Bayron Biswas join TMC: বাম-কংগ্রেস জোটে বড় ধাক্কা! বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক বাইরন এখন তৃণমূলে
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সাগরদিঘির বিধানসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জয়লাভ করেছিলেন।
Bayron Biswas join TMC: বাম-কংগ্রেস জোটের সাগরদিঘি মডেল কার্যত ফেল
হাইলাইটস:
• বাম-কংগ্রেস জোটে এবার বড় ধাক্কা
• তৃণমূলে যোগ দিল বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস
• গতকাল তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় পতাকা তুলে নিলেন
Bayron Biswas join TMC: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সাগরদিঘির বিধানসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। তবে গত ডিসেম্বর মাসে সাগরদিঘির তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুব্রত সাহার মৃত্যুতে খালি হাওয়া ওই আসনে উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবাশিস ব্যানার্জিকে পরাজিত করে গত মার্চ মাসে বিধানসভা উপনির্বাচনে জেতেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। জয়ের তিনমাসের মধ্যেই তিনি যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে।
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে হারের পর প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্যের শাসকদল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনৈতিক মহলে। তবে এবার সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ক্ষততে অবশেষে মলম দিতে পারল তৃণমূল। গতকাল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা ছিল। সেই সভা মঞ্চেই উপস্থিত হন বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস। তারপর তিনি অভিষেকের হাত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় পতাকা তুলে নেন। জল্পনা ছিলই তবে, শেষমেশ সাগরদিঘি উপনির্বাচনের তিন মাসের মধ্যেই তৃণমূলেই যোগ দিলেন বায়রন বিশ্বাস।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে একটিও আসন না পেয়ে রাজ্য বিধানসভা ছিল বাম-কংগ্রেস শূন্য। তবে সাগরদিঘি উপনির্বাচন কংগ্রেসকে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাড়তি কিছুটা অক্সিজেন দিলেও আবারও শূন্যতেই নেমে গেল কংগ্রেস। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের জেতা আসন ছিনিয়ে নিয়ে বুক বাজিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দাবি করেছিলেন, এটাই হবে আগামীদিনের বাংলার মডেল। এই বাম-কংগ্রেস জোটের মডেলেই আগামী সমস্ত ভোটে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে। একই কথা শোনা গিয়েছিল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের গলাতেও।
অন্যদিকে বায়রন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরেও বায়রনের দলবদলের জল্পনার পালে হাওয়া লেগেছিল৷ সেই সময় বায়রনকে ‘তৃণমূলেরই লোক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়ছিল আত্মবিশ্বাস৷ বায়রনের দলবদলের জল্পনা সম্পূর্ণ খারিজ করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন ‘বায়রন আমাদের আয়রন’। তবে এবার তিন মাসেই ভেঙে গেল ‘সাগরদিঘি মডেল’। ফলে অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, সাগরদিঘির হার মেনে নিতে পারছিল না তৃণমূল। জনগণের রায়কে পদাঘাত করলেন বায়রন।
তবে এর পাল্টা বায়রন বিশ্বাসের দাবি, ‘আমি যে জিতেছি তাতে কংগ্রেসের কোনও অবদান ছিল না। আমি তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। টিকিট পাইনি বলে কংগ্রেসে যাই। বরাবরই আমি তৃণমূলের লোক। আমি যদি বিশ্বাসঘাতকতা করি, সেই জবাব দেবেন জনগণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনে তৃণমূলের টিকিটে আরও বেশি ভোটে জিতব। বিজেপিকে রুখতে গেলে একমাত্র মঞ্চ তৃণমূল।’ সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, পদত্যাগ করে কি আপনি নির্বাচনে ফের লড়বেন? তখন বায়রনের জবাব, ‘যদি দরকার পড়ে করব। এটা কংগ্রেসের ভোট নয়। ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেছি, তাই মানুষ জিতিয়েছে। আবার ভোটে দাঁড়ালে জিতব।’ কিন্তু কেন এই দলবদল? প্রসঙ্গে সাগরদিঘির বিধায়ক জানিয়েছেন, ‘রাজ্যের উন্নয়নে শামিল হতে, নিজের কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্যই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলাম।’ সুতরাং বলাই যায়, বায়রনের তৃণমূলে যোগদান পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বাম-কংগ্রেস সমঝোতার পক্ষে যে একটা বড় ধাক্কা, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এইদিকে বায়রন যে ঘাসফুলের টিকিট চেয়েছিলেন সেই দাবিতে শিলমোহর দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘বায়রন বিশ্বাস নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে থেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। তৃণমূলের পরিবারেরই ছেলে বায়রন। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি তখন। ভোটের পর একাধিকবার যোগাযোগ করেছিলেন। অসুস্থ ছিলেন। সুস্থ হয়ে আমাকে ফোন করেছিলেন গতকাল। তার পর মুর্শিদাবাদ থেকে ঘাটালে এসে যোগদান করলেন তৃণমূলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জোয়ারে গা ভাসিয়ে বায়রন তৃণমূলে যোগ দিলেন৷ তাঁর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিলাম আমি৷ এরপর তিনি সাগরদিঘি গিয়ে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত শ্রেণির মানুষের হয়ে কাজ করবেন৷ এই আশা রাখি৷’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিরোধীদের খোঁচা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিরোধীদের সাগরদিঘি মডেল ব্যর্থ। তৃণমূলের নিজের কিছু ভুলে সাগরদিঘিতে হার হয়েছিল। এতে বিরোধীদের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু ছিল না। কংগ্রেসের জয়ের পর যারা আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিলেন তাঁরা এবার শোকসভা করুন। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য বায়রন তৃণমূলে যোগ দিলেন।” তবে একথা সত্যি যে, সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে যেভাবে রাজ্যের শাসকদল প্রশ্নের মুখে পড়েছিল এবার বায়রনের তৃণমূলে যোগদান পঞ্চায়েত ভোটের আগে আবারও তৃণমূল কংগ্রেস দিল বাড়তি অক্সিজেন।
এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।