Panchayat Election 2023: বিধানসভার অলিন্দে পাশাপাশি নওশাদ-শওকত, ভাঙড়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করানোর সুর দুই ‘ভাই’-এর গলায়
Panchayat Election 2023: সোমবার বিধানসভায় নওশাদ সিদ্দিকি ও শওকত মোল্লা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভাঙড়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর কথা বলেন সাংবাদিকদের
হাইলাইটস:
• সোমবার বিধানসভায় পাশাপাশি দেখা গেল দুই বিরোধী নওশাদ সিদ্দিকি ও শওকত মোল্লাকে
• দু-জনেই একে অপরকে ‘দাদা’ ও ‘ভাই’ বলে সম্মোধন করেন গতকাল
• ভাঙড়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করানোর কথা বললেন দুই দলের নেতা
Panchayat Election 2023: সোমবার বিধানসভায় পাশাপাশি দেখা গেলো নওশাদ-শওকতকে। এ যেন এক নজিরবিহীন ছবি বিধানসভার অলিন্দে। দুই নেতার মুখেই শোনা গেলো শান্তির বাণী। একে অপরকে ‘ভাই’, ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করলেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা দিলেন, ভোট হবে শান্তিপূর্ণভাবেই।
বিগত দুবছরে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে নানা খবর। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে আইএসএফ ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনার পর একে অপরকে আক্রমণ করেছিলেন তাঁরা। ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেছিলেন, ‘‘নওশাদ সমাজবিরোধী। নওশাদ যবে থেকে ভাঙড়ে এসেছে অশান্তি করে যাচ্ছে।’’ আর পাল্টা উত্তরে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বলেছিলেন, ‘‘শওকত মোল্লা গুন্ডাবাহিনী নিয়ে ক্যানিং থেকে ভাঙড়ে এসেছেন।’’ বোমা, গুলি, রক্তের রাজনীতিতে এখন নাম তুলেছে যেই ভাঙড়, সোমবার সেই ভাঙড়েরই দুই নেতাকে একেবারে অন্য মেজাজে দেখা গেলো। সৌজন্যতা দেখিয়ে দুই নেতাই বললেন, “আমরা বিধায়ক, সহকর্মী। এতে অসুবিধা কোথায়?”
সোমবার ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি কমিটির বৈঠকে যোগদান করতে বিধানসভায় এসেছিলেন। তার আগে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়েছিলেন নওশাদ। সেই মুহূর্তেই বিধানসভায় আসেন তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা, বৈঠক থাকার কারণে চলেই যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাই শওকতকে অনুরোধ করেন নওশাদের পাশে দাঁড়াতে। এরপর পাশাপাশি দাঁড়িয়েই একে অপরকে ‘দাদা’ ও ‘ভাই’ সম্বোধন করেন নওশাদ সিদ্দিকি ও শওকত মোল্লা। সাংবাদিকরা কোনও প্রশ্ন করার আগেই নওশাদ সিদ্দিকি বলেন, “ক্যামেরার সামনেই বলছি আমি, ১ নম্বরটায় আমাকে একটু কম ডিস্টার্ব করবেন।” আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে হাসছেন সওকত মোল্লা।
বয়সে নবীন নওশাদ সিদ্দিকি ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লাকে দাদা বলেই সম্মোধন করেন। এর ব্যতিক্রম হয়নি সোমবারও। আর শওকত বাবুও তখন বিরোধী নওশাদ সিদ্দিকিকে ভাই বলেই ডাকলেন। এরপরই নওশাদ সিদ্দিকি বলেন, “উনি আমার থেকে বেশি সময়ের বিধায়ক। আশা করব দাদা আমাকে গাইড করবেন। নির্বাচনী ক্ষেত্রে এলাকায় যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়।” নওশাদের দাবি শুনে কথা দিলেন সওকত মোল্লাও। তিনি বললেন, “নিশ্চিতভাবে নির্বাচন হবে গণতান্ত্রিক পথেই। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই।” দুই দলের নেতার গলাতেই তখন শান্তিস্থাপনের দৃঢ় সঙ্কল্প। আইএসএফ বিধায়ক বললেন, ‘‘শওকতদা আমার দাদার মতো, শওকতদাকে পাশে নিয়েই আমি শান্তি ফেরাতে চাই।’’ প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই ভাঙড়ে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে নবান্ন পৌঁছে গিয়েছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। কিন্তু তাঁর সাথে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়নি।
এরপরই কৌশলী সুরে নওশাদ সিদ্দিকি বললেন, “বড় দাদাই জানেন। বাইরে থেকে কোথায় কী লোক আসছে। পুলিশ থেকে শুরু করে সব কিছু আছে ওনাদের। আমাদের কেউ গন্ডগোল করে থাকলে আমি নিশ্চয়ই দেখে নেবে। বড় দাদা চাইলে ছোট ভাইকে গাইড করে শান্তিপূর্ণ ভোট করাতেই পারেন। যথেষ্ট শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট দেন ভাঙড়ের মানুষ। মানুষ যা রায় দেবেন মাথা পেতে নেব।” নওশাদের সিদ্দিকির এমন ‘বাইরে থেকে লোক আনার’ অভিযোগের জবাবে তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা বললেন, যথেষ্ট কর্মী সমর্থক রয়েছে তাঁদের দলে। তাই তাঁদের বাইরে থেকে লোক আনার দরকারই নেই।
সোমবার বিধানসভার অলিন্দে দাড়িয়ে ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা এবং ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির গলায় শোনা যায় একই সুর, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট হবে। তার জন্য সকলে আপ্রাণ চেষ্টাও করবেন বলে জানান দুই দলের নেতা। সাংবাদিকদের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসেই সওকত বাবু প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “নওশাদ ভাই সৌজন্য দেখালে আমিও সৌজন্য দেখাবই।” বাংলার রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, বিধানসভায় মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার কারণেই দুই দলের নেতা সৌজন্যবশত এমন কথা বলেছেন। কিন্তু যাঁরা ভাঙড়ের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন একেবারেই শান্তি ফিরবে না মুখের কথায়। তাই গতকাল বিধানসভায় শাসক-বিরোধী সৌজন্য দেখা গেলেও, বাস্তবের মাটিতে তার কতটা প্রতিফলন দেখা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ, এই শওকতক মোল্লাকেই পূর্বে ফুরফুরা শরিফে গিয়ে ‘চোর চোর’ ধ্বনি শুনে ফিরতে হয়েছিল। সেই সময় কিন্তু ‘ভাই’ নওশাদ সৌজন্য দেখিয়ে পাশে দাঁড়াননি তাঁর ‘দাদা’ শওকত মোল্লার।
এইরকম পঞ্চায়েত নির্বাচন বিষয়ক আরও প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।