lifestyle

একটু কিছু ভুল দেখলেই কী আপনি আপনার সন্তানকে মারধর করেন? সাবধান! মস্ত বড়ো ভুল করছেন

বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলার আগে অন্তত একশো বার ভাবুন

হাইলাইটস:

•বাচ্চাদের মারধর করবেন না

•এর ফলে ভবিষ্যতে তাদের সমস্যা হয়

•মারধরের পরিবর্তে বিকল্প পথ খুঁজে বের করুন

আজকের শিশুরাই হল আগামী দিনে দেশের ভবিষ্যৎ। বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না। তাদের ঘিরেই তো সমস্ত পরিকল্পনা, সব স্বপ্ন। কিন্তু এই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলা হল বাবা-মায়ের কাছে চ্যালেঞ্জ। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন কর্তব্য। সবসময় মা-বাবারা চান তাদের ছেলে মেয়েরা যেন তাদের মুখ উজ্জ্বল করে। আর এই চাওয়াতে তো কোনো ভুল নেই। কিন্তু যদি প্রতিযোগিতামূলক চিন্তা ভাবনার মধ্যে পরে যান বাবা-মারা তবে বিষয়টি মুশকিল। কারণ এর ফলেই বাচ্চারা ভুল করলে তাদের মারধর করা হয়। আবার দুষ্টুমি করলেও ছোট্ট শিশুটিকে মারধর করা হয়।

শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাদের কোনো অবস্থাতেই গায়ে হাত তোলা উচিত নয়। অন্যদের সামনে তাদের বকাবকি করাও উচিত নয়। তাদেরকে সব-সময় বুঝিয়ে বলতে হবে। আদর করে বুঝিয়ে বললে শিশুরা তা বুঝতে পারে। কোনোভাবেই শিশুদের মারধর করা সমীচীন নয়। এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের ভয়ের সৃষ্টি হয়। যার ফলে তারা অনেক কিছু করতেই ভয় পায়। যা তার স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। শিশুদের বকাবকি না করে যদি তাদের বারবার করে বোঝানো যায়, তবে তারা তা ঠিকই বুঝতে পারে। বেশিরভাগ সময়ই তারা বাবা-মায়ের কথা শোনে। কিন্তু বকাবকি অথবা মারধরের পর বেশিরভাগ শিশুর মধ্যে এক ধরনের জেদ চেপে বসে। তখন হয়ত ক্ষণিকের জন্য তারা ওই কাজ করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু বাবা-মায়ের অগোচরে সে ওই একই কাজ আবারও করতে থাকে।

বাচ্চাদের গায়ে হাত তুললে কী কী সমস্যা হতে পারে দেখে নিন:

১. বাচ্চা ভুল করলে যদি তার গায়ে হাত তোলেন তবে সে মিথ্যে কথা বলতে শুরু করে। হয়তো আপনার শিশু কোনও ভুল কাজ করেছে। সে জানে, আপনাকে সত্যি কথা বললেই আপনি তাকে মারধর করবেন। তাই মার খাওয়ার ভয়ে সে মিথ্যার আশ্রয় নেবে। পরে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

২. বিশেষজ্ঞের মতে, বাচ্চাদের মার-ধর করলে তারা খুব ভিরু হয়ে যায়। অবচেতন মনে এই কষ্টের স্মৃতি বার বার ঘুরে ফিরে আসতে পারে। আবার কারোর ক্ষেত্রে জেদ বেড়ে যায়। বাবা-মায়েরা যদি বাচ্চাকে আঘাত করে, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহা বাড়তে শুরু করে।

৩. বড় হয়ে সেও অন্যকে আঘাত করতে পারে। এমনটা নয় যে বাচ্চা সব সময় জেনে-বুঝেই আঘাত করবে। কারও কারও ক্ষেত্রে তো বড় হওয়ার পরেও এমন মানসিকতা থেকে যেতে পারে। তাই বুঝতেই পারছেন বাচ্চাকে মারলে তার একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে, যা উপেক্ষা করার নয়।

৪. গত ১০-২০ বছরের মধ্যে অনেক গবেষণা করা হয়েছে শিশু মনোবিজ্ঞান নিয়ে। এই গবেষণা এবং পরীক্ষার ফল স্বরূপ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও জানা গিয়েছে। সন্তানদের মারধর করা কিন্তু তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রচন্ড চাপ ফেলে। এখনকার দিনের শিশুরা অনেক বুদ্ধিমান। তারা মা-বাবার হাতে মার খাওয়া একদমই ভালো চোখে নেয় না। বেশি শাসন তাদের মা-বাবার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এতে সন্তানের সাথে মা-বাবার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে।

৫. চাকরিতে কঠিন পরিশ্রমের পর বাড়ি আসার পর শিশুরা জেদ করলে তাদের খুব বকাঝকা করেন অভিভাবকরা। ফলে তারা একাকিত্বে ভোগে। আর এর প্রভাব পরে ছোট্ট শিশুটির ব্রেনে। শিশুদের সময় দেওয়া কিন্তু খুবই জরুরি। শিশুরা একাকিত্বে ভুগলে তাদের মধ্যে একটা ধারণা আসে যে তাদের মা বাবা তাদের সাথে নেই এবং তাদের সব কিছু একাই করতে হবে।

তাহলে এর বিকল্প পথ কী?

অবশ্যই মারধরের বিকল্প পথ আছে। অনুশাসনের বিকল্প রূপ আছে। তার জন্য শিশুকে প্রহার করার প্রয়োজন নেই। আপনার শিশু হয়তো কোনও ভুল করেছে, তখন তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে সে ভুল করেছে। এই কাজ যেন আর সে না করে। তিন-চার বছর সময় থেকেই এই শিক্ষা শুরু করতে হবে। প্রথমে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। সন্তানদের ভালো এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য শেখানো উচিত। তারপর তাদের নিজেকে নির্ণয় করতে দেওয়া উচিত যে তারা কোন পথ বেছে নিতে চায়। কিন্তু সবসময় যদি বাবা মা-বাবার ইচ্ছাগুলি বকাবকি করে চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে শিশুরা নিজেদের নির্ণয় করার গুরুত্ব বুঝবে না।

শিশুদের ব্রেন পুরোপুরি বিকশিত না হলেও তারা কিন্তু তাদের মা-বাবার স্নেহ বুঝতে পারে। আজকালকার ব্যস্ত জীবনে অনেকেই সন্তানদের একা ছেড়ে দিয়ে কাজে চলে যান। এইভাবে শিশুরা একাকিত্বে ভোগে। তার ফলে শিশুরা ক্ষিপ্ত এবং ঘ্যান ঘ্যানে হয়ে ওঠে। তার সামনে আপনারা যেমন ভাবে নিজেকে প্রকাশ করবেন, সেও তাই শিখবে। সে যদি আপনাকে সব সময় ভুল কাজের পর তর্ক করতে দেখে, সেও কিন্তু তাই শিখবে। শিশুদের মধ্যে ছোট থেকেই খারাপ ব্যবহার করার অভ্যাস থাকে না। সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যা দেখে, তাই শেখে। তাই আপনিও সেই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। বাবা-মার ধৈর্য সব সমস্যার সমাধান করে দেবে।

এইরকম সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button