Kolkata Medical College: অগ্নিকাণ্ডের পরে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ায় মোবাইলের আলোয় কিডনির অস্ত্রোপচার করা হল কলকাতা মেডিকেল কলেজে
Kolkata Medical College: হঠাৎই নিভে গিয়েছিল অপারেশন থিয়েটারের আলো
হাইলাইটস:
•গতকাল কলকাতা মেডিকেল কলেজে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়
•অগ্নিকাণ্ডের ফলে বিদ্যুৎহীন হয়ে সুপার স্পেশালিটি ব্লক
•ফলে কিডনির অস্ত্রোপচার করা হয় মোবাইলের আলোয় সাহায্যে
Kolkata Medical College: গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল কলকাতা। কেন কী এমন ঘটল শহর কলকাতা? গতকাল দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ কলকাতা মেডিকেল কলেজের (Kolkata Medical College) সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের দোতলার সার্ভার রুমে শর্টসার্কিটের জন্য আগুন লেগে যায়। চারিদিক কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। একপ্রকার দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন। এই অবস্থায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল গোটা বিল্ডিংটি। ঠিক এই সময় হাওড়ার লিলুয়ার বাসিন্দা বছর ৪৬-এর শোভা দাসের কিডনির অস্ত্রোপচার করা হচ্ছিল অপারেশন থিয়েটারে।
অস্ত্রোপচারটি বেশ জটিলই ছিল। আর অস্ত্রোপচারও তখন মাঝপথে। তাই কোনও ভাবেই অস্ত্রোপচার বন্ধ করা সম্ভব ছিল না। কারণ ততক্ষনে ৬-৭ সেন্টিমিটারের টিউমার মহিলার কিডনির ডানদিক থেকে বার করছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের ইউরোলজির চিকিৎসকরা। আচমকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিপদে পড়ে যান তাঁরা। টিউমারের অবস্থান এমনভাবে ছিল যে প্রচুর রক্তক্ষরণেরও সম্ভাবনা ছিল। এমন অবস্থায় কোনওভাবেই অস্ত্রোপচারকে সেই সময় বন্ধ করা যেত না। তখন আর সিদ্ধান্ত নিয়ে দেরি করেন নি কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। তখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই ওটি রুমে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে জটিল কিডনির অস্ত্রোপচার করলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা।
এ যেন এক সিনেমা দৃশ্য। আমরা ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে আমরা দেখেছি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তিন ছাত্র এক প্রসূতির প্রসব করিয়েছিলেন তাঁদের তৈরি জেনারেটরের আলো ব্যবহার করে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরাও এমনই একটি উদাহরণ স্থাপন করলেন যা কার্যত নজিরবিহীন। এমনকি তাঁরা মোবাইলের আলো অস্ত্রোপচার করে রোগীকে সুস্থও করে তুললেন। ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুনির্মল জানিয়েছেন, তাঁদের রোগীও অস্ত্রোপচারের পর ভালোই আছেন।
এইরকম পরিস্থিতিতে এবং যেভাবে কর্তব্যে অটল থেকে ডাক্তাররা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ইন্দ্রনীল বিশ্বাসও। ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুনির্মল চৌধুরী এবং তাঁর টিম এই জটিল অস্ত্রোপচার করেছেন। এই অস্ত্রোপচারে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. গৌরব কুন্ডু, ডা. শুভম সিনহা, ডা. জগমোহন, ডা. শাহাবাজ, ডা. প্রখর পটেল এবং অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের ডা. অঞ্জনা ঘোষ দস্তিদার এবং ডা. দেবাশিস ঘোষ। অবশ্য এই ঘটনা জানার পরে রোগী কেমন আছেন তা জানতে চেয়ে রিপোর্ট তলব করে স্বাস্থ্য ভবনও।
মেডিকেল কলেজ সূত্রে খবর, হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের সার্ভার রুমে শর্টসার্কিটের জন্য ধোঁয়া বার হতে শুরু করেছিল। তবে বড় কোনও ক্ষতি হওয়ার আগেই পরিস্থিতি সামলে নেওয়া গিয়েছে। খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছিল পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। গোটা বিল্ডিং-এর বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, এদিন এসএসবি বিল্ডিংয়ে ছ’টি অস্ত্রোপোচারের মধ্যে শোভা দাসের কিডনি-সহ টিউমার বাদ দেওয়ার পর সব অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়েছে। রোগীদের কোথাও স্থানান্তরিত না করেই সামলানো গিয়েছে গোটা পরিস্থিতি। ঘটনাটি যখন ঘটে তখন জরুরি বিভাগের একটি সিসিইউতে ৩০ জন রোগী ছিলেন। ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের পর ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে আনা হয় মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে।
এইরকম গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।