৪ঠা ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন হয় সারা বিশ্বজুড়ে
ক্যান্সার এক ভয়াবহ কর্কট রোগ
বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে আমরা এটা বলতে পারি যে, ক্যান্সারই আমাদের জীবনের সবথেকে বড়ো শত্রু। প্রতিবছর ৪ঠা ফেব্রুয়ারি দিনটিকে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ২০০০ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি প্যারিসে বিশ্ব ক্যান্সার সামিট আয়োজিত হয়েছিল। সেখানেই ঠিক হয় এই দিনটি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস বা বিশ্ব ক্যান্সার সচেতনতা দিবস বা বিশ্ব ক্যান্সার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করা হবে। তাই এই দিনটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার রোগীদের জীবন ধারার মান উন্নয়নে ইন্টারন্যাশানাল ইউনিয়ন এগেনষ্ট ক্যান্সারকে সহায়তা করে থাকে। এই দিনটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল (UICC) নামক একটি বেসরকারী সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হয়, যা পূর্বে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এই সংস্থার সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত, যার ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় দু হাজার সদস্য রয়েছে। বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল মানুষদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, ক্যান্সারের বিভিন্নতাকে বোঝা এবং সেই সাথে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রকে এই সমস্যাটি সম্পর্কে অবগত করা।
১৯৯০ সাল থেকে করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছরে নতুন ৮.১ মিলিয়ন ক্যান্সারে আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৮ সাল নাগাদ বছরে ১৮.১ মিলিয়ন নতুন রোগীর তথ্য পাওয়া যায়। প্রচলিত ক্যান্সার সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যথাক্রমে ফুসফুস, স্তন ও অন্ত্রের ক্যান্সার। বৈশ্বিকভাবে এই বিষয়কে গুরুত্বের সাথে যদি এখনই না নেওয়া হয় তবে ধারণা করা যায় যে, ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর সংখ্যা ১৩.১ মিলিয়নে দাঁড়াবে। যদিও বর্তমানে মানুষের মধ্যে পাওয়া ক্যান্সারের ৪০ শতাংশেরও বেশি নিরাময়যোগ্য এবং আক্রান্ত রোগীর বেঁচে যাওয়ার সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিগত দশক ধরে ক্যান্সার নিয়ে পড়াশোনা এবং একে বোঝার ফলস্বরূপ সম্ভবত এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন সম্ভাবনারও জন্ম দিয়েছে। ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি দেখা যায় তা রোগীদের ক্যান্সারের সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ আস্থা দেয়।
তবে ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য বড়ো ভূমিকা পালন করে ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের ব্যয়বহুল চিকিৎসা বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত মানুষের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ক্যান্সারে গোটা পৃথিবীতে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৬৫ শতাংশ দেখা যায় গরিব দেশগুলিতেই।কিন্তু গত কয়েক বছরে ক্যান্সারের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সময়ে ক্যান্সারের জন্য আরও ভালো স্ক্রিনিং এবং চিকিৎসার অপশন পাওয়া গেছে, যার কারণে রোগীরা আগের চেয়ে আরও বেশি দিন বেঁচে থাকার সুযোগ পান। চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যান্সারের লক্ষণগুলি নির্ভর করে ক্যান্সারটি কোথায়, এটি কতটা বড়ো এবং এটি কাছাকাছি কোনও অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করে। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।কারণ ক্যান্সারের অনেক প্রকার এবং যে কোনও ক্যান্সার বৃদ্ধির সঙ্গে আশেপাশের অঙ্গ, রক্তনালী এবং স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এই চাপ ক্যান্সারের কিছু উপসর্গ ও লক্ষণ সৃষ্টি করে।
ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ ও লক্ষণগুলি হল:
দ্রুত ওজন কমে যাওয়া: কোনও কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে যদি ওজন কমতে থাকে সেটা কিন্তু সত্যিই চিন্তার কারণ। এটা কিন্তু ক্যান্সারের অন্যতম উপসর্গ। তাই নজর দিন ওজনের দিকে।
অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড: আপনি যদি শরীরের কোনও অংশে অস্বাভাবিক কোনও মাংসপিণ্ড দেখতে পান অথবা মাংস জমাট হতে দেখেন কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা কিন্তু ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পারে। তাই সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি: আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিবোধ করেন অথবা অবসাদে ভোগেন তবে সেটা অনেক রোগের কারণই হতে পারে, হতে পারে ক্যান্সারও। মলাশয়ের ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার হলে সাধারণত এমন উপসর্গ দেখা যায়। তাই এরকম হলে দ্রুত পরামর্শ নিন চিকিৎসকের।
ঘন ঘন জ্বর: জ্বর, সর্দি এবং ফ্লুর একটি সাধারণ উপসর্গ হতে পারে এবং এটি নিজে থেকেই চলে যায়। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে জ্বর হচ্ছে যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে। কিন্তু ক্যান্সারের জ্বরটা একটু আলাদা। ক্যান্সার শরীরে জেঁকে বসলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে দেখা দেয় ঘন ঘন জ্বর। এটি ব্ল্যাড ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
দীর্ঘদিনের ব্যথা: কোনও কারণ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনও অংশে যদি ব্যথা হয় আর তাতে ওষুধও যদি কাজ না করে, তাহলে কিন্তু এই নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট কারণ আছে। শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে রোগীর ব্রেইন টিউমার বা মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে কিনা।
ত্বকে যে কোনও ধরনের পরিবর্তন: ত্বক শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জন্ডিস একটি লক্ষণ যা সম্ভাব্য সংক্রমণ বা ক্যান্সারকে নির্দেশ করতে পারে। আপনি যদি জন্ডিসের কোনও উপসর্গ লক্ষ্য করেন তাহলে সতর্ক হোন। আঁচিলও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, তাই খেয়াল রাখবেন যে আঁচিল কোনও ভিন্ন ধরনের নয়, এগুলো ছড়াচ্ছে না, রং পরিবর্তন হচ্ছে না বা দ্রুত বাড়ছে না।
অকারণে রক্তক্ষরণ: যদি কাশির সময় রক্তক্ষরণ হয়, তবে এটা ক্যান্সারের একটি বড়ো লক্ষণ। এছাড়া জনিপথ বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণ-সহ এ ধরনের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাও ক্যান্সারের উপসর্গ।