Abhishek Banerjee: অভিষেকের প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেন সাগরদিঘির নবনির্বাচিত বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস
Abhishek Banerjee: বায়রন উত্তরে বললেন, তিনি অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করবেন
হাইলাইটস:
• মুর্শিদাবাদের রানিনগরের জনসভা থেকে নবনির্বাচিত বাইরন বিশ্বাসের উদ্দেশ্যে অভিষেকের বার্তা
• অভিষেকের প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেন বাইরন
• এইদিকে অভিষেক অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে আক্রমণ করতেও ছাড়লেন না
Abhishek Banerjee: তৃণমূলে নবজোয়ার যাত্রা নিয়ে এখন মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। উত্তরবঙ্গ পর্ব শেষ করে নবজোয়ার যাত্রা এখন নবাবের মাটিতে। এই জেলার বেশিরভাগ ভোটার সংখ্যালঘু। ২০১১ সাল থেকে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় অধিকাংশই যায় তৃণমূলের ঝুলিতে। তবে কাঁটা সাগরদিঘি উপনির্বাচন। কারণ এই উপনির্বাচনে তৃণমূলের জেতা আসন ছিনিয়ে নেয় বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। আর সাগরদিঘিতে তৃণমূলের হারের পর প্রথম মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রানিনগরের মাটিতে দাঁড়িয়ে সাগরদিঘির উন্নয়নের পক্ষে নবনির্বাচিত বিধায়ক বাইরনকে পরামর্শ দিলেন অভিষেক।
সাগরদিঘির উপনির্বাচনে হারের পর রাজনৈতিক মহলে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, সংখ্যালঘুরা তাহলে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন? তবে এই কথা মানতে নারাজ ঘাসফুল শিবির। এইদিকে অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্দীপনাকেই হাতিয়ার বানিয়ে সাগরদিঘির ক্ষত মুছতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার মুর্শিদাবাদের রানিনগরের জনসভা থেকে নবনির্বাচিত বাইরন বিশ্বাসের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘সাগরদিঘিতে বাইরন জিতেছেন। আমি তাঁকে বলব, এলাকার উন্নয়ন নিয়ে প্রয়োজন হলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে। আমরা যেখানে জিতেছি সেখানে পরিষেবা দিয়েছি, যেখানে হেরেছি সেখানেও পরিষেবা দিয়েছি। অসুবিধা হলে মুখ্যমন্ত্রীর দরজা খোলা। মুর্শিদাবাদে ২২ আসনের মধ্যে ২০টা জিতেছি। মুর্শিদাবাদেও যেমন সবাই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছে। তেমনি আলিপুরদুয়ারের সবাই তা পাচ্ছে। সেখানে আমরা কোনও আসন জিতিনি। দলমত নির্বিশেষে মুখ্যমন্ত্রী সবার কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেন কংগ্রেস বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস। তিনি বললেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে এই কথা শুনে খুবই ভাল লাগলো। বেশ নিরপেক্ষভাবে উনি ওই কথাটি বললেন।” তিনি আরও বললেন, “মানুষের জন্য উন্নয়নের স্বার্থে অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আগামী ১১ই মে কলকাতায় যাচ্ছি প্রদেশ কংগ্রেসের বৈঠকে। সেখানে অনুমতি পেলে সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব। জানি না, ওনার সাক্ষাৎ পাবো কি না। আমি এখানকার বিধায়ক হয়েছি অনেকদিন হয়ে গেল। কিন্তু এলাকায় উন্নয়নের কাজ শুরু করতে পারিনি। এবার সেই কাজের জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব। সুযোগ পেলে বিধানসভাতেও কথা তুলব। রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে সাগরদিঘির মানুষের স্বার্থ দেখা।”
অভিষেকের বার্তার পর সাগরদিঘির নবনির্বাচিত বিধায়কের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় রাজনৈতিক মহলেও জল্পনা শুরু হয়েছে। আবার দলবদলের প্রশ্ন উঠতেই বাইরনের সাফ জবাব, “দলবদলের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।” তবে রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় ‘সংখ্যালঘু’ বিধায়কের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে এখনই ইতি পড়ছে না। কারণ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, অভিষেক তথা তৃণমূল নিয়ে বাইরনের অবস্থান খানিকটা নরম। অবশ্য এদিন সাগরদিঘির বিধায়ককে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস-বিজেপি আঁতাতের অভিযোগও করেন অভিষেক। তাঁর দাবি, সাগরদিঘিতে কংগ্রেস জিতলেও বিজেপির শক্তি বেড়েছে। কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী ও সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বিজেপিকে নিয়ে চুপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভা মঞ্চ থেকে তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। মুর্শিদাবাদে জনসংযোগ যাত্রায় এসে তিনি সরাসরি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪০টি আসন জেতার মানসিকতা নিয়ে ঝাঁপাতে হবে। মুর্শিদাবাদের তিনটি আসনেই জিততে হবে। কারণ এখানের কংগ্রেস বিজেপির বি টিম। দশকের পর দশক কংগ্রেসকে উজাড় করে দিয়েছে মুর্শিদাবাদ। বাংলার প্রাপ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অধীর রঞ্জন চৌধুরী একটিও চিঠি লিখেছেন দেখাতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।” এরপরই অধীর চৌধুরীও তাঁর ক্ষোভ উগড়ে দিলেন। তিনিও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, ‘মুর্শিদাবাদের তিনটি আসন ইতিমধ্যেই আমরা দখল করে নিয়েছি অভিষেককে জানিয়ে দিলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে স্পষ্ট করে বলছি, মুর্শিদাবাদের একটি আসনও আপনি পাবেন না লিখে রাখুন। আমি ওঁকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলছি, মুখ্যমন্ত্রী আপনি আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ান। অথবা অভিষেককেও দাঁড় করাতে পারেন। যদি তৃণমূলের কাছে অধীর চৌধুরী বহরমপুরে হারে আমি রাজনীতি করা ছেড়ে দেব।”
অন্যদিকে অধীর চৌধুরী বায়রন প্রসঙ্গে বলেছেন, “বাইরন যে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তা একেবারেই রাজনৈতিক সৌজন্য। কিন্তু হঠাৎ বাইরন বিশ্বাসকে নিয়ে খোকাবাবুর মাথায় এসব এল কেন? উন্নয়ন তো গোটা বাংলায় দরকার। তৃণমূলের কাছ থেকে সাগরদিঘি কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলেই কি তা নিয়ে ভাবিত খোকাবাবু! সেটাই আমার প্রশ্ন। কাউকে বিড়ি খাওয়ানোর প্রয়োজন হলে বাইরন বিশ্বাসও বিড়ি দিতে পারে। কোনও অসুবিধে নেই। রাজনৈতিক শিষ্টাচার তো ভালো।’ তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘খোকাবাবু’ বলে কটাক্ষ করলেন। মুর্শিদাবাদের বাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে অভিষেক-অধীর বাকযুদ্ধ যা রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
এইরকম রাজনৈতিক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।