Exclusive Interview | Dr. Sujoy Chakravarty: এমন কোনও কাজ আমাদের দ্বারা যাতে না হয় যেখানে আমাদের দিদির বা মুখ্যমন্ত্রীর কোনও অসম্মান হোক: ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী
Exclusive Interview | Dr. Sujoy Chakravarty: ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন হাওড়া পৌরনিগমের মুখ্য প্রশাসক ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী
হাইলাইটস:
- শহরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত রুখতে হাওড়া পৌরসভা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?
- মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অনুগামী হিসেবে জনগণকে কী বার্তা দেবেন?
- এছাড়াও ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিলেন ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী
Exclusive Interview | Dr. Sujoy Chakravarty: ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার এক বিশেষ সাক্ষাৎকার পর্ব নিয়ে আমরা হাজির হয়েছিলাম হাওড়া পৌরনিগমের মুখ্য প্রশাসক তথা প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুজয় চক্রবর্তীর কার্যালয়, হাওড়া পৌরনিগমের সদর দফতরে। ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকরে ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী জানালেন, শহরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত রুখতে হাওড়া পৌরনিগম বর্তমানে কী কী উদ্যোগ নিচ্ছে এবং আগামীদিনেও কী কী উদ্যোগ নিতে চলেছে। একই সাথে তিনি জানালেন, ডেঙ্গি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, একাধিক বৈঠক করেছেন জেলা নেতৃত্বের সাথে। এমনকি রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পৌর বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও ইতিমধ্যে এই বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। অর্থাৎ হাওড়া পৌরনিগমের মুখ্য প্রশাসকের বক্তব্য থেকে এটি পরিষ্কার যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন জটিল সমস্যার মোকাবিলা করতে সরকারের সমস্ত জনপ্রতিনিধিরা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে চলেছেন। এর পাশাপাশি চিকিৎসক হিসাবে নীরোগ জীবনযাপন করতে একজন মানুষের কী কী করণীয় সেই পরামর্শও ডাক্তারবাবু দিলেন। দেখে নেওয়া যাক, ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার তরফে হাওড়া পৌরসভার মুখ্য প্রশাসক তথা প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুজয় চক্রবর্তীকে কী কী প্রশ্ন করা হল এবং তাঁর উত্তরে তিনি কী কী বললেন –
প্রশ্ন: চিকিৎসক নাকি পৌরসভার মুখ্য প্রশাসক কোনটি তাঁর কাছে বেশি স্বাচ্ছন্দের?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আমাদের জানালেন, “স্বাচ্ছন্দের বলতে দুটিই হল অসুখের চিকিৎসা, প্রথমটা যখন শিশুদের দেখছি তখন শিশু-রোগের চিকিৎসা করা আর যখন এই চেয়ারে রয়েছি (পৌরসভার মুখ্য প্রশাসক পদে) তখন হাওড়া শহরের যে বিভিন্ন অসুখ আছে তার চিকিৎসা করা। কার্যত এই দুটি কাজ একই। তাই এই দুটি কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখেই চলছি।”
এই দুটি গুরু দায়িত্ব কীভাবে সামঞ্জস্য রেখে সুদক্ষতার সাথে পালন করছেন?
সুজয়বাবু বললেন, “এক্ষেত্রে সময়কে কৌশলের সাথে কাজে লাগানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নিজের পেশার চাপ রয়েছে, একই সাথে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাদের যে বোর্ডকে আশীর্বাদ করেছেন সেখানে আমাদের উপর এক বড় দায়িত্ব থাকে যে, এমন কোনও কাজ যাতে আমাদের দ্বারা না হয় যার ফলে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও অসম্মান হোক। এখানে দুটি কাজ একসাথে চালানোর ব্যক্তিগতভাবে আমার জায়গা টাইম ম্যানেজমেন্ট।”
শহরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত রুখতে হাওড়া পৌরসভা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?
পৌরসভার মুখ্য প্রশাসক জানালেন, “হাওড়া পৌরনিগমের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফেও প্রচুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই বিষয়ে বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি পুর দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই বিষয়ে আমাদের সাথে একাধিক বৈঠক করেছেন। এছাড়াও পৌরনিগমের প্রতিনিধিরা নিয়মিত সমস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং এলাকাগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছেন। প্রায় ১৬ লক্ষ গাপ্পি মাছ আমরা শহরজুড়ে বিভিন্ন নালা-নর্দমার ছেড়েছি যেগুলো মশার লার্ভাকে খেয়ে নেয় এবং এই ধরণের মশার বাড়বাড়ন্ত আটকায়।” এর সাথে তিনি আরও জানালেন, “পৌরসভার পাশাপাশি শহরের সাধারণ মানুষকেও ডেঙ্গি মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে।”
দীর্ঘদিন হাওড়া পৌরসভার নির্বাচন না হওয়ায় পৌরসভার কার্যনির্বাহে কী কোনওরকম সমস্যা হচ্ছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গ টেনে এনে বললেন, “প্রথমত হাওড়া পৌরসভার নির্বাচন ২০২১-এর ডিসেম্বরে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেই সময় তৎকালীন রাজ্যপাল প্রস্তাবে সম্মতি দিলে তাহলে এতদিনে হাওড়ায় একটা নির্বাচিত বোর্ড হত। কিন্তু হাওড়াবাসীর প্রতি এই ক্ষমাহীন অপরাধ তিনি কেন করলেন তার উত্তর আমার জানা নেই। কিন্তু একথা আমি নিশ্চিত জানাচ্ছি, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেই অনুযায়ী হাওড়া পৌরসভার অন্তর্গত সমস্ত মানুষকে আমরা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
পৌরসভা নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে দলের ফলাফলের বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং নির্দেশে হাওড়ার মানুষের পাশে আমরা সদা-সর্বদা থাকার চেষ্টা করছি। হাওড়ার সমস্ত বিধায়করাও আমাদের প্রতি মুহূর্তে সহযোগিতা করে চলেছেন।” এরপর তিনি ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে তৃণমূলের ব্যাপক জয়ের প্রসঙ্গ টেনে এনে বললেন, “দিদির নেতৃত্বে যেভাবে হাওড়াতেও কাজ হচ্ছে তাতে আমি নিশ্চিত হাওড়ার মানুষ আমাদের দু-হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন।”
ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি হাওড়া শাখার সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পিছনে কারণ কী?
সুজয় বাবু এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “বর্তমানে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাকে আরও বড় পরিসরে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই এই দুটি দায়িত্ব একসাথে পালন করা এবং তার পাশাপাশি আমার জীবিকা, এই গুলো একসাথে আমার পক্ষে চালানো মুশকিল হয়ে পড়ছিল। আর আমি কোন দায়িত্ব নিয়ে নিষ্ক্রিয় ভাবে থাকতে চাই না। এটা আমার প্রিন্সিপালের বাইরে। যেহেতু আমি রেড ক্রসে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছি না তাই এটাই আমার সেই দায়িত্ব থেকে সরে আসার কারণ, এছাড়া আর কোনো কারণ নেই। তবে এখনও আমি রেড ক্রসের শিশু হাসপাতাল তথা সমগ্র রেড ক্রসের সমস্ত ভালো-মন্দের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে যুক্ত আছি।
স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর অন্তর্গত মহিলাদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য হাওড়া পৌরনিগম কতটা উদ্যোগী?
হাওড়া পৌরনিগমের মুখ্য প্রশাসক স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর বিষয়ে পৌরনিগমের ভূমিকা সম্পর্কে জানান, “এখানের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচুর সেল্ফ হেল্প গ্রুপ রয়েছে। আমাদের পৌরসভায় সেল্ফ হেল্প গ্রুপের একটি দফতরও রয়েছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন সরকারি স্কুলগুলিতে বাচ্চাদের জামা দেওয়া হচ্ছে। এই কাজে স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা যুক্ত আছেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ‘মা’ ক্যান্টিন রয়েছে, সেখানেও স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা দায়িত্বে আছেন। এই ভাবে বিভিন্ন কাজে সেল্প হেল্প গ্রপের মহিলাদের যুক্ত করে আমরা তাঁদের স্ব-নির্ভর করার চেষ্টা করছি।”
একজন চিকিৎসক হিসেবে সুস্থ-সবল জীবনযাপনের জন্য সাধারণ মানুষকে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে কয়েকটি সাধারণ বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দেন,
১. নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রয়োজন
২. পরিমিত খাওয়া-দাওয়া এবং সময়ে ঘুমোনো দরকার
৩. প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দিনের কাজের চাপ কমানো অর্থাৎ স্ট্রেস রিলিফ করাটা ভীষণ জরুরি এবং এই স্ট্রেস কমানোর উপায়টা তাঁদের খুঁজে নেওয়া উচিত।
৪. প্রত্যেক মানুষের একটা হবি থাকা উচিত। সেটা যে কোনও হবি হতে পারে। কারও গাছ লাগানো শখ হতে পারে, কারও আবার গান করা কিংবা কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো শখ হতে পারে। কিন্তু একটা হবি থাকলে মানুষ আরও উন্নত জীবনযাপন করতে পারবেন।
৫. ধূমপান কিংবা মদ্যপানের মতো নেশাগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা কী হতে পারে?
ডাক্তারবাবু জানান, “ডেঙ্গি হলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এমনটা নয়, বাড়িতে থেকেই এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে হবে, প্রচুর ফ্লুইডস অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমানে জল খেতে হবে। পাশাপাশি রক্তে প্লেটলেট এবং প্যাকড সেল ভলিউমের উপর বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। এরই সাথে একজন চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাঁর পরামর্শ নিন।”
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসেবে জনগনকে কী বার্তা দেবেন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসেবে ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী জনগনের উদ্দেশ্যে বার্তা দিতে গিয়ে বললেন, “রাজ্যের মানুষের জন্য দিদি একাধিক প্রকল্প করেছেন। এর আগে এত প্রকল্প করা তো দূরের কথা কেউ ভাবেননি। আমরা হাওড়াবাসী হিসেবে দিদির কাছে চিরকৃতজ্ঞ কারণ দিদি নবান্ন তৈরী করে এই শহরকে গোটা পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাপিটালে পরিণত করেছেন। হাওড়াবাসীর জলের সমস্যা মেটাতে দিদি ৪০০ কোটি টাকার উপর দিয়েছেন। সালকিয়ায় ২৮০ কোটি টাকা খরচ করে একটি নতুন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। আমি একজন হাওড়াবাসী হিসেবে মানুষের কাছে আবেদন করব, দিদি যেভাবে ‘মা’-এর মতো স্নেহ দিয়ে গোটা রাজ্যকে আগলে রেখেছেন, ঠিক সেই ভাবে আমারও যদি দিদিকে আগলে রাখি তাহলে পশ্চিমবঙ্গকে দিদি একটা অন্য জায়গায় নিয়ে চলে যাবেন। এটাই আমার নিবেদন হাওড়া তথা গোটা রাজ্যবাসীর কাছে।”
এই রকম আরও এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।