Kosha Aloo Dum: ঐতিহ্য এবং স্বাদের একটি রন্ধনসম্পর্কীয় যাত্রার প্রথম পর্বে রইল কষা আলুর দম এবং লুচির রেসিপি

Kosha Aloo Dum

Kosha Aloo Dum: আরতি দিদির হাতের তৈরি এই রান্নার স্বাদ সত্যি অনন্য

Kosha Aloo Dum: নমস্কার আমি প্রিশিকা, একজন প্রাণবন্ত এবং কৌতূহলী ফুড জার্নালিস্ট।

আমি ঘুরে বেড়াতে এবং অনন্য খাবার খুঁজতে পছন্দ করি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এমন বাঙালি রেসিপি খুঁজে বার করবো, যেগুলির স্বাদ ভোলার জন্য। বিশেষ করে যারা কর্মসূত্রে কলকাতার বাইরে থাকেন, তবে তাদের মন পড়ে থাকে জন্মভিটেতে, এমন কিছু হোমকুকের সন্ধান করেছি আমরা।

Kosha Aloo Dum

তাই আজ আমরা খুঁজে নিয়েছি এমন এক সুন্দরী বাঙালি মহিলার বাড়ি, যাকে তার প্রতিবেশী এবং বন্ধুরা আদর করে ‘আরতি দিদি’ বলে সম্বোধন করেন। কলকাতায় আদিবাড়ি হলেও বর্তমানে তিনি মুম্বাইতে বসবাস করেন। বন্ধুমহলে দিদি শুধুমাত্র তার প্রেমময় প্রকৃতির জন্যই পরিচিত নয়, তার সুন্দর ব্যবহার, রন্ধনসম্পর্কীয় দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তার জন্যও পরিচিত।

তার সম্পর্কে যে তার বন্ধুরা একফোঁটাও মিথ্যা বলেনি, তা তার আতিথিয়তা এবং নম্র ব্যবহারেই প্রকাশ পেয়েছে। দিদি আমাকে তার বাড়িতে উষ্ণতা এবং যত্ন সহকারে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরাও আর দেরি না করে আমার সফরের উদ্দেশ্য, তার রন্ধনসম্পর্কীয় দক্ষতা এবং প্রিয় খাবার নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম। প্রথমেই তার যে রেসিপিটি মনে এসেছিল, তা ছিল তার পুরোনো পারিবারিক রেসিপি কষা আলুর দম।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন আলুর দম, বিদেশী কিছু খাবার নয় কেন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, এই খাবারটি তার হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থানে রয়েছে, কারণ এটি তার শৈশবে ভালোবাসা, লালন-পালনের স্মৃতিকে বারবার মনে করিয়ে দেয়। তাই এই খাবারটি তার স্মৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি একটি নস্টালজিক হাসির সাথে আমাদের সাথে আরও শেয়ার করে নিলেন যে, তিনি কলকাতার কোলাহলপূর্ণ শহরে বড় হয়েছেন, যেখানে তার পরিবার তার মামাবাড়িতে, বিশেষ করে দুর্গাপুজোর সময় সম্মিলিত হত। তার দিদা ছিলেন একজন অসাধারণ রাঁধুনি, যিনি এই স্পেশাল কষা আলুর দম পদটি তৈরি করতেন গণেশ মার্কা সরিষার তেল দিয়ে। আর এই গণেশ মার্কা সরিষার তেল আমাদের বংশপরম্পরায় প্রত্যেকেই ব্যবহার করে আসছেন। গণেশ মার্কা সরিষার তেলের সুবাস এবং মশলার স্বাদ, আরতি দিদির কাছে এই রেসিপিটিকে সর্বকালের প্রিয় করে তুলেছে। রেসিপিটি সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নিন –

Kosha Aloo Dum

উপকরণ

আরতি দিদি এই রেসিপিটির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হল:
* ৬০ গ্রাম আলু
* ২টি বড় পেঁয়াজ, সূক্ষ্মভাবে কাটা
* কারি পাতা
* আদা, রসুন এবং কাঁচালঙ্কা পেস্ট
* ২টি বড় টমেটো, পেস্ট করা
* ১০০ গ্রাম ধনে পাতা, গার্নিশের জন্য
* ২৫০ মিলি জল
* গণেশ মার্কা সরিষার তেল (স্বাস্থ্যের সুবিধার জন্য আরতি দিদির সবচেয়ে পছন্দ)
* গোটা জিরা
* হিং
* লাল লঙ্কা গুঁড়ো
* ধনে গুঁড়ো
* হিমালয় লবণ (আরতি দিদির পছন্দ)

আলু প্রস্তুত করার জন্য –

আরতি দিদি প্রথমে আলু সেদ্ধ করার জন্য একটি প্রেসার কুকারে ২৫০ মিলি জল গরম করে খোসা ছাড়ানো আলুগুলি সেদ্ধ করে নিয়েছিলেন। তিনি প্রিশিকাকে বলেছিলেন, “আমাদের এই আলুগুলিকে ঠিকঠাকভাবে সেদ্ধ করা দরকার”। আলু সেদ্ধ হয়ে আসার পর চার টুকরো করে কেটে নিয়েছিলেন তিনি। আসলে আলুর দম রান্না করলে আলু খুব বেশি ছোট কিংবা বড় করে কাটলে হবে না।

এরপর পেঁয়াজ এবং কারি পাতা ভাজা –

আলু সেদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে পেঁয়াজ এবং কারি পাতা ভাজার পালা। আরতি দিদি প্রথমে একটি প্যান গরম করে তাতে গণেশ মার্কা সরিষার তেল যোগ করলেন। তিনি প্রিশিকাকে বলেছিলেন, “এই তেলটি শৈশব থেকেই আমার রান্নাঘরের একটি প্রধান উপাদান ছিল, এটি হালকা এবং স্বাস্থ্যকর, যা কষা আলুর দমের জন্য একেবারেই উপযুক্ত।” এবার গরম তেলে পেঁয়াজ কুচি এবং কারি পাতা যোগ করে বাদামি করে ভেজে নিলেন। তারপরেই পুরো রান্নাঘরটি পেঁয়াজ এবং কারি পাতার আনন্দদায়ক সুবাসে ভরে উঠল।

আলু লাল লাল করে ভাজা –

পেঁয়াজ বাদামী করে ভাজা হয়ে গেলে আরতি দিদি প্যানে আলুর টুকরোগুলি যোগ করলেন। সেগুলিও হালকা বাদামী না হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিলেন। তিনি জানালেন, “এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটি আলুকে একটি সুন্দর টেক্সচার দেয় এবং স্বাদও বাড়ায়।” ভাজা হয়ে যাওয়ার পর তিনি আলু এবং পেঁয়াজ ভাজা একটি আলাদা পাত্রে রাখলেন।

মশলা প্রস্তুত করা –

তারপর আরও একটি প্যানে আরতি দিদি গণেশ মার্কা সরিষার তেল গরম করলেন। তারপর ফোড়নের জন্য তিনি গোটা জিরা এবং এক চিমটে হিং দিলেন, হিং সুগন্ধি ছড়াতে সাহায্য করে। এরপর তাতে আদা-রসুন-কাঁচালঙ্কা পেস্ট, লাল লঙ্কা গুঁড়ো এবং ধনে গুঁড়ো দিলেন। এবার সবকিছু ভালো ভাবে মিশিয়ে নিলেন এবং এটি কয়েক মিনিটের জন্য রান্না করলেন।

টমেটো পিউরি এবং মশলা যোগ করা –

এর পরবর্তী ধাপ ছিল রান্নায় টমেটো পিউরি যোগ করা। আরতি দিদি প্রিশিকাকে জানালেন, “টমেটো যে কোনও খাবারেই একটি সমৃদ্ধ ও ট্যাঞ্জি স্বাদ যোগ করে”। এবার তিনি টমেটো পিউরি যোগ করে ভালো ভাবে রান্নাটি কষিয়ে নিলেন। তার সঙ্গে তিনি যোগ করলেন পরিমান মতো লবণ। তিনি জানালেন, “পিঙ্ক সল্টই তিনি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। কারণ এর একটি অনন্য স্বাদ রয়েছে এবং এটি স্বাস্থ্যকরও বটে।”

এরপরের ধাপ –

এরপর মশলা ভালো করে কষিয়ে নেওয়ার পর
আরতি দিদি প্যানে কিছুটা জল যোগ করলেন। এবার ভাজা আলু এবং পেঁয়াজ যোগ করার আগে তিনি মিশ্রণটিকে কয়েক মিনিটের জন্য রান্না হতে দিলেন। এবার আলু এবং পেঁয়াজ যোগ করে বললেন, “এখন আমরা এটিকে কম আঁচে রান্না করতে দেব, কারণ কম আঁচে রান্নাটি করলে আলুর স্বাদও চমৎকার হবে।”

সর্বশেষ ধাপ –

প্রায় ৫ মিনিট সেদ্ধ করার পরেই তৈরি হয়ে গেল কষা আলুর দম। রান্নাটির গ্রেভি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে, খাবারটি ঠিক কতটা মশলাদার এবং সুস্বাদু হয়েছে। এবার গার্নিশের জন্য আরতি দিদি উপর থেকে ধনেপাতা ছড়িয়ে দিলেন।

লুচি তৈরি করা –

লুচি ছাড়া বাঙালির কোনও খাবারই যেন সম্পূর্ণ হয় না। তাই আরতি দিদিও এরপর লুচি তৈরির প্রস্তুতি নিলেন। প্রথমে তিনি এক কাপ ময়দার সাথে এক কাপ গমের আটা ভালো ভাবে মিশিয়ে নিলেন। তারপর এর সাথে, তিনি সামান্য জোয়ান এবং কালো জিরে যোগ করলেন। তিনি উল্লেখ করলেন, ‘জোয়ান স্বাদ বাড়ায় এবং হজমেও সাহায্য করে।” এবার ময়ানের জন্য অল্প গণেশ তেল যোগ করলেন এবং ভালো করে ময়ান দিয়ে মেখে নিলেন। ময়ান দিলে লুচিগুলি বেশ নরম এবং খাস্তা হয়। এবার অল্প অল্প করে জল দিয়ে ভালো করে ময়দা মেখে নিলেন। সঙ্গে দিদি বললেন, “ময়দাটি ঠিক করে মাখা দরকার, যাতে খুব বেশি নরম কিংবা খুব বেশি শক্ত না হয়।”

লুচি ভাজার পদ্ধতি –

ময়দা মাখার পর আরতি দিদি একটি ফ্রাইং প্যানে লুচি ভাজার জন্য বেশ খানিকটা গণেশ মার্কা সরিষার তেল গরম করলেন। এরপর তিনি বললেন, “ডুবো তেলে লুচি ভাজলে লুচিগুলি বেশ ফুলকো ফুলকো হয়।” এবার তেল গরম হয়ে এলে একে একে লুচিগুলি বাদামী করে ভেজে নিলেন। সঙ্গে তিনি বললেন, “সর্ষের তেল ঐতিহ্যগতভাবে কলকাতায় ব্যবহার হয়, তবে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্পের জন্য, আমি গণেশ মার্কা সরিষার তেলই পছন্দ করি।”

পরিবেশন পদ্ধতি –

কষা আলুর দম এবং গরম গরম লুচি তৈরি করে, আরতি দিদি অতি যত্ন সহকারে প্রিশিকাকে খাবার পরিবেশন করলেন। এই অপূর্ব স্বাদের কষা আলুর দম এবং তার সঙ্গে ফুলকো ফুলকো লুচি খেয়ে প্রিশিকাও আনন্দে আত্মহারা উঠে উঠছেন। হয়তো সে-ও কোনওদিন এই স্বাদ ভুলতে পারবেন না। আরতি দিদির হাতের তৈরি এই খাবারটি ৪-৫ জনকে পরিবেশন করা যেতে পারে।

We’re now on Telegram – Click to join

উপসংহার:

শুধুমাত্র এটি একটি রেসিপি নয়, তাঁর স্মরণীয় একটি অংশ শেয়ার করার জন্য আরতি দিদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছি আমি। এই কষা আলুর দমের স্বাদ ছিল সত্যিই অতুলনীয়। এই রেসিপিটি পরিবার, ঐতিহ্য এবং রান্নার মধ্যে ভালোবাসার উদযাপন করল, বললে একফোঁটাও ভুল হবে না। এই অভিজ্ঞতাটি আমাকে মনে করিয়ে দিল যে, কেন দিদি আমার কাজ এতবেশি পছন্দ করেছিল।

Watch on youtube Print Recipe

We’re now on WhatsApp. Click to join

Like this post?
Register at One World News to never miss out on videos, celeb interviews, and best reads.

Leave a Reply

Your email address will not be published.