ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর ফাইনাল ম্যাচে জীবনের সেরা খেলাটি খেলেছেন লিওনেল মেসি
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর বিশ্বসেরা হল আর্জেন্টিনা
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয় দিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বসেরা হল আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬-এর পর বিশ্বকাপ এল মারাদোনার দেশে। আট বছর আগে মারাকানায় লিওনেল মেসির (Lionel Messi) যে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছিল, কাতারের লুসেইল স্টেডিয়ামে এসে সেই বৃত্ত পূর্ণ হয়েছে। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর মেসির হাত ধরে আর্জেন্টিনা পেল বিশ্বকাপ। এই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হুগো লরিসের ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে তুলে নিলেন লিওনেল মেসি। অবশেষে বিশ্বকাপ (FIFA World Cup) জয়ের স্বপ্ন পূরণ হল মেসির। একই সঙ্গে স্বপ্ন পূরণ হল আর্জেন্টাইনদের। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মেসি ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের একটাই প্রার্থনা ছিল, মেসির হাতে ওই সোনালি ট্রফিটি দেখার।
২০২২ -এর ১৮ই ডিসেম্বর শান্ত এবং দাপুটে মেসিকে দেখল সারা বিশ্ব। তিনি প্রথম গোলটি মারলেন পেনাল্টির দরুন। কাতারের মাঠে আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় গোল করলেন মেসির পুরনো বন্ধু দি মারিয়া। তৃতীয় গোলটি দিলেন লিওনেল মেসি স্বয়ং। জাল থেকে বল বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও, সেকেন্ডের মধ্যে খেলা ঘোরালেন। চোখের নিমেষে কী হয়ে গেল বুঝতেও পারেননি ফ্রান্সের গোলকিপার হুগো লোরিস। যতক্ষণে বুঝলেন, ততক্ষণে খেলা শেষ! টাইব্রেকারের দরুণও মসৃণ গোল দিলেন মেসি। টিপ করলেন গোলপোস্টের মাঝামাঝি জায়গায়। এদিন তিনি মোট তিনটি গোল দিয়েছেন ফ্রান্সকে। প্রতিটি গোলই ছিল রাজকীয় অন্দাজে।
এদিন এমবাপে পরপর দু’টি গোল দেওয়ার পরেও কিন্তু মেসির ঠোঁটের কোনের হাসিটা মিলিয়ে যায়নি। ধৈর্য্য ধরে রেখেছিলেন। এক মিনিটের জন্যও লক্ষ্যচ্যুত হননি। মনে মনে যেন জানতেন শেষ রাতে বাজি মারবেন তিনি এবং তার দল। ফ্রান্সের নয়া ফুটবল সুপারস্টারের তৃতীয় গোলের পরেও সকলের চোখ যায় শুধুমাত্র মেসির দিকে। তখনও মুচকি হাসছেন তিনি। ফিফা বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে শান্ত কায়দায় সতীর্থদের চালনা করতে দেখা গেল মেসিকে। প্রতি পদক্ষেপে বুঝিয়ে দিলেন, ১৮ বছরের অভিজ্ঞতার দাম আছে বৈকি! কাতারের মাটিতে জীবনের সেরা খেলাটি খেললেন তিনি এবং জিতলেন ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২। ইতিহাসের পাতাতে স্মরণীয় থাকবে এই দিনটি। বিশ্ববাসী কোনোদিন ভুলতে পারবেনা ১৮ই ডিসেম্বর ২০২২ -এর এই স্মরণীয় ম্যাচটি। সেই সঙ্গে বলা যায় ফ্রান্সের নয়া ফুটবল সুপারস্টার এমবাপ্পেকেও মনে রাখবে সারা বিশ্ব।
বিশ্বকাপ জেতার পর তিনি জানান তাঁর অবিশ্বাস্য লাগছে। এমনটা যে সত্যি হয়েছে সেটা তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না। প্রত্যেক ফুটবলারের স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে খেলার এবং বিশ্বকাপ জেতার। বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি হাতে নিয়ে মেসি বলেন আরও বলেন, “এভাবে শেষ করতে পেরে দারুণ লাগছে। যা কিছু আজ পর্যন্ত অর্জন করেছি, তার জন্যে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। শুধু বিশ্বকাপটাই আমার কাছে ছিল না। এ বার সেটাও চলে এসেছে। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম। অবশেষে সেই স্বপ্নটা পূরণ হল। আমরা অনেক কষ্ট, যন্ত্রণা পেয়েছি। তবে অবশেষে আমরা বিশ্বকাপ জিততে পেরেছি। আমরা এ বার দেখতে চাই, আর্জেন্টিনায় কেমন সেলিব্রেশন হবে।”
চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই মেসি জানিয়ে দিয়েছিলেন এই বিশ্বকাপটি তার জীবনের শেষ বিশ্বকাপ। অর্থাৎ সুযোগ একটাই। সারা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল লিওনেল মেসির দিকে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছিল। বিশ্বকাপ হাতে তুলে নিয়ে মেসি দেখিয়ে দিয়েছেন কেন তিনি বিশ্বসেরা ফুটবলার। কাতারের লুসেইল স্টেডিয়ামের আকাশ তখন নীল-সাদা রঙের মেঘে আচ্ছন্ন। ভাষ্যকারের মন্তব্য প্রকট হয়ে বাজছে মেসি ভক্তদের কানে। আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীতে মুখরিত গোটা স্টেডিয়াম। হাসিমুখে গোল্ডেন বল নিতে উঠে বিশ্বকাপকে চুমু খেলেন লিওনেল মেসি। দৃশ্যটি ছিল দেখার মতো, মুহূর্তের মধ্যে ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়া আলোকিত করেছিল। এরপর ‘কুল অ্যান্ড ক্যাজুয়াল’ কায়দায় পরের জনকে জায়গা করে দিলেন। এমবাপে সহ ফ্রান্সের গোটা টিমকে বরণ করা হল। একে একে মেসির সতীর্থদেরও মেডেল পরানো হল। তারপর এল আর্জেন্টিনার জার্সি নম্বর ১০-এর পালা। অর্জিত মেডেল পরে বিশ্বকাপ নিলেন হাসিমুখে। কাপ নিয়ে সোজা দৌঁড়লেন টিমমেটদের দিকে। সতীর্থদের মাঝামাঝি গিয়ে উঁচিয়ে ধরলেন ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২। এই দৃশ্যটি দেখে চোখ ভিজল গোটা বিশ্বের।
One Comment