী। তাঁর আশুতোষ সেন এবং মা অমৃতা সেন এর মৃত্যুর পরও দীর্ঘ ৮০ বছর জমির ব্যবহার একই রয়ে গেছে। পারিবারিক ভিটে জমি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরই প্রাপ্য। জমি ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কেউ এই জমির অধিকার দাবি করতে পারে না। এমনকি প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট। ফলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘কোনও হস্তক্ষেপ বা শান্তি ভঙ্গের অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। এরপরও যদি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মানতে রাজি না হন, তাহলে আমি জুন মাসে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসব। তখনই আলোচনা করা যেতে পারে।’
কিন্তু বিশ্বভারতী তাদের সিদ্ধান্তে অনড়, তারাও এর পাল্টা দাবি করে, দখলদার উচ্ছেদ আইন ১৯৭১ সালের ১০ ধারায় বলা আছে, যিনি ইজারাদাতা তিনি জমির মালিক। তিনি জমির স্থানান্তর, উত্তরাধিকারী উইল করতে পারবেন না। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র বিশ্বভারতীর আজীবন সদস্যদের। অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর আজীবন সদস্য নন। সদস্য হলে ইজারাদাতা হিসেবে স্বীকৃত হতেন। বিশ্বভারতী শতাব্দী প্রাচীন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠান। ফলে দখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধারে কার্যত মরিয়া বিশ্বভারতী।
উল্লেখ্য, গত ১৩ই এপ্রিল ‘প্রতীচী’ জমি বিতর্কে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি শুনানির কথা ছিল অমর্ত্য সেনের। তবে বিদেশে থাকার কারণে ওই শুনানিতে তিনি বা তাঁর প্রতিনিধি কেউই অংশ নেন নি। এর ফলস্বরূপ, বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতোর স্বাক্ষরিত ১৫ দিনের মধ্যে জমি খালি নোটিশ দেওয়া হল। এই নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি প্রতীচী খালি না করা হয়, তাহলে প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হবে। অবশ্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে নোটিশে জানানো হয়েছে যে, প্রতীচীর জমির লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
এই ইস্যুতে অমর্ত্য সেন বলেছেন, চলতি বছরের জুন মাসে তিনি শান্তিনিকেতনে ফিরবেন। তখনই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি। অমর্ত্য সেনের কথায়, “প্রতীচী-র আইনশৃঙ্খলা ও শান্তিরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। “সেটা মেনে চলা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে এই মুহূর্তে তিনি বিদেশে থাকলেও জমি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার এই নোটিশকে ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। নোটিশে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দেওয়া নিয়ে বিশ্বভারতীর নিন্দায় সরব হয়েছে রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহলও। অবশ্য এই বিষয়ে অমর্ত্য সেন বা তাঁর পরিবারের তরফে থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া সে ভাবে মেলেনি।
এইরকম গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।