lifestyle

Soumitra Chatterjee Films: বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ১০টি বাংলা সিনেমা

তিনি হলেন বাংলা সিনেমা জগতের একজন কিংবদন্তী অভিনেতা

হাইলাইটস:

•বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সিনেমা জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

•২০২০ সালে কলকাতায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন

•তাঁর বিখ্যাত ১০টি বাংলা সিনেমার তালিকা এখানে দেওয়া হল

Soumitra Chatterjee: বাংলা সিনেমা জগতের একজন কিংবদন্তী অভিনেতা হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রথম জীবনে থিয়েটারের সাথে যুক্ত থাকলেও ১৯৫৯ সালে স্বনামধন্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে প্রথম অভিনয় করে বাংলা সিনেমা জগতে পা রাখেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee Films)। এরপর তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এমনকি দেশের বাইরেও তাঁর পরিচয় ‘সত্যজিতের নায়ক’।

১৯৩৫ সালের ১৯শে জানুয়ারি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। অবশেষে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হার মানতে বাধ্য হলেন বাংলা সিনেমা জগতের কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ২০২০ সালের ১৫ই নভেম্বর কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু তাঁর অভিনয় আজীবন মনে রাখবেন সিনেমাপ্রেমী মানুষেরা (Soumitra Chatterjee Films)। এবার দেখে নিন তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় ১০টি বাংলা সিনেমা –

১. অপুর সংসার:

সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অপুর সংসার সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলা সিনেমা জগতে এটিই তাঁর প্রথম সিনেমা। সত্যজিত রায়ের অপরাজিত ছবির অডিশনে সৌমিত্রকে নিতে রাজী হন নি পরিচালক কারণ অপুর চরিত্রের বয়সের হিসেবে সৌমিত্র সেই সময় কিছুটা লম্বা ছিলেন। কিন্তু সত্যজিত রায় তাঁর চেহারা স্মরণে রেখে দিয়েছিলেন। এরপর যখন অপুর সংসার সিনেমা শুরু করেন তিনি তখন সৌমিত্রকে ডেকে নেন মূল চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে। অপুর সংসার সিনেমাটি প্রকাশ হওয়ার পর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সংলাপ ও রসায়ন দর্শকরা সারাজীবন মনে রাখবে।

২. চারুলতা:

সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চারুলতা সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় গল্প ‘নষ্টনীড়’ এর কাহিনীর উপর ভিত্তি করে এর চিত্রনাট্য রচিত হয়েছে। ‘নষ্টনীড়’ গল্পে দেখানো হয়েছে নব্বই দশকের (১৮৭৯) ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী। কিন্তু সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চারুলতা সিনেমাটির সার্থকতা বয়ে আনার জন্য গল্পের কাহিনীতে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া চারুলতা সিনেমাটি ইংরেজিভাষী বিশ্বে সবার কাছে ‘দ্য লনলি ওয়াইফ’ নামে পরিচিত। এই ছবিতে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় দর্শকমহলে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।

৩. দেবী:

সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী ছবিতে অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাছাড়া সেই ছবিতে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, ছবি বিশ্বাস, অনিল চট্টোপাধ্যায়, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ১৯৬০ সালে এই সিনেমাটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। তার ২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পালমে ডি’অর এ মনোনীত হয়েছিল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত দেবী ছবিটি।

৪. জয় বাবা ফেলুনাথ ও সোনার কেল্লা:

ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় চরিত্র হল ফেলুদা। যেটি আমাদের সকলেরই প্রিয় একটি চরিত্র। সত্যজিৎ রায় রচিত এই চরিত্রের অবলম্বনে নির্মাণ করা হয় সিনেমা। বাংলা সিনেমা জগতে ফেলুদার চরিত্রে সর্বপ্রথম আমরা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যাকেই দেখতে পাই। ১৯৭৪ সালে সোনার কেল্লা এবং ১৯৭৮ সালে জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে জনপ্রিয় ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করে চরিত্রটিকে সিনেমার পর্দায় একবারে জীবন্ত করে তুলেছিলেন তিনি।

৫. হীরক রাজার দেশে:

স্বনামধন্য পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হল হীরক রাজার দেশে। এটি গুপী গাইন বাঘা বাইন সিরিজের একটি অন্যতম চলচ্চিত্র। এই ছবির একটি বিশেষ দিক হচ্ছে মূল শিল্পীদের সব সংলাপ ছড়া আকারে করা হয়েছে। তবে কেবল এই সিনেমাটিতে একটি চরিত্র ছড়ার ভাষায় কথা বলেননি। তিনি হলেন শিক্ষক। ফলে এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, একমাত্র শিক্ষকই মুক্ত চিন্তার অধিকারী, বাদ বাকি সবার চিন্তাই নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ। রুপকের আশ্রয় নিয়ে বানানোর চলচ্চিত্রটিতে কিছু ধ্রুব সত্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

৬. বাক্স বদল:

নিত্যানন্দ দত্ত পরিচালিত ‘বাক্স বদল’ চলচ্চিত্রটি ১৯৬৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গীতায়োজনে প্রকাশ করেছিল ডিএম প্রোডাকশন্স হাউজ। এই সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সতীন্দ্র ভট্টাচার্য, সুব্রত সেন এবং সাবিত্রি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এই সিনেমাটি সম্পূর্ণ কমেডি ধাঁচের একটি সিনেমা।

৭. কাপুরুষ:

ওই একই বছর মুক্তি পেয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত বাংলা সিনেমা কাপুরুষ। এই সিনেমার মূল নাম হল ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’। দুটি পৃথক গল্পকে একত্র করে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমাটি। প্রথম গল্পটির নাম হল কাপুরুষ, যা গল্পকার সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের জনৈক কাপুরুষের গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

৮. বেলা শেষে:

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় পরিচালিত এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত বেলা শেষে সিনেমাটি ২০১৫ সালের ১ মে মুক্তি পায় কলকাতায়। এই ছবিতে তিনি ছাড়াও ছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অপরাজিতা আঢ্য, শঙ্কর চক্রবর্তী, মনামী ঘোষ, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এবং খরাজ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এই সিনেমাটির মূল আকর্ষণ ছিল দুর্গা উৎসব উপলক্ষে সবাইকে ডেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর দীর্ঘ ৪৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি চান স্ত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর সঙ্গে। এখানেই ছবির ট্রাজেডি। এই ছবিটির দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পায় ২০২২ সালে।

৯. প্রাক্তন:

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় পরিচালিত প্রাক্তন সিনেমাটি ২০১৬ সালের ২০ মে কলকাতায় মুক্তি পায়। এই সিনেমাটিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অপরাজিতা আঢ্য, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ অভিনয় করেছেন। কলকাতার বাইরে সিনেমাটি ভারতের অন্যান্য ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ শহর, যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি এবং কানাডার একটি শহরে মুক্তি পায়। এই ছবিটি বাংলা সিনেমা জগতের ইতিহাসে বিশাল মুক্তির ছবি।

১০. বেলা শুরু:

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় পরিচালিত বেলা শেষে ছবিটির দ্বিতীয় পর্বটিই হল বেলা শুরু। যেটি কলকাতায় মুক্তি পায় ২০২২ সালে। অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর মৃত্যুর পর এই সিনেমাটি প্রেক্ষাগ্রহে মুক্তি পায়। বাংলা সিনেমা জগতের একজন কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের শেষ সিনেমা ছিল এটি।

এইরকম বিনোদন জগতের সব রকম আপডেট পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button