Abhishek Banerjee: হেমতাবাদে মাটির ভাঁড়ে চায়ে চুমুক থেকে নাম না করে শুভেন্দুকে তৃণমূলের লক্ষ্মী বলে কটাক্ষ, এদিন আর কী কী করলেন অভিষেক?
Abhishek Banerjee: অভিষেকের জনসভা ঘিরে সমর্থকদের উদ্দীপনার আর শেষ নেই
হাইলাইটস:
•হেমতাবাদে কালু বর্মনের বাড়িতে মাটির ভাঁড়ে চায়ে চুমুক দিলেন অভিষেক
•রাজবংশী পরিবারের সকলের সাথে কথাও বললেন তিনি
•তারপর সেখান থেকে রায়গঞ্জের সভাতে নাম না করে শুভেন্দুকে তৃণমূলের লক্ষ্মী বলে কটাক্ষ করলেন তিনি
Abhishek Banerjee: আজ বাদে কাল রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ফলে গ্রামবাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করতে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে আনা হয়েছে নয়া কর্মসূচি। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে তৃণমূলে নবজোয়ার। যার নেতৃত্বে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। ২ মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে তিনি কলকাতার বাইরে বিভিন্ন জেলা সফরে কাটাবেন। গত ২৫শে এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছেন তাঁর জনসংযোগ যাত্রা। গতকাল তাঁর জনসংযোগ যাত্রা ছিল উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ, রায়গঞ্জ এবং ইটাহার।
তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচিতে বেরিয়ে অভিষেক হয়ে উঠেছে গ্রামবাংলার ঘরের ছেলে। আমজনতার সঙ্গে মিশে যাওয়ার কোনও সুযোগই ছাড়ছেন না তিনি। কখনও এগিয়ে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, কখনও বা সেলফি তুলতে আসা বালককে জড়িতে ধরছেন আবার কোথাও বিনা নোটিশে ঢুকে পড়ছেন সাধারণ মানুষের ঘরে। কোথাও আবার গাড়ির মাথায় উঠে জনসমুদ্রের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন। এমনকি ময়নাগুড়ির দোমহানিতে স্বপন রাহুত ও রাজু রাহুতের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজও সারেন অভিষেক। এবার জনসংযোগ যাত্রায় বেরিয়ে গতকাল তিনি উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের তেঁতুলতলায় ঢুকে পড়লেন আসবাব কারিগর কালু বর্মনের বাড়িতে।
বঙ্গ বিজেপির তরফে বার বার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে অত্যাচারিত হচ্ছেন রাজবংশীরা। কালু বর্মনের পরিবারও একটি রাজবংশীরা পরিবার। তার বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে তুলসীতলায় প্রণাম করেন অভিষেক৷ তারপর এই মধ্যবিত্ত পরিবারের মাটির বাড়ির নিকানো উঠোনে বসে মাটির ভাঁড়ে থালায় সাজানো চা, অন্য থালায় ঝুরিভাজা, নিমকি-সহ শুকনো খাবার খেলেন তিনি। সত্যি বলতে বেশ তৃপ্তি করেই চায়ে চুমুকও দিলেন তিনি। এই রাজবংশী পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেন তিনি। কালু বাবুর মা নির্মলা বর্মণের পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন অভিষেক৷ তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ গোটা বর্মন পরিবার।
তারপর তিনি সেখান থেকে যান রায়গঞ্জের করণদিঘি হাইস্কুল ময়দানে। সেখানেও তাঁর একটি জনসভা ছিল। আর সেই সভা থেকেই নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি। তিনি বলেন,’ উনি কোনদিনই তৃণমূল লোক ছিলেন না।’ তবে এদিন শুভেন্দু অধিকারীকে নাম না করে তৃণমূলের লক্ষ্মী বলেও কটাক্ষ করলেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘যেদিন থেকে বিজেপিতে গিয়েছে, তার পর থেকেই তৃণমূলের ভালো হচ্ছে। একুশের ভোটের ফলাফলই দেখুন। গতকালের সভা থেকে প্রথমে বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে নেমে আসার সময়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে কিছু বলার জন্য অভিষেককে আবেদন করেন। আর ঠিক তার পরেই নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ অভিষেকের। তিনি বলেন, ‘বিজেপিতে এমনই শনির দশা চলছিল, উনি বিজেপিতে ঢোকাতে রাহু ও কেতু এই দুই দশাও সম্মীলিত হয়েছে।’ অভিষেকের ওই মন্তব্য শুনে উল্লাসে ফেটে পড়ে উপস্থিত আমজনতা। বলা রাখা ভালো, তাঁর বক্তৃতায় কোথাও তিনি শুভেন্দুবাবুর নাম উল্লেখ করেন নি। এমনকি তিনি সভা থেকে কেন্দ্রের মোদি সরকারকেও আক্রমণ করেন।
তিনি আরও বলেন, “তৃণমূলের লড়াই শ্রমিক-কৃষকদের স্বার্থে। নিজের স্বার্থ না দেখে, মানুষের স্বার্থ দেখাই নবজোয়ার। একতার মন্ত্রে বাঁধা কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, সেটাই নবজোয়ার। আমি রাস্তাতেই হাঁটছি, গাড়িতে বসে মানুষের কথা শুনছি। দু’ধারে মানুষ কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে আছে। এটাই জানান দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প এখনও কেউ তৈরি হয়নি।” উল্লেখ্য, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে শুভেন্দু অধিকারীর নিশানায় বার বার থেকেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রতিদিনই প্রায় কোনও না কোনও জনসভা, মিটিং-মিছিল ইত্যাদি থেকে আক্রমণ করেন অভিষেককে। রবিবার অভিষেকের এই নয়া কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘আমি ওকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। কে হরিদাস পাল বন্দ্যোপাধ্যায়? পিসি ছাড়া জিরো।’ কিন্তু অভিষেকের মন্তব্য যে তাৎপর্যপূর্ণ তা মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ দলত্যাগী নেতাদের সাথে বিজেপির প্রবীণ নেতাদের একটা কলহ দেখা দিয়েছিল ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পরে। এখনও অনেক ক্ষেত্রেই দিলীপ ঘোষের সাথে শুভেন্দুর মতের অমিল লক্ষ্য করা যায়। এই সব জিনিসকেই একটু উস্কে দিতে চেয়েছিলেন অভিষেক, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
রায়গঞ্জের পর অভিষেকের ইটাহারের সভাতে মঞ্চে নয়, এদিন ইটাহারে গাড়ির ছাদে উঠে পড়েন তিনি। কারণ চারিদিকে জনসমুদ্র। কাতারে কাতারে মানুষ এসেছেন অভিষেককে একবার চোখের দেখা দেখতে। সুতরাং বলা যায়, তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচি সপ্তম দিনেও সুপারফিট।
এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।