রঙ বা আবিরে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ চোখের ক্ষতি করে! কীভাবে বাঁচাবেন চোখকে?

দোলের দিন আমাদের সবসময় সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে

হাইলাইটস:

•আজ সারা বাংলা জুড়ে পালন হচ্ছে রঙের উৎসব

•দোলের রঙ ত্বক ও চুলের সাথে সাথে আমাদের চোখেও ক্ষতি করে

•তাই দোল খেলতে যাওয়ার আগে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে আমাদের

আজ দোল পূর্ণিমা। সারা বাংলা জুড়ে পালিত হচ্ছে রঙের উৎসব। ফলে রঙের উৎসবে মেতে উঠতে চলেছে ছোট থেকে বড় সকলে। তবে দোলের জন্য শুধু ত্বক বা চুলের যত্ন নিলেই হবে না। একইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে চোখেরও যত্ন। কারণ রঙ বা আবিরে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থেকে অনেকসময় চোখের ক্ষতি হয়। দোলের সময় এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যায়, যা আমরা কেউ ভাবতে পারিনা। সাধারণত দোলের সময় আমরা ত্বক ও চুল নিয়ে বেশি সচেতন হই। কিন্তু দোলের মরশুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের চোখ। প্রথমত, বসন্তের আবহে রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তার মধ্যে চোখের সংক্রমণও রয়েছে। তার উপর দোলে রং খেলার জন্যও চোখের নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই রঙের উৎসব সতর্কতার সঙ্গে পালন করা উচিত। দোল বা হোলির দিন কীভাবে চোখ সুরক্ষিত রাখবেন সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। দেরি না করে দেখে নিন একনজরে –

১. রাসায়নিক রঙ থেকে সাবধান:

রঙের গুণগত মান খারাপ হওয়ার কারণে ত্বক ও চোখের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। যে কোনও রাসায়নিক রঙ বা আবির চোখের জন্যই ক্ষতিকর। হোলির বহু রঙেই পারদ, সিলিকা, সীসা থেকে থাকে। বাজারে বিক্রি হওয়া এমন বহু রঙ থেকেই তৈরি হতে পারে ত্বকের সমস্যা। এগুলি চোখে গেলে অ্যালার্জির মতো উপসর্গ দেখা যায়। অনেক সময় ত্বকে জ্বালাভাবের উদ্রেক করে এই বিষাক্ত রঙ। বিশেষ করে একপ্রকার রাসায়ানিক যুক্ত সবুজ রঙ বাজারে বিক্রি হয়। দোল খেলতে খেলতে অনেক সময় চোখের মধ্যে রঙ ঢুকে যায়। এই রঙে মেশানো থাকে মেলাচাইট গ্রিন নামক একটি রাসায়নিক। এই রাসায়নিক কিন্তু ভীষণই খারাপ। চোখের খুব ক্ষতি করে। এমনকী কর্নিয়ার ক্ষতি করে দেয়। ফলে তার পরিবর্তে প্রাকৃতিক বা ভেষজ রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ ভেষজ রঙ চোখে লাগলে সেভাবে কোনও চোখে বা ত্বকে সমস্যা দেখা দেয় না।

২. ভেষজ আবির ব্যবহার করুন:

রঙ ওএবং আবির দুটোই ভেষজ হলে ত্বক, চুল, চোখ এবং স্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গলময়। আসলে ভেষজ রঙ বা আবির বানানো হয় ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে অথবা কাঁচা হলুদ, বিট দিয়ে। এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নেই। আবার খুব সহজেই রঙ উঠে যায় শরীর থেকে। এমনকী চোখেরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। তাই আবির বা রঙ কিনলে ভেষজ কেনার চেষ্টা করুন। তাই এইগুলি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু এখন বেশিরভাগ রঙে বা আবিরে ভেজাল মেশানো থাকে, তাই কেনার সময় যাচাই করে নিন। আর একটি বিষয় মাথায় রাখবেন, রঙ খেলার থেকে আবির খেলা ভালো। কারণ আবিরে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কম।

৩. সানগ্লাস পরুন:

যেহেতু দোল বা হোলি দিনের বেলাতেই খেলা হয়, তাই সানগ্লাস পরে নেওয়া দরকার। এর ফলে চোখ ঢাকা থাকবে। সহজে রঙ বা আবির চোখে ঢুকতে পারবে না। আর সানগ্লাসের সাহায্যে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি বা আলট্রা ভায়োলেট রে থেকেও চোখ সুরক্ষিত রাখা যায়। অনেকের রোদে মাথা যন্ত্রণা শুরু হওয়ার সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রেও সানগ্লাস বেশ ভালো কাজ করে। অর্থাৎ সানগ্লাস পরলে রোদের থেকে নিরাপদে থাকবে চোখ।

৪. চোখে লেন্স পরবেন না:

যারা লেন্স পরেন তারা রঙ খেলার সময় কোনওভাবেই লেন্স পরবেন না। এতে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। লেন্সের তুলনায় চশমা পরা আপনার জন্য নিরাপদের। লেন্স পরে দোল খেলতে গিয়ে যদি কোনওভাবে রঙ চোখে ঢুকে যায় তাহলে আপনার চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই যারা চশমার পরিবর্তে লেন্স পরেন, তারা দোল খেলার সময় লেন্স পরা থেকে বিরত থাকুন। এর পাশাপাশি যাদের চুল বড় তারা চুল খুলে কোনওমতেই দোল বা হোলি খেলতে যাবেন না। চুলের মধ্যে লেগে থাকা রঙ বা আবিরের গুঁড়ো চোখে ঢুকে যেতে পারে অনায়াসে। তাই সতর্ক থাকুন। কাউকে রঙ বা আবির মাঝানোর সময়েও সতর্ক থাকুন যাতে তার চোখে আবির বা রঙ ঢুকে না যায়।

৫. বার বার চোখ ঘষবেন না:

চোখ মানবশরীরের খুব সূক্ষ্ম অঙ্গ। দোল খেলতে খেলতে অনেক সময় চোখের মধ্যে রঙ ঢুকে যায়। অনেক সময় কপালে বা মাথায় আবির দেওয়ার সময় রঙের গুঁড়ো চোখের পাতায় এসে পড়ে। আবার রঙ মাখতে মাখতে মনের ভুলে চোখে হাত দিয়ে দেন অনেকে। প্রাথমিক অবস্থায় চোখে জ্বালাভাব দেখা দেয়। ওই সময় ভুলেও চোখ বার বার ঘষার চেষ্টা করবেন না। কারণ এই অবস্থায় চোখ রগড়ালে সমস্যা বাড়বে। এখান থেকেই চোখে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সামান্য অসাবধানতাতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে চোখের। যদি কোনওভাবে চোখে রঙ বা আবির ঢুকে যায় তাহলে জল দিয়ে ভালো করে চোখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। আর চোখে জল দেওয়ার আগে হাতও ভালোভাবে ধুয়ে নিন। বেশি লাল বা জ্বালা করলে চোখে আর্টিফিসিয়াল টিয়ার আই ড্রপ দিতে পারেন। এই ড্রপটি প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর দিতে থাকুন। কিন্তু চেষ্টা করবেন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরই কোনও আই ড্রপ ব্যবহার করার।

এইরকম স্বাস্থ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কিত প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.