Heat Stroke: প্রবল গরমে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে, ফলে এর লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায়গুলি জেনে রাখা উচিত
গরম পড়ার সাথে সাথে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি ক্রমশ দাপট দেখাতে শুরু করেছে
হাইলাইটস:
•প্রবল গরমে থাকে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা
•হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলি আগে থেকে জেনে রাখা উচিত
•এমনকি হিট স্ট্রোকের প্রতিকারগুলি জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
Heat Stroke: বিগত কয়েকদিন ধীরেই শহর কলকাতার তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। চৈত্র মাসে শেষ লগ্নেই এই অবস্থা। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, এবারে উষ্ণতম পয়লা বৈশাখ দেখতে চলেছে শহরবাসী। কিন্তু কাজের সূত্রের যে মানুষকে রাস্তাঘাটে বেরোতেই হয়। এই অসহ্যকর গরম থেকে কবে যে সাধারণ মানুষ মুক্তি পাবে তা কেউ জানে না। গরম পড়ার সাথে সাথে একাধিক অসুখ শরীরের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। ডিহাইড্রেশনের পাশাপাশি দুর্বলতা, শরীরে ব্যথা, চোখে জ্বালাপোড়া এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সাথে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হিট স্ট্রোকের (Heat Stroke) সমস্যা। এটি একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী সমস্যা।
হিট স্ট্রোক কী?
এই মারাত্মক গরমে একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী সমস্যার নাম হল হিট স্ট্রোক (Heat Stroke)। এটি হল এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া। হাইপার হচ্ছে অধিক মাত্রা, আর থার্মিয়া মানে তাপ। শরীরে অধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই বলা হয় হিট স্ট্রোক। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়, একেই হিট স্ট্রোক বলে।
যখন শরীরে তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায় তখন হৃদস্পদনও খুব বেড়ে যায়। রক্ত পাম্প করার জন্য হার্টকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। শরীরের উপরি ভাগে ঘাম তৈরি হয়। ঘাম আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখে। শরীর থেকে পর্যাপ্ত ঘাম না বেরোলে তৈরি হয় মারাত্মক পরিস্থিতি। আর তখনই ঘটে যেতে পারে হিট স্ট্রোকের মতো মারাত্মক প্রাণঘাতী ঘটনা।
হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়?
শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় প্রতিটি মানুষই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। তীব্র গরমেই হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। যারা এই গরমের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে কাঠফাটা রোদে অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন বা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়া কোনও ব্যক্তি এই গরমে বাড়ির বাইরে থাকে তবে তাদের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এছাড়া যারা এই গরমে মধ্যেও শরীরচর্চা চালিয়ে যান অর্থাৎ জিম করেন তাদেরও এই সমস্যা হতে পারে। আবার কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে বিষণ্নতার ওষুধ এবং মানসিক রোগের ওষুধ। তাই চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, এই গরমে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করতে এবং শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের বাড়ির বাইরে যেতে দেবেন না ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষ খেয়াল রাখুন।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলি কী কী?
•শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই খুব বেড়ে যায়, এমনকি তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যেতে পারে।
•হিট স্ট্রোকের আরেকটি বড় লক্ষণ হল বমি বমি ভাব। এই সময় সারা শরীর হঠাৎ করে যেন গুলিয়ে ওঠে।
•অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
•হিট স্ট্রোক আক্রান্ত হলে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করে।
•অনেক ক্ষেত্রে গায়ের চামড়া লাল, শুকনো অথবা খসখসে হয়ে যায়।
•শরীরে প্রচুর ঘাম হয় এবং দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস শুরু হয়।
•এমনকি হার্টরেট বেড়ে যায় এবং খিঁচুনিও হতে পারে।
এই লক্ষণগুলির মধ্যে একটিও দেখা দিলে সচেতন হন এবং সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হিট স্ট্রোকের তাৎক্ষণিক প্রতিকার:
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত রোদ থেকে ছায়ায় সরিয়ে নিতে হবে এবং তার জামাকাপড় যতটা সম্ভব ঢিলে ঢালা দিতে হবে। এবার তার চোখে-মুখে-ঘাড়ে বরফ বা ঠান্ডা জল দিন। এবং সেই ব্যক্তিকে বেশি করে জল পান করান। পারলে ফলের রসও পান করাতে পারেন। এতেই তার শরীরের তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে শুরু করবে। এবার রোগীটি একটু স্টেবল হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।এইটুকু করতে পারলে হয়তো তার প্রাণটি বেঁচে যাবে।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়গুলি কী কী?
•এই গরমে হালকা বিশেষ করে সুতির আরামদায়ক জামাকাপড় পরতে হবে।
•রোদে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
•অতিরিক্ত জল পান করতে হবে। নজর রাখবে যেন ইউরিনের রঙ হলুদ বা গাঢ় রঙের না হয়।
•সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত প্রয়োজন হলে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।
•বাড়ির বাইরে বেরোলো পুরো শরীর ঢেকে যাবে এমন জামা অথবা ছাতা, টুপি এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
•কাকভোরে বা বিকেলে যোগব্যায়াম অথবা এক্সারসাইজ করুন। যোগব্যায়াম হার্টের ফাংশনকে ঠিক রাখে।
•গরমের মরশুমে দিনে দু’বার স্নান করুন যাতে আপনার শরীর শীতলতা পায়।
•বাড়ির শিশু এবং বয়স্কদের বাড়ির বাইরে বেরোতে দেবেন না।
•প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সহজ পাচ্য খাবার, তরল খাবার এবং ফলের রস রাখবেন।
•বিশেষ করে চা, কফি জাতীয় পানীয় এবং মশলা এবং এবং চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
•ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
এইরকম স্বাস্থ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কিত প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।