নিৰ্বাচন

West Bengal Panchayat Vote 2023: স্পর্শকাতর জেলাগুলিতে মোতায়েন করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী! পঞ্চায়েত ভোট মামলায় রায় দিল আদালত

West Bengal Panchayat Vote 2023: পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিরোধীদের করা মামলায় রায় দিল হাইকোর্ট

West Bengal Panchayat Vote 2023: পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিরোধীদের করা মামলায় রায় দিল হাইকোর্ট

 

হাইলাইটস:

• মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ভোটের রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট

• কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় হবে পঞ্চায়েত ভোট

• ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে না কোনও সিভিক ভলেন্টিয়ার কিংবা চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী

West Bengal Panchayat Vote 2023: পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় করানোর পক্ষেই কলকাতা হাইকোর্ট মত দিল। বিশেষত, নির্বাচন কমিশন রাজ্যের যে ৭টি জেলাকে স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করেছিল, সেই জেলাগুলিতে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে আদালত পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের সময়সীমা নিয়ে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করেনি। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মনোনয়নের সময়সীমা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরই ছেড়েছে।

গতকাল, মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে জনস্বার্থ মামলার রায় ঘোষণা ছিল। গত সপ্তাহের শুক্রবার এবং এই সপ্তাহের সোমবার পঞ্চায়েত মামলার শুনানি হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। তারপর আদালতের রায়ের অপেক্ষা করছিল, শাসক থেকে বিরোধী সকলেই। গতকাল বিকেল ৫টা নাগাদ আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করে। আদালতের রায়ে যে নির্দেশগুলি দেওয়া হয় তা হল –

১. ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট করানো জন্য কমিশনের কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা উচিত। রাজ্য পুলিশের সংখ্যা কম থাকার দরুন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন। রাজ্য যা বাহিনী প্রয়োজন তা কেন্দ্র সরকারের দেওয়া উচিত।

২. এনসিসি ছেলেদের এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের চতুর্থ পোলিং অফিসারের পরের কোনও পদে কাজ করাতে পারে রাজ্য।

৩. মনোনয়নের সময়সীমা নিয়ে আদালত কোনও মতামত দেবে না।

৪. রাজ্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ বহন করবেনা। কেন্দ্রকেই সেই খরচ দিতে হবে।

৫. স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার দরকার কমিশনের।

৬. ভোটকার্যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার না করাই ভালো।

৭. অবিলম্বে ৭টি স্পর্শকাতর জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে নির্দেশ আদালতের।

৮. যে সমস্ত বুথে সিসিক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, আদালত তাতে মত দিয়েছে। কিন্তু আদালত পাশাপাশি এও জানিয়েছে, এলাকার রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও নজর রাখতে হবে।

গত ৮ই জুন নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন এবং সেই দিন থেকেই জারি করা হয় নির্বাচনী বিধি। ৯ই -১৫ই জুন মনোনয়নের দিন স্থির হয়। কিন্তু তার পরদিনই ভোটের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিভিন্ন আপত্তি তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। পরে এর সঙ্গে যোগ হয় আরও কিছু মামলা।

প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ পঞ্চায়েত ভোট মামলার শুনানি শুরু করেন সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ। সেই শুনানি শেষ হয় বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ। সেই দিন শুনানির পর স্থগিত রাখা হয়েছিল রায়দান। মঙ্গলবার দুপুরে এই মামলার রায় ঘোষণা করে আদালত।

সোমবারের শুনানির শুরুতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরতির সময় আদালত ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে আমি আশাবাদী।’’ বিরোধীদের ওই মামলার মূল বিষয় ছিল তিনটি- কেন্দ্রীয় বাহিনীর দ্বারা ভোট, ভোট এবং মনোনয়নের দিনক্ষণ, এবং ভোটে সিভিক ভলান্টিয়ারের প্রয়োগ। সোমবারের শুনানিতে এই তিনটি বিষয়েই নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করে বিরোধীরা, রাজ্যের আইনজীবী এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সব পক্ষের মতামত শুনে প্রধান বিচারপতি নিজস্ব পর্যবেক্ষণ জানান। দেখে নেওয়া যাক সোমবার ঠিক কী কী বিষয় নিয়ে কে, কী বলেছিলেন।

• ভোটের দিন এবং মনোনয়নের সময়সীমা:

৭৩ হাজার আসনে এত দ্রুত মনোনয়ন জমা দেওয়া সম্ভব নয় বলে বিরোধীদের অভিযোগ। বিজেপির আইনজীবী বলেন, ‘‘প্রতি দিন ৪ ঘণ্টা করে মনোনয়ন নেওয়া হচ্ছে। ৫ দিনের হিসাব করলে ৭৩ হাজার প্রার্থীর জন্য গড়ে ৪০ সেকেন্ড সময়ও মেলে না।’’ এরপর বিচারপতিও মতামত দেন গত বার মনোনয়নের জন্য ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এবারে সেই সময়সীমা অনেক কম। তাছাড়া প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও, মনোনয়ন জমা নেওয়ার সময় ৯ই-১৫ই জুনের মধ্যে একটি ছুটির দিনও ছিল। ১১ই জুন রবিবার থাকার কারণে কোনও মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়নি, কমিশনকে সেটাও মনে করিয়ে দেন বিচারপতি। রাজ্য বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে যুক্তিতে সন্দেহ আছে দাবি করেন। রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণবন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন , এই ক’দিনেই সময়ের মধ্যেই বিজেপির ৪ হাজার মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। একই সঙ্গে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় অব্যবস্থার কথা বিরোধীরা অভিযোগ করছে সে প্রসঙ্গেও রাজ্যে যুক্তি দেয়, গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে বিডিও অফিসে একাধিক টেবিলে মনোনয়ন নেওয়া হয়। অবশ্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আদালত নির্দেশ অনুসারে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা ১ দিন বৃদ্ধি করতে পারে কমিশন। সেক্ষেত্রে ১৫ই জুনের বদলে মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন ১৬ই জুন হতে পারে। এর উত্তরে প্রধান বিচারপতি ভোটের দিনও পিছিয়ে ১৪ই জুলাই করার কথা বলেন। কিন্তু বিচাপতির এই প্রস্তাবে আপত্তি জানায় কমিশন। ভোটের দিন এ ভাবে পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় জানায় কমিশন।

• কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পঞ্চায়েত ভোট:

সোমবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শুনানি চলাকালীন প্রস্তাব দেন পঞ্চায়েত ভোট কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে করানো হলেই ভালো। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কয়েকটি জেলাকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করেছে। বিচারপতি বলেন, প্রয়োজনে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে বিজেপির আইনজীবী বলেন, ‘‘৫ বিচারপতির বেঞ্চ ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নিয়েছিল। সকল ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দিকে ইঙ্গিত করছে।’’ আইনজীবী ঋজু ঘোষাল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার দাবি জানিয়েছেন, এছাড়াও কেন্দ্রের ভিতরে বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ১ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত ভিডিয়োগ্রাফির প্রস্তাবও দেন তিনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি নিয়ে কোর্টে বাদানুবাদ হয় সব পক্ষের মধ্যে। কোর্ট এ ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা বলতে পারে না বলে কমিশন। কমিশন আরও বলে গত পুরভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে আদালত স্বাধীনতা দিয়েছিল কমিশনকে। এরপর কমিশনের সেই যুক্তিতে বিচারপতি বলেন, পুরভোটে অশান্তিও হয়েছিল এবং হাইকোর্ট বলেছিল, যদি অশান্তি হয় সেই দায় বর্তাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর।

• ভোটকার্যে সিভিক ভলান্টিয়ারের ব্যবহার:

রাজ্য পুলিশের তত্ত্বাবধানে পঞ্চায়েত ভোট করানোর কথা বলেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বিরোধীদের আশঙ্কা ছিল রাজ্য পুলিশের ঘাটতি মেটাতে সিভিক ভলান্টিয়ার, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করতে পারে। সোমবার এই বিষয়ে আদালতে তৃতীয় জনস্বার্থ মামলাকারী প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কী ভাবে ভোটের কাজে অংশ নিতে পারেন ওই কর্মীরা? জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের পরিপন্থী এটি। অতীতেও তাঁদের ব্যবহার করা হয়েছে।’’ পরে সিপিএমের আইনজীবীও এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ইনস্পেক্টর জেনারেল কোর্টে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছেন, সিভিক ভলান্টিয়ার কাজ করবে না আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু গত ২ দিনে দেখা গিয়েছে, সিভিক ভলান্টিয়াররা রানিনগর এবং ডোমকলে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়েছেন । সম্ভবত পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী অভাব ছিল। ভোট করাতে সম্ভবত রাজ্যের কাছে পর্যাপ্ত পুলিশও নেই।’’ এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি কমিশনকে বলেন, সিভিক ভলান্টিয়াররা পুলিশ নয়। তাই কমিশন যে পুলিশবাহিনী দিয়ে ভোট করানোর কথা বলছে, তার মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার বা কোনো চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের না নেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা চাই কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী কোনও ভাবেই যেন অংশ না নেন এই নির্বাচনে। এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে তাঁদের বাদ রাখা হোক। এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখুক কমিশন।’’ ভোটকর্মে সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগে বিচারপতির যুক্তি শুনে কমিশন বলে,প্রয়োজনে ভোটকর্মীর ঘাটতি মেটাতে এনসিসি-র সদস্য, সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার অথবা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ করতে পারে কমিশন। তবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজে আদালতের নির্দেশ অনুসারে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ব্যবহার করবে না কমিশন।

তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টের রায়কে আরেকবার পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছে।

এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button