Jiban Krishna Saha: একটানা ৬৫ ঘন্টা তল্লাশির পর নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ফের সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার তৃণমূলের আরও এক বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা
তাঁর পরিচয় হল মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল নির্বাচিত বিধায়ক তিনি
হাইলাইটস:
•নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ফের সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার তৃণমূলের আরও এক বিধায়ক
•গ্রেফতার হলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা
•আজ ভোরবেলা তাঁকে গ্রেফতার করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা
Jiban Krishna Saha: রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি মামলা একের পর এক মোড় নিতে শুরু করেছে। রাজ্যের শাসক দলের অনেক নেতা-মন্ত্রীই এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি কাছে বন্দি। যে তালিকায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বাদ যাননি। এবার সেই তালিকা যেন আরও কিছু শতাংশ বৃদ্ধি পেল। কারণ এবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআই-এর হাতে ফের গ্রেফতার মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna Saha)। একটানা ৬৫ ঘন্টা তল্লাশি এবং জেরার পর অবশেষে সোমবার অর্থাৎ আজ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে গ্রেফতার হলেন তৃণমূল বিধায়ক।
গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সিবিআই আধিকারিকরা বিধায়কের বড়ঞার বাড়িতে গিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ওই দিন একইসঙ্গে রঘুনাথগঞ্জের আরও এক বিধায়কের শ্বশুরবাড়িতেও অভিযান চালান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সিবিআই সূত্রে খবর, প্রথম থেকেই তদন্তে অসহযোগিতা করছিলেন বড়ঞার বিধায়ক। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীনই শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টা নাগাদ সিবিআই আধিকারিকদের হাত থেকে নিজের দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বাড়ির পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে।
সেই দিন রাত থেকেই মোবাইলগুলি পুকুর থেকে তোলার কাজ শুরু করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ৩৮ ঘণ্টা সারা পুকুর তল্লাশি অভিযান করে একটি মোবাইল মিললেও দ্বিতীয়টির সন্ধান পায়নি তদন্তকারী সংস্থা৷ তাছাড়া তল্লাশি চালানো হয় তাঁর অফিস-সহ একাধিক জায়গায়। সিবিআই সূত্রে আরও খবর, বিধায়কের বাড়ি থেকে তাঁর সুপারিশে হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের নথির পাশাপাশি এসএলএসটির গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ডেটাবেসই পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে উদ্ধার হয়েছে প্রায় দু’বস্তা নথিও, যেখানে রয়েছে প্রায় ৩,৪০০ প্রার্থীর তথ্য। সিবিআই গোয়েন্দাদের দাবি, এই নথিগুলির মধ্যে শুধু মুর্শিদাবাদ জেলার নয়, অন্য জেলার চাকরিপ্রার্থীদের তালিকাও মিলেছে। আবার বাড়ির পিছনে রাইস মিলের পাঁচিল সংলগ্ন জঙ্গল থেকে আগেই পাঁচটি ব্যাগ ভর্তি নথি উদ্ধার করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সেই ব্যাগ গুলিতে নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন তাঁরা।
সিবিআই সূত্রে খবর, বিধায়কের ঘর থেকে একাধিক কম্পিউটার, বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ, তিনটি নোটপ্যাড, হাই স্পিড ইন্টারনেট সংযোগ এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু সফ্টঅয়্যারের খোঁজও পাওয়া যায়। ঠিক কী কাজে এই ঘর ব্যবহার হত, সে বিষয়েও বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু এতেও কোনও সঠিক উত্তর মেলেনি বিধায়কের কাছ থেকে। এমনকী তাঁর বাড়ির ঠাকুরঘরের একটি সিঁদুর কৌটোর মধ্যে মোবাইলের মেমরি কার্ড লুকিয়ে রেখেছিলেন বলেও বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই সমস্ত অভিযোগ সামনে রেখেই নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগীতা, পালানোর চেষ্টা এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগ আনলেন সিবিআই আধিকারিকরা। ফলে তাঁকে গ্রেফতার করা হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে।
প্রসঙ্গত, গত ২ দিন ধরেই বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রায় কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তল্লাশি চালিয়ে এমনই বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। গত শুক্রবার দিয়ে একের পর এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। আধিকারিকরা মনে করছেন আরেকটি মোবাইল উদ্ধার হলেই নিয়োগ দুর্নীতির সাথে জড়িত আরও কিছু তথ্য পাবেন তাঁরা। তাঁদের বিশ্বাস মোবাইল ফোনেই লুকিয়ে আছে দুর্নীতির রহস্যভেদের বিরাট কোনও সূত্র। সেই কারণেই হয়তো বিধায়ক তাঁর মোবাইল ফোন দুটিকে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন৷ সূত্রের খবর, ভোর ৫টা ২০ মিনিটেই বিধায়ককে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রহনা দিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। তারপর তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হল এখানে। এর পর তাঁকে নিজাম প্যালেসে আনা হল। অবশেষে তাঁকে আলিপুরের সিবিআই-এর বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।