পোস্ত চাষ বাংলাতেও হতে পারে, বিধানসভায় এমনই প্রস্তাব রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পোস্ত চাষের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর

হাইলাইটস: 

•বাংলায় পোস্ত চাষের অনুমতি চান মুখ্যমন্ত্রী

•বিধানসভায় খাদ্য বাজেটে এই বিষয়ে সুর চড়ান তিনি

•ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে চিঠিও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রকে

পোস্ত বাঙালির কাছে সব সময়ই প্রিয় একটি খাবার। আর তাই রাজ্যে পোস্ত চাষ করতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বিধানসভায় এমনই প্রস্তাব রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ১৫০ কেজি পোস্ত উৎপাদন হয়। খোলা বাজারে বর্তমানে এক কেজি পোস্ত বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। বৈধ ভাবে উৎপাদিত এক কেজি পোস্তর দাম ওঠে ১,৫০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকার মধ্যে। ফলে বাঙালির পাত থেকে কার্যত উধাও প্রিয় এই পদটি। এই অবস্থায় সস্তায় পোস্ত খাওয়াতে উদ্যোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই রাজ্যে পোস্ত চাষের অনুমতি নেই। বাজারে যে সব পোস্ত পাওয়া যায়, তার অধিকাংশটাই আসে অন্য দেশ বা অন্য রাজ্য থেকে। সেই কারণে পোস্তর দাম সব সময়ই চড়া থাকে। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, এ রাজ্যেই পোস্ত চাষ হলে, সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই তা মিলবে। বাঙালি সব সময়ই পোস্তের বড়া, আলু পোস্তের মতো পদগুলি ভোজের পাতে পেতে চায়। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না অনেকের। সেই প্রসঙ্গ টেনেই রাজ্যে পোস্ত চাষের অনুমতি দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। এই বিষয়ে তাঁর পাশে চেয়েছেন রাজ্যের বিজেপি বিধায়করদেরও।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘সব পোস্ত ড্রাগ নয়’। কেন্দ্র যাতে বাংলায় পোস্ত চাষের অনুমতি দেয়, সেই নিয়ে সরব হন তিনি। এবার বিধানসভাতেও সেই পোস্ত চাষের অনুমতি পাওয়ার দাবিতে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই ইস্যুকেই হাতিয়ার করে এদিন বিরোধী শিবির বিজেপিকেও খোঁচা দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের তিনটি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের মোট ২২টি জেলার কয়েকশো কৃষককে শর্ত স্বাপেক্ষে পোস্ত চাষের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্র। এই দৃষ্টান্তকে সামনে রেখেই রাজ্যে পোস্ত চাষের দাবিতে আবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে, পোস্ত গাছ থেকে মেলে একধরনের আঠা। ওই আঠা থেকে মূলত আফিম, ব্রাউন সুগার, হেরোইনের মতো নেশার জিনিস তৈরি হয়। বাজারে ওই আঠার প্ৰতি কেজির দাম প্রায় এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা। এক বিঘা জমির পোস্ত থেকে দুই বা তিন কেজি আঠা মেলে ফলে পোস্ত বাবদ এই লাভ অনুমেয়। তাই নেশার দ্রব্য উৎপাদন রুখতে পোস্ত চাষে এত কড়া নিষেধাজ্ঞা।

রাজ্য কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩রা মার্চ এই মর্মে কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিবকে আবার চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। চিঠিতে মুখ্যসচিব লিখেছেন, ‘রাজ্যের মানুষের চাহিদা মেটাতে রাজ্য সরকার তার কৃষি খামারে নিয়ন্ত্রিত ভাবে পোস্ত চাষ করতে চায়। যেহেতু, ভোজ্য পোস্তর সঙ্গে মাদকাসক্তির উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত আফিমের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই এই চাষে কোনও আপত্তি থাকা উচিত নয়।’

অতীতেও পোস্ত চাষের অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা হয়েছিল রাজ্যের। ২০২০ সালে ভুবনেশ্বরে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির (ইস্টার্ন জ়োনাল কাউন্সিল) বৈঠকের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে এই বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই কেন্দ্র অনুমতি দিলে প্রশাসনিক সুরক্ষাকবচে রাজ্যে পোস্ত চাষের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলে শাহকে বলেছিলেন মমতা। তবে তার পরও এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।

কৃষিকাজে উন্নতিতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে রাজ্যে অনেক কিছু চাষে জোর দেওয়া হয়েছে। সে সবের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভায় জানান, “ড্রাগন ফলের চাষ আজ ভালো হচ্ছে। এখন কপি থেকে অনেক কিছু হচ্ছে। হাঁসের ডিমের উৎপাদন আমরা বাড়াচ্ছি, ৪০-৫০ শতাংশ করে ফেলেছি। আরো বাড়াব। আজ এবার পোস্ত চাষ হলে তার চাহিদা পূরণ হবে।”

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পেঁয়াজের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বাংলাকে একটা সময়ে মহারাষ্ট্রের নাসিকের উপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু এরপর পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূমে পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে। এমনকি সেখানে চাষ যথেষ্ট ভালো হচ্ছে বলেও এদিন দাবি করেন প্রশাসনিক প্রধান। একই সঙ্গে আগামীদিনে যে ইলিশের জন্যে বাংলাদেশের উপর নির্ভর করতে হবে না সে বিষয়েও বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, ‘ডায়মন্ডহারবারে ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এর সুফল খুব তাড়াতাড়ি যাবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।

এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.