ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলি যিনি মেডিসিনে ৩টি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তারের একটি অনুপ্রেরণামূলক জীবনকাহিনি।
কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর গল্প দেশের কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা। যে সময়ে আমাদের দেশে মেয়েদের লেখাপড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেই সময়ে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী শুধু পড়াশোনাই করেননি, দেশের প্রথম স্নাতক ও চিকিৎসক হয়েছিলেন। কাদম্বিনী গাঙ্গুলি শুধুমাত্র ভারতে নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা ডাক্তার। কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে ডাক্তার হওয়ার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল, সেই সময়ে যখন মেয়েদের শিক্ষাও নিষিদ্ধ ছিল। অনেক খারাপ কথাও শুনতে হয়েছিল তাকে। সমাজ তার পড়াশোনা ও চাকরি নিয়ে কটু কথা বললেও তিনি নির্বিশেষে তার কাজ চালিয়ে গেছেন। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী নিজে শিক্ষা পেয়েছিলেন তাই তিনি সারাজীবন নারী শিক্ষার আওয়াজ তুলে গেছেন।
তার শৈশব এবং শিক্ষার জন্য তার অন্বেষণ কেমন ছিল?
ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ১৮ই জুলাই ১৮৬১ সালে বিহারের ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর বাবার নাম ব্রিজ কিশোর বসু। ১৮৭৮ সালে কাদম্বিনী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম নারী। সতারপর তিনি ১৮৮২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই সময়ে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা যিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর সাথে একই বছরে আরেক ভারতীয় মহিলাও স্নাতক হন। স্নাতক হওয়ার পর, কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ১৮৮৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিগ্রী অর্জন করেন। এইভাবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী এবং আনন্দী গোপাল যোশী ১৮৮৬ সালে একসাথে ডিগ্রী লাভ করেন। এই দুই মহিলাকে ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার হিসাবে স্মরণ করা হয়।
তিনি তার জীবনে অনেক বিধিনিষেধ ভেঙ্গেছেন –
কলেজে পড়ার সময় দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির সাথে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর দেখা হয়। সেই সময় দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির বয়স ছিল ৩৯ বছর এবং কাদম্বিনী গাঙ্গুলির বয়স ২১ বছর। তখন দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী ছিলেন স্ত্রী-হারা একজন পুরুষ। তার পাঁচ সন্তানও ছিল। তা সত্ত্বেও, কাদম্বিনী গাঙ্গুলী দ্বারকানাথ গাঙ্গুলিকে ১২ই জুন ১৮৮৩ সালে বিয়ে করেন। একই সময়ে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীও তিনটি সন্তানের জন্ম দেন। এভাবে চাকরির পাশাপাশি ৮ সন্তানের দেখাশোনা করেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলী।
কীভাবে তিনি নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন এবং লাখ লাখ নারীর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন?
মেডিসিনে ডিগ্রী অর্জনের পর কাদম্বিনী গাঙ্গুলী বিদেশে যান এবং গ্লাসগো এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিসিনে উচ্চশিক্ষা নেন। ভারতে ফিরে আসার পর, কাদম্বিনী গাঙ্গুলী অনুশীলন শুরু করেন এবং সামাজিক আন্দোলনেও অংশ নিতে শুরু করেন। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী নারী শিক্ষা, কয়লা খনির নারী শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি এবং নারী অধিকারের জন্য তার আওয়াজ তুলে ধরেছিলেন।
মহিলা ডাক্তার হওয়ার পরেও কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর সংগ্রাম কমেনি। অনেক সময় কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে কাজের কারণে হাসপাতালে রাত কাটাতে হয়েছিল, যার কারণে সমাজ তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অনেকে তাকে চরিত্রহীন এবং অন্যান্য অবমাননাকর নামে ডাকতেন। একবার ১৮৯৪ সালে নেপালের শাসক দেব শমসের জং বাহাদুর রানার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ততদিনে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। নেপালের শাসকও জানতে পেরেছিলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর চিকিৎসাগত যোগ্যতার কথা। এরপর মায়ের চিকিৎসার জন্য কাদম্বিনী গাঙ্গুলীকে নেপালে ডেকে নেন তিনি। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী নেপালে গিয়ে সফলভাবে নেপালের শাসকের মায়ের চিকিৎসা করেন।
“তার অসাধারণ জীবন সেখানকার অনেক নারীর জন্য অনুপ্রেরণা”
কাদম্বিনী ছিলেন ভারতের প্রথম কর্মজীবী মা। মা, ডাক্তার এবং সমাজকর্মীর ভূমিকায় একসঙ্গে অভিনয় করা তার পক্ষে সহজ ছিল না, তবে তিনি সাধারণ মহিলা ছিলেন না। তিনিই প্রথম মহিলার মধ্যে জীবনের চেতনা জাগিয়েছিলেন। নারী শিক্ষা ও অধিকারের একজন চ্যাম্পিয়ান হিসেবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর কৃতিত্ব কখনোই ভোলা সম্ভব না।