health

আপনার কী মুখের ভিতরে ঘা হয়েছে? এটি হল মাউথ আলসার হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ

মাউথ আলসার হল মুখের মধ্যেকার এক ধরনের ঘা

মুখে ঘা বা মাউথ আলসার যার হয়, সেই জানে ভালো ভাবে এর কষ্টটা। মুখের ঘা নিয়ে ভোগা মানুষের সংখ্যা কম নয়। ছোট থেকে বড়ো সকলেই মোটামুটি এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে মুখে একটা ফুসকুড়ির মতো হয়। তারপর সেই জায়গাটি লাল হয়ে যায়। এই গোলাকার লাল অংশের ভিতরটি সাদা হয়ে থাকে এবং মারাত্মক জ্বালা করে। এগুলি আপনার মাড়ি, জিভ, ভিতরের গাল, ঠোঁট বা তালুর নরম পৃষ্ঠে হতে পারে। জিভের নীচে কিংবা গালে হলে খাওয়াদাওয়া করতে বা কথা বলার সময়ে প্রবল সমস্যার মুখে পড়তে হয়। মুখের ভিতর এই ঘা একটি থেকে শুরু করে অনেকগুলি হতে পারে। মুশকিল বিষয় হল, একটিমাত্র ঘা হলেও মানুষের খেতে সমস্যা হয়। আবার মুখের ভিতরের লালা ওই নির্দিষ্ট অংশে লাগলে ভয়ঙ্কর জ্বালার সৃষ্টি হয়। অনেকে আবার এই ব্যথা থেকে বাঁচতে চেয়ে সেই সময়টায় ব্রাশ পর্যন্ত করেন না। কারণ ব্রাশ করার সময় টুথপেস্ট ওই নির্দিষ্ট জায়গায় লাগলে যন্ত্রণা হয়। তাই এই সময়টায় অনেকেই ব্রাশ করা এড়িয়ে যান।

মুখের ঘায়ের কারণ:

বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার কারণে মুখে ঘা হতে পারে। আবার পেটের সমস্যা, ডিহাইড্রেশন, ধূমপান, মশলাদার খাবার, দাঁত দিয়ে জিভ বা গালের ভেতরের চামড়া কামড়ানো, মানসিক চাপ, গর্ভাবস্থা এবং জেনেটিক কারণে মুখে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ভিটামিন B এবং C-এর ঘাটতির পাশাপাশি আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টির কারণেও হয়ে থাকে।

মাউথ আলসাসের লক্ষণ:

মাউথ আলসার সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। বেশিরভাগ সময় মাউথ আলসারকে বিপজ্জনক বলে মনে করা হয় না। কিন্তু কিছু গুরুতর রোগে মুখে ঘা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসাবে দেখা দেয়।

•ডায়াবিটিস

•ইমিউনিটি কম

•অন্ত্রের প্রদাহ

•Celiac রোগ

•এইডস (এইচআইভি)

মুখে ঘা বা মাউথ আলসার নিরাময়ের ঘরোয়া উপায়:

ভিটামিন C যুক্ত ফল: ভিটামিন C-এর অভাবে মুখের মধ্যে ঘায়ের সৃষ্টি হতে পারে। কমলালেবুর মতো ভিটামিন C সমৃদ্ধ ফল খাওয়া একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন C পেতে আপনি দিনে দুটি করে কমলালেবু খেতে পারেন। আবার অন্যদিকে আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে, যে কোনও সমস্যা সমাধানে আমলকীর জুড়ি মেলা ভার। কারণ এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়া এর মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে। তাই চাইলেই এটি প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে। এমনকী আমলকীর রসও লাগাতে পারেন ওই নির্দিষ্ট জায়গায়। মাউথ আলসার থেকে রেহাই পেতে আমলকীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।

মধু: মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। তাই ঘা থাকলে সেই সমস্যা সমাধানে মধু হতে পারে আপনার প্রধান হাতিয়ার। এক্ষেত্রে মুখের ঘায়ের জায়গায় লাগাতে পারেন মধু। এছাড়া প্রতিদিন এক চামচ করে মধু খেতে পারেন। অবশ্য ডায়াবিটিস থাকলে এড়িয়ে যান।

তুলসী পাতা: তুলসী পাতার গুণাগুণ নিয়ে লিখতে গেলে একটি গোটা লেখা বই হয়ে যাবে। তুলসী পাতা তার ঔষধি গুণাবলীর জন্য পরিচিত এবং স্বাস্থ্যের উদ্দেশ্যে বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুখে ভিতর ঘা থাকলে তা থেকে মুক্তি পেতে কিছু তাজা পাতা চিবিয়ে তার সঙ্গে কিছু পরিমাণ জল পান করুন। প্রতিদিন এটি করলে ঘা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

নারকেল তেল: নারকেল তেলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ। আপনি দিনে ৩ থেকে ৪ বার মুখের ঘায়ে লাগাতে পারেন নারকেল তেল। তবে অবশ্যই এমন নারকেল তেল লাগাবেন যার মধ্যে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য নেই বা কম রয়েছে। তবেই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাবেন।

অ্যালোভেরার রস: মুখে ঘা থাকলে সারাদিন অল্প পরিমাণে অ্যালোভেরার রস পান করলে আরাম পাওয়া যায়। অ্যালোভেরার প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এবং অ্যালোভেরার রস পেটের আলসারের চিকিৎসার জন্য উপকারী বলে পরিচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button