বড়োদের মতো শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে
শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে
যতদিন যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে, বড়োদের মতো টাইপ-২ ডায়াবেটিস হচ্ছে শিশুদেরও। এই ধরনের ডায়াবেটিসে ইনসুলিন ক্ষরণ না-কমলেও কোষস্তরে তা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের জন্যই রক্তের শর্করা কোষস্তরে শোষিত হয় না, রক্তেই ঘোরাফেরা করে। ফলে বেড়ে যায় ব্লাড সুগার। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মূলত স্থূলত্ব এবং জীবনশৈলীর সমস্যা-সহ অন্য কয়েকটি কারণে আজকাল শিশুরাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগতে শুরু করেছে। করোনার সময়ে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে আরও বেশি সংখ্যক শিশু ওবেসিটির শিকার হয়েছে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার নজিরও বেড়ে গিয়েছে।
বর্তমানে শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার কৈশোর গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে অন্তত তিন গুণ। সন্তানের বয়স ১০ বছর পেরোলেই প্রতি বছর একবার অন্তত রক্তপরীক্ষা করে সুগার দেখে নেওয়া জরুরি।
শিশুদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ:
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি সবসময় সহজে ধরা পড়ে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগটি ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে, ফলে লক্ষণগুলি সনাক্ত করা কঠিন করে তোলে। অনেকেই কোনও উপসর্গ অনুভব করে না।
আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে আপনার সন্তানের ডায়াবেটিস আছে, তাহলে এই ছয়টি উপসর্গের দিকে নজর রাখুন:
১. অতিরিক্ত ক্লান্তি: যদি আপনার শিশুকে অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত বা ঘুমন্ত মনে হয়, রক্তে শর্করার পরিবর্তনগুলি তাদের শক্তির মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।
২. ঘন ঘন প্রস্রাব: রক্ত প্রবাহে অত্যধিক শর্করার মাত্রা প্রস্রাবে অত্যধিক চিনির সৃষ্টি হয়। এটি আপনার শিশুকে ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্য ছুটে যেতে বাধ্য করে।
৩. অতিরিক্ত তৃষ্ণা: যেসব শিশুর অতিরিক্ত পিপাসা আছে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হতে পারে।
৪. ক্ষুধা বৃদ্ধি: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের দেহের কোষে জ্বালানি সরবরাহ করার জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে না। খাদ্য শক্তির পরবর্তী সর্বোত্তম উৎস হয়ে ওঠে, তাই শিশুরা আরও ঘন ঘন ক্ষুধা অনুভব করতে পারে। এই অবস্থা পলিফেজিয়া বা হাইপারফেজিয়া নামে পরিচিত।
৫. ঘা নিরাময় ধীরগতিতে হয়: ঘা বা সংক্রমণ যেগুলি নিরাময় হতে সময় লাগে তা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।
৬. কালো ত্বক: ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে ত্বক কালো হতে পারে, সাধারণত বগলে এবং ঘাড়ে। যদি আপনার সন্তানের টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকে, তবে আপনি কালো ত্বকের জায়গাগুলি লক্ষ্য করতে পারেন। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যানস।
শৈশব-কৈশোরে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ:
•অতিরিক্ত ভাত-রুটি-মিষ্টিজাতীয় খাবারের বদলে মেনুতে বাড়াতে হবে ডাল-মাছ-মাংস-ডিম-শাকসব্জি-ফল।
•গরু-মোষ-ছাগলের দুধ খেলে তা চিনি ছাড়া খেতে হবে।
•দিনে অন্তত একঘণ্টা ব্যায়াম, খেলাধুলো বা শারীরিক কসরত করতেই হবে।
•বাইরের খাবার খাওয়া যাবে ন’মাসে ছ’মাসে, চকোলেটও বেশি দেওয়া যাবে না।
•পাস্তা অথবা নুডলস খেলে তাতে সবজি, সয়াবিন, ডিম, মাংস, চিংড়ি মাছের পরিমান বেশি থাকবে।
•’রিস্ক ফ্যাক্টর’ থাকলে ১০ বছরের পর থেকে আপনার সন্তানের বছরে একবার রক্তপরীক্ষা করাবেন।