পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির পরিবর্তে বিজেপির পাল্টা কর্মসূচি ‘গ্রামে চলো’

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুর্নীতিকেই সামনে রাখতে চাইছে বিজেপি

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি নিয়ে এসেছে। এতে যথেষ্ট চাপে পড়ে গিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতাদের একাংশ। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুর্নীতিকেই সামনে রাখতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে চাইছে তারা। এই পরিস্থিতিতে যেটুকু ভোটব্যাঙ্ক আছে সেটি অটুট রাখতে পাল্টা ‘গ্রামে চলো’ ডাক দিল রাজ‌্য বিজেপি। এটা তাদের একটা শেষ চেষ্টা বলে অনেকে মনে করছেন।

২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি নিয়ে এসেছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসক দল তাদের উন্নয়নের ডালি নিয়ে আসবে জনসাধারণের কাছে। ফলে বিজেপি শিবিরেরও লক্ষ্য ‘গ্রামে চলো’ কর্মসূচি। গোটা জানুয়ারি মাস জুড়ে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ মোট ১৮০ জন নেতাকে গ্রামে যেতে হবে বলে ঠিক করল বিজেপির কোর কমিটি।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন অনেক বড়ো নির্বাচন। তাই এই নির্বাচনের আগে একদম নিচু তলার সংগঠনকে চাঙ্গা করতে পঞ্চায়েত সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। গত ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পরে সেই সময়সীমা ৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, জোর কদমে কাজ চললেও সেই কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় নি। তাই বাধ্য হয়েই সেই সময় আবার ২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই পঞ্চায়েত সম্মেলনে একদম নিচু তলার সংগঠনে চাঙ্গা করতে রাজ্য বিজেপি মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজ্যে তারাই এখন বিরোধী দল, ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের সবটুকু দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে তারা বদ্ধপরিকর।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজারহাটে রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে, সহ-পর্যবেক্ষক আশা লকরা, অমিত মালবীয়দের উপস্থিতিতে ঠিক হয়েছে, পঞ্চায়েতের আগে বুথস্তর থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত কর্মী সম্মেলন করা হবে। সেই কাজে গতি আনতেই ১৮০ জন নেতা গ্রামে গ্রামে যাবেন। গ্রামে গিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি থেকে রাজ্য সরকার কীভাবে বঞ্চিত রেখেছে তাদের সেই বিষয়ে বোঝাবেন।

কোর কমিটির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এই ধরনের বৈঠকে দিল্লির নেতারা কিছু পরামর্শ দেন, রাজ্যের নেতারা কিছু প্রস্তাব দেন। সব মিলিয়ে একটা পথ নির্দেশিকা তৈরি হয়। পঞ্চায়েত সম্মেলন শেষ করাই প্রধান লক্ষ্য। নেতাদের গ্রামে যেতে বলা হয়েছে।’’

চলতি বছরে দলীয় কর্মসূচিতে রাজ্যে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে জেপি নাড্ডার। জেলায় জেলায় এখন বিজেপির সংগঠন ভেঙে চুরমার হযে গিয়েছে। তাই রাজ্য বিজেপির সাধারণ সংগঠনের তরফে হাল-হকিকত জানতে দলের জেলা সভাপতিদের একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মণ্ডল থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত পদাধিকারীদের নাম, ফোন নম্বর, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে কি না, শাখা সংগঠনের কমিটি তৈরি হয়েছে কি না, সেই সব তথ্য চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই তথ্যের উপরে নির্ভর করেই জেলার সাংগঠনিক সক্ষমতা বিচার করা হবে। যদি কোনও তথ্য না আসে, তবে ধরে নিতে হবে সেই জেলা দুর্বল। বুথস্তরের সংগঠনের বেহাল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বঙ্গ বিজেপির এই উদ্যোগ।

সেই সঙ্গে তারা ফের ফিরছে ‘মিস্‌ড কল’ দিয়ে সদস্য সংগ্রহ পরিকল্পনায়। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখোপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ দলীয় সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। এই নিয়ে আমি সংবাদমাধ্যমে কিছু বলব না।’’ গত সোমবার ভগবানপুরের অঞ্চল সম্মেলন থেকে দলের এই কর্মসূচির কথা জানান শুভেন্দু অধিকারী। তারপর বিজেপির কোর কমিটি তাদের কিছুটা ঘুঁটি সাজিয়ে দেয়। সবমিলিয়ে শাসক দলের পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী শিবিরেও আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি তুঙ্গে।

Sanjana Chakraborty

My name is Sanjana Chakraborty. I'm a content writer. Writing is my passion. I studied literature, so I love writing.

Leave a Reply

Your email address will not be published.