বড়দিনের সপ্তাহে আপনি যদি তুষারপাত দেখতে চান তাহলে ঘুরতে যেতে পারেন বাংলার শৈল শহর (হিমালয়ের রানী) এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়
আপনি যদি ভাগ্যবান হন তবে দেখতে পাবেন তুষারপাত
আর মাত্র হাতে গোনা কটা দিন তার পরেই আসছে বড়দিন এবং তারপর ২০২৩ অর্থাৎ নতুন বছর। এই এক সপ্তাহ স্কুল কলেজগুলিতে ঘোষণা করা হয় শীতের ছুটি। আর অফিসেও চলে ক্রিসমাস ও ইয়ার এন্ডিং হলিডে। ফলে এই এক সপ্তাহে আপনি আপনার পরিবারকে নিয়ে শৈল শহর এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। যদি ভাগ্যবান হন তবে দেখতে পাবেন তুষারপাতও। প্রতিবছরই কমবেশি তুষারপাতের সাক্ষী থাকেন ভ্রমণপ্রেমীরা। আর এই তুষারপাত দেখতে দূরে কোথাও যেতে হবে না। এই রাজ্যেই আছে শৈল শহর দার্জিলিং এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা। সুতরাং শীতের ছুটিতে তুষারপাত দেখতে উত্তরবঙ্গ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। হিমালয়েরর বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোটো ছোটো গ্রামগুলি শীতের সময় দারুণ লাগে। এই গ্রামগুলিতে হোটেল ছাড়াও রয়েছে ছোট ছোট হোমস্টে। এই হোমস্টেগুলিতে থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত রয়েছে।
দার্জিলিং:
শীতকালে কম খরচে বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ জায়গা হল শৈল শহর দার্জিলিং। তুষারপাতের মরশুমে হিমালয়ের রানিকে যেন আরও উজ্জ্বল দেখায়। তুষারপাতের কারণে গোটা শহর সাদা হয়ে যায়। চারপাশের গ্রামগুলিও তখন ঝলমল করে। বড়দিন এবং নববর্ষের সময় এখানে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। গোটা জেলা ঘুরে বেড়ান, টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখুন, ম্যালে ঘুরে বেড়ান কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে মনের তৃপ্তি মেটান। দার্জিলিং শহর না হলেও সেখানকার নানা গ্রামে ঘুরতে যেতে পারেন। সেসব গ্রামে রয়েছে হোমস্টের ব্যবস্থা। শীতকালে এখানে পাহাড়ের গা বেয়ে কুয়াশার ঢল উড়ে বেড়ায়। কখনও কখনও কাঞ্চনজঙ্ঘা সেই কুয়াশার মেঘে ঢাকা পড়ে যায়। এই সময় চা বাগানের সৌন্দর্য যেন অনন্য হয়ে পড়ে। পাহাড়ে ঘেরা এই জেলা বাংলার পর্যটককেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম।
লাভা-লোলেগাঁও:
শীতে তুষারপাত উপভোগ করার উপযুক্ত জায়গা হল লাভা ও লোলেগাঁও। উত্তরবঙ্গের এই ক্ষুদ্র গ্রামে দার্জিলিং থেকে সরাসরি সড়কপথে যাওয়া যায়। ট্রেকিং এবং রোমান্টিক এই স্থান অবসর যাপনের জন্য আদর্শ একটি স্থান। তুষারময় রাস্তা ও পরিবেশ উপভোগ, দূরের পাহাড়ের হাতছানি, রহস্যময় কুয়াশা অবসরের প্রতিটি মুহূর্তকে আকর্ষণীয় করে তোলে। সময় পেলে অবশ্যই বড়দিনের ছুটিতে লাভা-লোলেগাঁও দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
রিশপ:
রিশপকে বলা হয় লাভা এবং লোলেগাঁও-এর ছোটো বোন। লাভা-লোলেগাঁও মতোই এই গ্রামটিও অপূর্ব সুন্দর। এই গ্রামে গেলে, মুগ্ধ না হয়ে কোনও উপায় নেই। এখানে অনেক হোমস্টে হয়েছে, যেখানে থাকা-খাওয়ারও সুবন্দোবস্ত রয়েছে। তুষারপাতের পর এখানকার ছোট ছোট ভিক্টোরিয়ান বাড়িগুলি ধবধবে সাদা হয়ে যায়। আর সেই বাড়িগুলি দেখতে পর্যটকদের ভিড় জমে।
রিম্বিক:
দার্জিলিং শহরে তো কমবেশি সবাই যান কিন্তু দার্জিলিং জেলার গ্রামগুলিতে যাওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করুন। আমাদের বিশ্বাস করুন, একটুও খারাপ লাগবে না। দেশের আর পাঁচটি পাহাড়ি গ্রামের চেয়ে এখানকার গ্রামগুলি বেশ পকেট ফ্রেন্ডলি। এই যেমন রিম্বিক গ্রামের কথাই ধরা যাক। ছবির মতো সুন্দর গ্রামটি নাকি দার্জিলিঙের চেয়েও আকর্ষণীয় স্থান। আর তেমনই নিরিবিলি এবং এই গ্রামের মানুষ খুবই সাদাসিধে। তাই শান্তিতে ঘোরা যায় এখানে। এখানকার সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে একবার প্রবেশ করলে আর ফিরতে ইচ্ছে করবে না। তুষারপাতের পর এখানকার বরফে ঢাকা রাস্তার মধ্য দিয়ে ভ্রমণ আপনাকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত স্মরণীয় করে রাখবে।
সান্দাকফু:
পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে তুষারপাতের কারণে আরও আশ্চর্যময় হয়ে ওঠে। শীতের সময় এখানে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা ট্রেকিং-এর উদ্দেশ্যে যান। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তরে ট্রেকিং রুটের চারটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম ট্রেকটি হল – মানেভঞ্জন থেকে মেঘমা তারপর দ্বিতীয় ট্রেকটি হল মেঘমা > গৈরিবাস > টংলু > টুমলিং। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের সীমানাটি এই পথের ধারেই। তৃতীয় ট্রেকটি হল গৈরিবাস থেকে সান্দাকফু। টানা ৪ ঘণ্টার খাড়াই পথ ধরে পৌঁছোতে হয় সান্দাকফুতে। পথে পড়ে কালা পোখরি গ্রাম। আর চতুর্থটি হল সান্দাকফু থেকে ফালুট। ট্রেকিং পথে সব চেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হল এটি। ২১ কিলোমিটার পথে সব সময়ের সঙ্গী হিসাবে পাবেন এভারেস্ট আর কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।