আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩: আপনার কন্যার যদি প্রথম ঋতুস্রাব শুরু হয় তবে একজন মা হিসাবে আপনার ঠিক কী করা উচিত?
তবে একজন মা হিসাবে আপনার দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়
হাইলাইটস:
•প্রতিবছর ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় বিশ্বজুড়ে
•মা এবং মেয়ের মধ্যে থাকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
•মেয়ের প্রথম ঋতুস্রাবে মা হিসাবে আপনার সবসময় তার পাশে থাকা উচিত
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩: প্রতিবছর ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয় সারা বিশ্বজুড়ে। বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। সেই তালিকাতে রয়েছে আমাদের দেশ ভারতও। একজন শিশুকন্যা থেকে তরুণী হয়ে ওঠা এবং তরুণী থেকে মা কিংবা সাধারণ এক মহিলা থেকে পেশাগত জীবনে অসাধারণ হয়ে ওঠা নিয়ে প্রতিটি মহিলার জীবনেই কিছু না কিছু লড়াইয়ের কাহিনি থাকে। সেই লড়াইকেই কুর্নিশ জানানোর জন্যই প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। দিনটি লিঙ্গ সমতা, প্রজননের অধিকার, নারীদের উপর হিংসা ও নির্যাতন, নারীর সমান অধিকার ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বলা যায় যে, নারীরা দুর্বল নন, তারাও যে এই সমাজের অংশ, তা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। তবে কোথাও যেন একটা ছেদ রয়ে গিয়েছে। রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনীতি সমস্ত জায়গায় আজ মেয়েরা সাফল্য অর্জন করলেও কন্যাভ্রূণ হত্যা চলছে আজকের দিনেও।
১৯০৯ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথম নারী দিবস পালন করা হয়। নারী শ্রমিকদের প্রতি শদ্ধা দেখিয়ে এই দিন উদযাপন শুরু হয়। ১৯১৭ সাল থেকে এই দিনটি রাশিয়াতেও উদযাপন শুরু হয়। তবে পরে রাশিয়াতেই দিনটি পালিত হতে শুরু হয় ৮ই মার্চ থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ই মার্চ দিনটিকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রদের নারী অধিকার ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য জাতিসংঘ দিবস হিসাবে ৮ই মার্চকে ঘোষণা করার আহ্বান জানায়। তারপর থেকেই প্রতিবছর ৮ই মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ব্যাপকভাবে পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস (IWD) ২০২৩-এর থিম ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই বছরের থিম হল ‘DigitALL: লিঙ্গ সমতার জন্য উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি’। সমস্ত ইভেন্ট, প্রচার, এবং প্রোগ্রাম এই থিমের উপর ফোকাস করা হবে।
তবে নারী দিবসের দিন নারীদের অধিকার নিয়ে যতই বড়াই করা হোক না কেন, আমাদের প্রকাশ্য সমাজে মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে কোনও কথা এখনও বলা যায় না ঠিক ভাবে। বর্তমান যুগে শহরের মানুষরা আধুনিক হলেও গ্রামের মানুষরা ঋতুস্রাব নিয়ে বলতে পারেন না প্রকাশ্যে। তার সাথেই দেখা যায় ঋতুস্রাব নিয়ে অসচেতনতা। কিন্তু মাসিক নিয়ে প্ৰতিটি মেয়েরই সচেতন হওয়া উচিত। আপনার কিশোরী কন্যার যদি প্রথম ঋতুস্রাব হয় তবে মেয়ের পাশে আপনাকেই থাকতে হবে। কারণ মাসিক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা কম। মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ অনেক মেয়ের জন্যই খুব কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। তাই এই নিয়ে তাকে সচেতন করার দায়িত্ব পুরোটাই আপনার। আপনার মেয়েও একমাত্র আপনার সাথেই এই বিষয়ে খোলামেলা আলাচনা করতে পারবে। তার পাশাপাশি কিশোরী মেয়ের স্বাস্থ্য ও মনের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে।
মা হিসেবে আপনার কী করা উচিত?
মেয়ের মাসিক শুরু হয়ে গেছে মানেই যে সে বড় হয়ে গেছে, এমনটা নাও হতে পারে। মাসিকের জন্য কোনও সঠিক বয়স নেই, তবে মাসিকের বয়স কমে যাওয়া একটি সর্বজনীন প্রবণতা বলে মনে হয়। আগে এটি ছিল ১৪-১৬ বছর অবধি ছিল, কিন্তু মেয়েদের আর্থ-সামাজিক স্তরে এটি ১২-২৩ বছরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার তার থেকেও অল্প বয়সে অনেকে মেন্সট্রুয়েশন সার্কেলের মধ্যে পরে যাচ্ছে। প্রারম্ভিক মাসিকের আর্থ-সামাজিক, মানসিক এবং স্বাস্থ্যগত ফলাফল রয়েছে। এটি ক্যান্সার, হৃদরোগের মতো রোগের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে।
মেয়ের প্রথম মেন্সট্রুয়েশন সার্কেল শুরু হলেও সে সবার প্রথমে আসবে মায়ের কাছেই। কারণ প্রথমটা সে বুঝতে পারবে না। হঠাৎ কেন এমন হল সে সম্পর্কে জানতে চাইবে আপনার থেকে। আপনি তাকে পরিষ্কার করে বিষয়টি বুঝতে বলুন। একজন নারী হিসাবে মাসিকের গুরুত্ব কী, এইসব নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন। এই সময় মেয়েদের মুড সুইং যেহেতু হয়, তাই শরীরের পাশাপাশি তার মনেরও খেয়াল রাখতে হবে। তাকে বেশি করে সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান। এই সময় মেয়েকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে একদমই ভুলবেন না।
মাসিকের সময় স্বাস্থ্যবিধি একটি মহিলার জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনিবার্য অংশ। মাসিকের সময় হাইজিন বজায় রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরি। প্রতি ৪ ঘণ্টা অন্তর স্যানিটারি প্যাড বদল করার পরামর্শ দিতে হবে মেয়েকে। এই সময় বিশেষ করে মেয়েকে তার পোশাকের দিকেও নজর রাখতে হবে। যাতে কোনওভাবে গোপনঙ্গে ইনফেকশন ছড়িয়ে না পড়ে। আর এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে আপনাকেই। পিরিয়ডের প্রথম দিকে রক্তপাত সেই ভাবে হয়না। তবে, যদি দেখেন অন্যরকমের কিছু হচ্ছে, তবে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে মেয়েকে নিয়ে যাবেন।
আবার অনেকের মাসিক চলাকালীন বাইরের পরিবেশে সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হয়, তাই মা হিসেবে আপনি তার পাশে থাকুন। তাকে মনের দিক থেকে শক্ত করুন। চেনা পৃথিবীটা যদি তার অচেনা লাগতে শুরু করে তবে কিন্তু মুশকিল। আপনাকেই বোঝাতে হবে তাকে কীভাবে প্রত্যেকে নারী এইরকম মাসিকের কষ্টদায়ক ব্যথা-যন্ত্রনা নিয়েই নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বেশিরভাগ চিকিৎসকদের মতে, যদি মেয়েদের ১৪ বছর বয়সের মধ্যে মাসিক শুরু না হয় তবে আমাদের চিন্তা করা উচিত এবং আরও পরীক্ষার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। যদি মেয়েদের ৮ বছর বয়সের আগে পিরিয়ড হয় তবে এটি প্রাথমিক মাসিক এবং একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। যদি কোনও মেয়ে ৬ বছর বয়সের আগে তার পিরিয়ড শুরু করে, তাহলে এটা অবশ্যই উদ্বেগজনক এবং মূল্যায়ন করা উচিত। তাছাড়া, এমন অনেক কারণ রয়েছে যা প্রথম পিরিয়ডের বয়সকে প্রভাবিত করে। মায়েদের মাসিকের বয়স তাদের মেয়েদের মাসিকের বয়সের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেসব মেয়ের ওজন বেশি তাদের পিরিয়ড কম ওজনের মেয়েদের চেয়ে আগে শুরু হয়। যে মেয়েরা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে, কম জাঙ্ক ফুড খায় তারা ব্যায়াম করে না তাদের তুলনায় তাদের পিরিয়ড একটু পরে শুরু হয়।
এইরকম স্বাস্থ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।