lifestyle

অবসাদ বা বিষণ্ণতা ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে? আর এর লক্ষণগুলিই বা কী কী?

বিষণ্নতা হল মানসিক স্বাস্থ্যজনিত একটি ব্যাধি

হাইলাইটস:

•বিষণ্নতা একটি মানসিক ব্যাধি

•বিষণ্নতা মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়

•বিষণ্নতার লক্ষণগুলি আগে থেকে জেনে সতর্ক হওয়া উচিত

এখনকার দিনে অবসাদ বা বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন মানুষ ঘরে ঘরে পেয়ে যাবেন। যে কোনও মানুষের জীবনে যে কোনও সময় থাবা বসাতে পারে অবসাদ বা বিষণ্ণতা। ক্যান্সার যেভাবে শরীরের ক্ষতি করে ঠিক একইভাবে বিষণ্ণতাও মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটায়। কারণ এটি ধীরে ধীরে জীবনকে গ্রাস করে নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে বড় সংকটের তৈরি করতে যাচ্ছে এই বিষণ্ণতা। গবেষক ও চিকিৎসকরা মনে করেন, সাধারণভাবে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন তার জীবদ্দশায় কখনও না কখনও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা হতে পারেন। আবার বিষণ্ণতা চেপে রাখতে শুরু করলে একদিন মানসিক অসুখের চেহারা নিতে পারে। আমাদের জীবনে কখন কোন ঘটনা অবসাদের দিকে ঠেলে দেবে, তা কিন্তু বোঝা মুশকিল।

বিষণ্ণতা আসলে কী?

বিষণ্ণতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ শুরুতেই এর প্রতি যথাযথ দৃষ্টি না দিলে এ থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে অবসাদ বা বিষণ্ণতার পিছনে দায়ী তার কেরিয়ার। আবার কারও প্রেমজনিত সমস্যা অথবা পরিবারের চাপ। তবে বিষণ্ণতা বলতে অনেকে মন খারাপকে বুঝে থাকেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মন খারাপ দু-চার দিন পর্যন্ত থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি দেখেন যে, সেই মনখারাপ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তবে দেরি না করে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করুন। এমনকি বিষণ্ণতা মানুষের মৃত্যুহারকে প্রভাবিত করে। শতকরা ১০-১৫ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ে এই বিষণ্ণতার কারণেই।

বিষণ্ণতা লক্ষণগুলি কী কী?

১. সহজেই বিরক্ত হয়ে যাওয়া:

অনেকেই ভাবেন, বিষণ্ণতা মানে অত্যন্ত মন খারাপ থাকা। কখনও কখনও বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন কেউ আশাহীনতা ও দুঃখ বোধ না করে অত্যন্ত রাগ ও বিরক্তি অনুভব করতে পারেন। নিজের বা পরিচিত কারও বিরক্তিবোধ যদি দিন দিন বাড়তেই থাকে তবে তা অবহেলা করবেন না। নিজের ক্ষেত্রে যদি এমনটা হয় তবে নিজের অধৈর্য স্বভাব, স্ট্রেস আর কাজের চাপকে দোষারোপ করবেন না। কিছুটা সময় দিন এবং ভেবে দেখুন আপনি ডিপ্রেশনে বা বিষণ্ণতায় ভুগছেন কিনা। যদি হয়, তবে মনোবিদের পরামর্শ নিন। আর পরিচিত কারও এমন হলে তাকে ভুল না বুঝে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করুন।

২. তুচ্ছ কারণে অপরাধবোধ:

জীবনের সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করা কোনও সুস্থ ব্যক্তির অভ্যাস হতে পারে না। যদি ছোটখাট প্রতিটি ঘটনা অথবা কোনও দুর্ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী করতে থাকেন তবে বুঝবেন আপনি হয়ত বিষন্নতার কবলে পড়েছেন। অনেক বিষণ্ণতায় আক্রান্তকারী রোগী আবার নিজেকে অযোগ্য ভাবেন। নিজেকে নিজেই বিচার করুন। নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলুন। যদি সেই কথোপকথনে নিজের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ও সমালোচনাপ্রবন হন, তবে সেটি হয়ত বিষণ্ণতার লক্ষণ। সতর্ক হন ও মনোবিদের সাহায্য নিন।

৩. ঘুম না হওয়া বা অতিরিক্ত ঘুম:

এক বা দুই রাত ঘুম ঠিকঠাক না হলে তা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ঘুমহীনতায় ভুগলে সেটি নিয়ে আপনাকে সতর্ক হতেই হবে। বিশেষ করে সারাদিন ক্লান্ত থাকার পরেও যদি রাতে ঘুম না আসে তবে তা বিষণ্ণতার লক্ষণ হতে পারে।

এদিকে বিষণ্ণতায় ভুগলে যেমন ঘুমের সমস্যা হতে পারে, তেমনি অতিরিক্ত ঘুমও পেতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না, আবার রাতে খুব দ্রুত ঘুম চলে আসে। এমনকি পর্যাপ্ত ঘুমের পরও দিনের বেলায় কয়েকবার ঘুম পায়। আসল কথা আপনার ঘুমের অভ্যাস হঠাৎ করে বদলে গেলে এবং সেটা সহজে ঠিক না হলে সেটির জন্য দায়ী কারণগুলি খুঁজে করে করার চেষ্টা করুন, তবেই সমাধান সম্ভব।

৪. মনোযোগে সমস্যা:

যদি অনেকদিন ধরে এমন হয় যে, আপনি কোনও কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছেন না বা কিছু করতে গেলে আপনার মন শূন্য হয়ে যাচ্ছে তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সতর্ক হন। একইসঙ্গে বিষণ্ণতায় আক্রান্তকারীরা অনেকটা ভুলোমনা হন। অনেকসময় জরুরি সব জিনিসপত্র কোথায় রেখেছেন তা মনে করতে পারেন না বা ভুলভাল জায়গায় রেখে দেন।

৫. ​আগ্রহহীন হয়ে পড়া:

এমনটা হওয়া বিষণ্ণতাজনিত ব্যাধির খুবই সাধারণ একটি লক্ষণ। কারও সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগবে না। সব সময় একা থাকতে ইচ্ছা করবে। অন্ধকার ঘরে সারাক্ষণ একা থাকতে ইচ্ছা করবে। প্রসঙ্গত, বিষণ্ণতার শিকার হলে অনেকেই আবার খাবার খাওয়াও কমে যায়। কেউ কেউ আবার অবসাদের শিকার হয়ে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণেও খাবার খান।

পরিশেষে বলা যায়, নিজের অথবা পরিবারের কারও মধ্যে যদি উপরিউক্ত লক্ষণগুলি দেখেন, তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

এইরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button