একটি সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের জন্য ৪টি প্রোবায়োটিক খাবার!
ভালো ব্যাকটেরিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য সেরা প্রোবায়োটিক খাবারগুলি হল :
আমাদের শরীর দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া বহন করে, একটি হল ভালো ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যটি হল খারাপ ব্যাকটেরিয়া। প্রোবায়োটিক খাবার অত্যন্ত উপকারী এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ভালো কার্য সম্পাদন করতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিকগুলি হজমের উন্নতি করে এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এই প্রোবায়োটিক থাকা শরীরের জন্য খুবই ভালো কারণ এটি ভালো ব্যাকটেরিয়াকে পুনরায় ফিরে পেতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া আছে, যাদের প্রোবায়োটিক শ্রেণীর অধীনে আবদ্ধ করা যায়। প্রধানত দুটি প্রধান প্রকার ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়, এগুলি হল ল্যাকটোব্যাসিলাস এবং বিফিডোব্যাকটেরিয়াম ব্যাকটেরিয়া। প্রোবায়োটিকগুলিও উচ্চমানের খামির(ইস্ট) থেকে তৈরি হয়। “Saccharomyces Boulardii” হল খামিরের সাধারণ রূপ যা প্রোবায়োটিকে পাওয়া যায়।
তাই, আজ আমরা শীর্ষ প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার নিয়ে আলোচনা করব, যা ভালো ব্যাকটেরিয়া পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে।
প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার হিসেবে সবুজ জলপাই :
জলপাই হল একপ্রকার সুস্বাদু ফলবিশেষ যা মূলত পুষ্টিতে ভরপুর। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনের জন্য এগুলিকে একটি পাত্রে রাখা হয় লবণ এবং জলের মিশ্রণ সহযোগে। এটি তিক্ততা দূর করে এবং সেবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া তাদের গাঁজন প্রক্রিয়া ঘটায়। এটি একটি ভালো ব্যাকটেরিয়া, যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। জলপাই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত। দোকানে জলপাই সহজেই পাওয়া যায়। আপনি এর পুষ্টির মান বাড়াতে স্যালাডের সাথে যোগ করে মিড-ডে মিল স্ন্যাক হিসেবে খেতে পারেন।
প্রোবায়োটিকযুক্ত খাদ্য হিসাবে কেফির :
কেফির হল একটি গাঁজনযুক্ত বেরি পানীয়। এটি স্বাস্থ্যকর প্রোবায়োটিকগুলির মধ্যে সবচেয়ে উচ্চমানের, যার একটি দুর্দান্ত থেরাপিউটিক মান রয়েছে। কেফিরের দানা গরু বা ছাগলের দুধের সাথে মিশিয়ে দিলে ভালো কাজ করে। এটি পুরো শরীরের কোষকে নিরাময় করে এবং আপনার অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এইভাবে, এটি আপনাকে ঋতুকালীন বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে বাঁচায়। আবার কেফির ডিটক্সিফিকেশনেও সাহায্য করে। এটি ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-কে 2, ফোলেট, থায়ামিন, ভিটামিন বি 12 এবং আরও অনেক কিছুর প্রধান উৎস।
প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার হিসাবে দই :
দই সাধারণত অনেকের বাড়িতেই তৈরী হয় যা সাশ্রয়ী এবং সহজে খাওয়া যায়। দই হল প্রোবায়োটিকে ভরপুর কারণ এতে সেই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যা আপনার অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। প্রতিদিন দই খাওয়া আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি সরবরাহ করে। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি উভয়ই আপনার হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। শক্তিশালী হাড় আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের প্রকোপ কমিয়ে দিতে পারে।
দৈনিক এক কাপ দই আমাদের প্রয়োজনীয় পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি সরবরাহ করে। এটি আপনার ত্বককে সুস্থ এবং মসৃণ রাখে। তাই প্রতিদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার পর এক বাটি দই খান অথবা দুপুরের খাবারের সময়ও ভাত ও রুটির সঙ্গে খেতে পারেন। এটি আমাদের খাবারের স্বাদও বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।
দ্রষ্টব্য: রাতে দই এড়িয়ে চলুন কারণ এটি সর্দি-কাশির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার হিসাবে বাটার মিল্ক :
ভারতে “ছাঁছ” নামে পরিচিত বাটার মিল্ক একটি চমৎকার প্রোবায়োটিকের উৎস। এর সবচেয়ে ভালো দিক হল আমরা এটি ঘরেই তৈরি করতে পারি। এটি ক্যালসিয়ামের বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যারা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু এবং দুধ পান করতে পারে না তাদের জন্য।
বাটারমিল্কে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি কোলেস্টেরল কমাতে পারে এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে দুপুরের খাবারের সময় বাটার মিল্ক থাকা অন্তত গুরুত্বপূর্ণ।
এগুলি হল কিছু সেরা প্রোবায়োটিক খাবারের উদাহরণ। এই সবই বাজারে পাওয়া যায় বা বাড়িতে সহজেই তৈরি করা যায়। স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন।
মনে রাখবেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনাকে অন্যান্য জিনিসও খেতে হবে। আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য খেতে হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে নিয়মিত খাবার গ্রহণ করা উচিত।
একইভাবে, আপনার ক্রিয়াকলাপগুলিতে হাঁটা, আরোহণ, যোগব্যায়ামসহ আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একটি সুস্থ এবং ইতিবাচক মানসিক অবস্থা আপনার স্বাস্থ্যকে নিখুঁত রাখবে।
শরীরের যত্ন নিন এবং সুস্থভাবে জীবনযাপন করুন।