পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা: চার বছর আগের সেই অভিশপ্ত দিনের কথা মনে পড়লে আজও ভারতবাসীর গায়ে কাঁটা দেয়
তারপর পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দেয় ভারত
আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ৭৮টি গাড়িতে ২৫০০ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে কনভয় রওনা হয়েছিল জম্মু থেকে শ্রীনগরের দিকে। গাড়ি চলছিল ন্যাশনাল হাইওয়ে ৪৪ দিয়ে। তারপর আচমকা কনভয়ে ঢুকে পড়ে একটি বাস। বিস্ফোরক বোঝাই ওই বাস মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়। চোখের নিমেষে শহিদ হয়ে যান ভারতের ৪০ জন বীরপুত্র সেনা জওয়ান। ৭৬ তম ব্যাটালিয়ানের ৪০ জন সেনা জওয়ান শহিদ হন, ইতিউতি জ্বলতে থাকে আগুনের শিখা আর কালো ধোঁয়া। ২২ বছরের জঙ্গি আদিল আহমেদ দারও ওই বিস্ফোরণেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। কাশ্মীরের কাকাপোরার এই জঙ্গি বহুদিন ধরেই পাকিস্তানের জইশ-ই-মোহাম্মদ সংগঠনের সদস্য ছিল। ঘটনার পর এই জঙ্গি সংগঠন শিকার করে নিয়েছিল হামলার দায়। সেই রক্তক্ষয় অধ্যায়ের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি দেশবাসী।
পরের দিন অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল যে, MEA পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করেছিল। এতে বলা হয়েছিল যে, জেইএম-এর নেতা মাসুদ আজহারকে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তার সন্ত্রাসী অবকাঠামো পরিচালনা ও সম্প্রসারণের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই ভারতে এবং অন্যত্র হামলা চালানো হয়েছে। পুলওয়ামা হামলায় ভারতের অংশ নেওয়ার দাবি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। চীন দাবি করেছে যে মাসুদ আজহার কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন যে, দোষীদের “খুব ভারী মূল্য” দিতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করার জন্য বিনামূল্যে লাগাম দেওয়া হবে। পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলা হয়েছিল যে, তারা এই ধরনের হামলার আয়োজন করে ভারতকে দুর্বল করতে পারবে না। পুলওয়ামা সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সতর্কতা হিসেবে জম্মুতে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। তার সাথেই সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা হয়েছিল।
এই নৃশংস ঘটনার পর এক মুহূর্তে চুপ করে থাকেনি দিল্লি। সব রাজনৈতিক দলগুলি সর্বসম্মতিক্রমে নিরাপত্তা বাহিনীকে সমর্থন করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করা হয়, পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা আমদানীকৃত সামগ্রীর শুল্ক ২০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় দিল্লি। কূটনৈতিক কৌশলের সঙ্গে সামরিক কৌশলেও শান দেয় ভারত। পুলওয়ামা থেকে অন্তত সাতজনকে আটক করা হয়েছিল জেএম-এর সাথে কথিত সংযোগের অভিযোগে। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানকে দেওয়া মোস্ট ফেভার্ড নেশন তকমা তুলে নেয় ভারত। কূটনৈতিক পথে এই ঘটনার সঙ্গেই বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে শুরু করে দেশ। FATF এর মঞ্চেও সন্ত্রাসে আর্থিক মদত ঘিরে ইসলামাবাদকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে ভারত।
হামলার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। এরপর চলে সামরিক পথে জবাব। পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটের জঙ্গি শিবিরকে গুঁড়িয়ে দেয় ভারতের বায়ুসেনা। তার পাল্টা হামলার চেষ্টায় ভারতের আকাশ সীমায় ঢুকে পড়ে পাক যুদ্ধবিমান। ২৭ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তুঙ্গে ওঠে আতঙ্ক। এদিকে ভারতের আকাশে পাক বিমান দেখেই তাকে পাল্টা যুদ্ধবিমান নিয়ে ধাওয়া করেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। পাকিস্তানে তিনি দুর্ঘটনাবশত অবতরণ করেন। পাকড়াও করা হয় তাঁকে। এরপর দিল্লির ক্রমাগত কূটনৈতিক চাপে শেষে ভারতের বীর উইং কমান্ডারকে ছাড়তে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
এই ঘটনার পর থেকে থেকে ভারত ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে পুলওয়ামা হামলার কারণে একটি “কালো দিন” হিসাবে পালন করে। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি যখন আমাদের টেলিভিশনে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছিল তখন ভারত স্থবির হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানের জইশ-ই-মোহাম্মদ জঙ্গি সংগঠনের এই মর্মান্তিক হামলার ছক আজও মনে পড়লে ভারতবাসীর গায়ে কাঁটা দেয়।