Justice Abhijit Ganguly: সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে সরানো হল
Justice Abhijit Ganguly: গতকাল এমনই রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়
হাইলাইটস:
•গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি টিভি সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে রায় দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত
•বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে সরানো হল নিয়োগ দুর্নীতি মামলার এজলাস থেকে
•এই বিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ও তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন
Justice Abhijit Ganguly: কিছুদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একটি টিভি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে। এই নিয়ে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। বিতর্কের ঝড় উঠেছিল সমগ্র রাজ্যজুড়ে। একজন বিচারপতি হয়ে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে নিয়ে তিনি কী করে কোনও টিভি সাক্ষাৎকার দিতে পারেন এই নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এমনকি এই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টেরও নজর এড়ায়নি। ফলে এবার সুপ্রিম কোর্টও কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly) এজলাস থেকে সরানো হল নিয়োগ সংক্রান্ত দুটি মামলা।
বিগত কয়েক মাস ধরে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলা চলছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। অনেকগুলি মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তদন্তভারও দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তদন্তকারীরা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এই মর্মে তিনি আদালতকে একটি চিঠিও পাঠান। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই দায়ের হওয়া মামলার শুনানিতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।
এই মামলার প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভীও প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচারাধীন বিষয়ে টিভি সাক্ষাৎকার নিয়ে। সেই ইন্টারভিউ-এর ট্রান্সলেশন কপিও জমা দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টে। ফলে গত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, যদি কোনও বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও বিচারপতি সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানির অধিকার হারিয়েছেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের থেকে এই বিষয়ে হলফনামা তলব করেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নথি অনুযায়ী, কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমকে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, কুন্তল ঘোষের চাপ দিয়ে অভিষেকের নাম বলানোর চেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগের মামলা সরানো হবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে। সেই সংক্রান্ত মামলা অন্য কোনও বিচারপতির বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বিবেচনার উপর নির্ভরশীল এই সিদ্ধান্ত। নিয়োগ সংক্রান্ত বাকি মামলাগুলি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় শুনতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করবে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ওপর। অন্যদিকে বলা যায়, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা করেছিলেন সৌমেন নন্দী। সেই মামলাতেই প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই মামলার সঙ্গে পরবর্তীতে আরও কিছু মামলা যুক্ত হয়ে যায়। এদিন সৌমেন নন্দীর করা মামলাই শুনছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার সঙ্গে যুক্ত ছিল কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলা ও পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা।
এদিন সুপ্রিম কোর্টে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা অভিযোগ করেছিলেন, কলকাতা হাইকোর্টে নির্দিষ্ট একটি ধারা রয়েছে। সেখানে ভয় দেখানো হচ্ছে বিচারপতিদের।” তাঁর আরও সংযোজন, কলকাতা হাইকোর্ট বিচারপতিদের এজলাসে ঢুকে চিৎকার করা হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে, স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বাড়ির বাইরে পোস্টার লাগানো হচ্ছে। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “প্রধান বিচারপতি হিসেবে দেখব দেশের কোথাও কোনও বিচারপতি যেন ভয়ের পরিবেশে না থাকেন।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এরপর প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন, “সাক্ষাৎকার যখন আমি দিয়েছি তখন জবাবও দেব।” শুক্রবার এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে ওঠে। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অবশ্য মামলা সরানোর নির্দেশ শুনে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের থেকে তাঁর সাক্ষাৎকারের তর্জমা ও হলফনামা চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের উপরও স্বতঃপ্রণোদিত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। অবশ্য শুক্রবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের শেষ আদেশ শোনার পর কলকাতা হাইকোর্ট ছেড়ে বাইরে এসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, তিনি পালিয়ে যাওয়ার লোক নন। তিনি যত দিন বিচারপতি থাকবেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বেন। যখন অন্য কাজ করবেন, তখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা মেনে চলাই আমার কাজ। আমরা হাই কোর্টের বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট যা বলবে আমরা তা-ই করব।’’ এবার দেখার বিষয় নিয়োগ দুর্নীতি মামলা কোন দিকে মোড় নেয়।
এইরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।