গতকাল ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছা প্রকাশ করেন বাংলার বইমেলা দিল্লিতে করার
গতকাল থেকে পথ চলা শুরু হল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার। সল্টলেকে ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টা বাজিয়ে ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রথম নির্ধারিত জায়গায় বসল বইমেলা। সল্টলেকের করুণাময়ীর সেন্ট্রালপার্কের বইমেলা প্রাঙ্গনই হল বইমেলার জন্য নির্ধারিত স্থান। জনসাধারণের জন্য বইমেলা খুলছে মঙ্গলবার অর্থাৎ আজ থেকে। ১২ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে কলকাতা বইমেলা। পরপর দুবছর অবশ্য কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি ছিল বাংলাদেশ। এ বারও তাদের ৭০টি স্টল থাকছে। ৪৬তম বইমেলার থিম হল স্পেন। থিম কান্ট্রি স্পেনের তরফ থেকে এ দিন বইমেলায় উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অফ সার্ভান্তাসের ডিরেক্টর মারিয়া হোসে গালভের সালভাদোর এবং স্পেনের রাষ্ট্রদূত হোসে মারিয়া রিদাও ডমিনিকা। এর আগে ২০০৬ সালেও বইমেলার থিম কান্ট্রি হিসেবে স্পেন অংশগ্রহণ করেছিল। এই প্রথম এই বইমেলায় অংশ নিচ্ছে থাইল্যান্ড। মোট কুড়িটি দেশ এ বারের বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে । তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, বাংলাদেশ, আর্জেন্টিনা, কিউবা, পানামা, মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, থাইল্যান্ড। মেলা প্রাঙ্গণে ৯৫০টি স্টল থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এ দিন তাঁকে বিশেষ সম্মান জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কলকাতা বইমেলা আক্ষরিক অর্থেই আন্তর্জাতিক বইমেলা ৷ বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যও কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণ করে ৷ এই বইমেলা সবার মন ছুঁয়ে গিয়েছে ৷” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “সারা পৃথিবী আজ বিশ্ব বাংলায় এসে মিলিত হয়েছে।” এইবারের বইমেলায় মুখ্যমন্ত্রীর ৬টি নতুন বই আসছে। নানা কাজকর্মের মধ্যেও তাঁর ১২৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে বলে এ দিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে বেশ কিছু ইংরেজি বইও রয়েছে। পরের বছর বইমেলায় তাঁর আরও ৪-৫টি বই আসবে বলে জানান তিনি৷ তাঁর কথায়, “বই হল লাইফলাইন অফ দ্য ওয়ার্ল্ড।”
বইমেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষকে যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয়, সে জন্য বইমেলার উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে পরিবহন মন্ত্রীকে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বইমেলার জন্য ফুট ওভারব্রিজ করা হয়েছে। তৎপর থাকতে বলা হয়েছে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকেও। তিনি বইমেলার উদ্বোধন করে বলেন, “বই গোটা বিশ্বকে একত্রিত করে। বই এখনও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।” মেলায় আসার জন্য তিনি রাজ্যবাসীর কাছে আমন্ত্রণ জানান।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, তিনি তাঁর সমালোচনা থেকে এখনও শেখেন। তিনি বলেন, তিনি নিতান্তই নগন্য। কিন্তু তারপরেও প্রবল ব্যস্থাতার মধ্যে তাঁর ১২৮টি বই প্রকাশ পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ইংরেজি ও বাংলা বই। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের রাজ্য সরকারের বিশেষ কর্মসূচির কথাও বলেন। তিনি জানিয়ে দেন রাজ্য সরকার রাজ্যের মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে, যারা হারিয়ে গেছে ইতিহাসের পাতা থেকে। কোনও নেতিবাচক দিকে না গিয়ে মহিলাদের ক্ষমতায়নে, দারিদ্র্য দূর করতে এ দিন সবাইকে একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর মতে, বাংলাই হল জাতীয় সংস্কৃতির রাজধানী৷ সেই কারণে গণতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে কণ্ঠ তোলার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন তিনি বলেন, “এখন একটা উঁইপোকা কামড়ালেও তা সংবাদ হিসেবে দেখান হয়। কিন্তু কেউ ভালো বই লেখলে তা জানান হয় না।” এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, রাজনীতিবিদরা কি বই লিখতে পারেন না? এ কথা প্রসঙ্গে তিনি রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগরের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন এখনও বিদ্যাসাগরের লেখা বই আমাদের দরকার।
আগামী দিনে দিল্লিতেও বাংলার বইমেলা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বইবেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে বলেছেন, তিনি চান বাংলা বইমেলা দিল্লিতে হোক। দেশের রাজধানীতে বইমেলার আয়োজন করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেখানে অংশগ্রহণ করবে রাজ্যের সব জেলা। সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতপাতের মানুষ সেখানে অংশ নেবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা সেখানে অন্যান্য দেশকেও আমন্ত্রণ জানাব। তাতে যা লাগবে, যে ব্যবস্থা করতে হবে তা সব আমরাই করে দেব।”