TMC no more a national party: বড়ো ধাক্কা খেল তৃণমূল কংগ্রেস! লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে জাতীয় দলের খেতাব হারাতে হল মমতার দলকে
তার সাথেই তৃণমূল হারাতে পারে জাতীয় দলের সুযোগ সুবিধা
হাইলাইটস:
•জাতীয় দলের তকমা হারালো তৃণমূল কংগ্রেস
•আম আদমি পার্টি পেল জাতীয় দলের স্বীকৃতি
•জাতীয় দলের স্বীকৃতি হারানোর ফলে তৃণমূল অনেক সুযোগ সুবিধাও হারাতে চলেছে
কলকাতা: বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার সাথে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) পেল বিরাট বড়ো ধাক্কা। ১৯৯৮ সালে তৈরি হওয়া দলটি ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মনিপুর প্রদেশে রাজ্য পর্যায়ের দল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেয়েছিল। কংগ্রেস থেকে পৃথক হয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) প্রতিষ্ঠা করেন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। তিনিই দলের চেয়ারপার্সন। জাতীয় দলের স্বীকৃতি পাওয়ার সাত বছর পর সেই স্বীকৃতি খোয়াতে চলেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC no more a national party)।
Election Commission withdraws national party status of Trinamool Congress, CPI
— Press Trust of India (@PTI_News) April 10, 2023
বহুদিন ধরে তৃণমূলের জাতীয় দলের স্বীকৃতি নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপিও এই নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি। এমনকি বাংলার বাইরের রাজ্যগুলিতে তৃণমূলের খারাপ ফলাফলের পর তৃণমূলের জাতীয় দলের স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তারপরই শুরু হয় নানা বিতর্ক। এমনকি প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন বিরোধী দলনেতা এই বলেও আক্রমণ করেন রাজ্যের শাসকদল।
তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি জাতীয় দলের তকমা হারিয়েছে শরদ পাওয়ারের এনসিপি এবং সিপিআই। সংবাদসংস্থার এএনআই-এর খবর অনুযায়ী, গতকালই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ এর আগে ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন ৩টি পার্টিকে জাতীয় দলের তকমা ইস্যুতে নোটিস পাঠায়। সেই নোটিসে প্রশ্ন করা হয় যে, কেন তাদের জাতীয় দলের তকমা কেড়ে নেওয়া হবে না, তা জানানো হোক, গত লোকসভা ভোটে তাদের ফলাফলের নিরিখে। এরপরই মূলত এই উদ্যোগ শুরু হয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের ফল অত্যন্ত খারাপ হয়। তাদের আসন সংখ্যা কমে। সেই জায়গা পদ্মফুল ফোটাতে শুরু করে দিয়েছিল বিজেপি। তারপর গোয়া এবং ত্রিপুরার মতো রাজ্যেও নির্বাচনে লড়ে তেমন কোনও ফল পায়নি তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু মেঘালয় তুলনামূলক ভালোই ফল করে তারা। ৫টি বিধানসভা আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, জাতীয় দল হতে গেলে মূলত তিনটি শর্তের অন্তত একটি পূরণ করতে হয়।
প্রথমত, লোকসভায় অন্তত চারটি রাজ্য থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে।
দ্বিতীয়ত, লোকসভায় ৩টি রাজ্য থেকে অন্তত ১১টি আসন (মোট আসনের ২ শতাংশ) জিততে হবে এবং আগের জেতা আসনের অন্তত চারটি পুনরায় জিততে হবে।
তৃতীয়ত, অন্তত চারটি রাজ্যে ‘আঞ্চলিক দলের’ তকমা পেতে হবে।
এই শর্তগুলি তুলে ধরেই শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন। জাতীয় দলের তকমা যাতে কোনওভাবে খারিজ করা না হয়, তার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দরবারও করেছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের আবেদনে কোনওরকম সাড়া না দিয়ে জাতীয় দলের তকমাটিই কেড়ে নিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ অবশ্য এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
Election Commission of India recognises Aam Aadmi Party (AAP) as a national party.
Election Commission of India derecognises CPI and TMC as national parties. pic.twitter.com/9ACJvofqj6
— ANI (@ANI) April 10, 2023
অন্যদিকে জাতীয় দলের মর্যাদা পেল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। গত কয়েকদিন আগেই জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেতে আম আদমি পার্টির তরফে কর্নাটক হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে পাঞ্জাব এবং দিল্লিতে ক্ষমতায় আছে আম আদমি পার্টি। তাছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনেও ৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল তারা। তার সাথে গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তৃতীয় শর্তও পূরণ করতে পড়েছে কেজরিওয়ালের দল।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪টি পেয়েছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটে বাংলার পাশাপাশি ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মণিপুরে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। তারপরই ২০১৬ সালে জাতীয় দলের তকমা পেয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তবে ২০১৯ সালে সেই শর্ত পূরণ করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। জাতীয় দলের মর্যাদা হারানোয় বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও ধারাতে পারে তৃণমূল। সেগুলি হল –
•দলের নাম হিসেবে ‘সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস’ (All India Trinamool Congress) আর লেখা যাবে না। কারণ, দলটি আর সর্বভারতীয় স্বীকৃতি হারিয়েছে।
•কোনও জাতীয় দলের চিহ্নকে দেশের অন্য কোনও রাজ্যে অন্য কোনও দল ব্যবহার করতে পারবে না।
•জাতীয় দলের স্বীকৃতি হারানোর ফলে নির্বাচনের সময় ইভিএম কিংবা ব্যালট পেপারে প্রথম সারিতে নাম থাকবে না তৃণমূলের।
•জাতীয় নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India) ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে আমন্ত্রণ নাও পেতে পারে তৃণমূল।
•নির্বাচনের সময় জাতীয় দল সর্বাধিক ৪০ জন ‘তারকা প্রচারক’ ব্যবহার করতে পারে। যেখানে অন্য দলের ক্ষেত্রে সেই সীমা ২০।
•আবার অন্যদিকে দলীয় দফতর তৈরি করার জন্য সরকারের থেকে জমি বা বাড়ি পায় জাতীয় দলগুলি যা অন্য দল তা পায় না।
এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার টুইট করে বলেছেন, ‘মানুষ জানে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের সরকার চালাচ্ছে তৃণমূল।’ এমনকি সরকার মানুষকে ভরসা দিতে ব্যর্থ বলেও দাবি তাঁর। পশ্চিমবঙ্গেও এই সরকার বেশি দিন নেই বলে টুইটে খোঁচা দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
TMC lost the national party status & will be recognised as a regional party.
Didi’s aspiration to grow TMC find no place as people know TMC runs a most corrupt, full of appeasement & terror govt. Govt’s fall is also certain as people of WB will not tolerate this govt for long.
— Dr. Sukanta Majumdar (@DrSukantaBJP) April 10, 2023
পরিশেষে বলা যায়, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস যদি ভালো ফলাফল করতে পারে তবে পুনরায় তারা নিজেদের হারানো খেতাব ফিরে পেতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক খবর পেতে চোখ রাখুন ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজের বাংলা ওয়েবসাইটে।