Bangla News

বাংলায় “মিনি কাশ্মীর রয়েছে”, এমনই মারাত্মক দাবী করলেন বলিউড পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী

এইরকম বিস্ফোরক মন্তব্যের নিন্দা করেছে রাজ্যের বিশিষ্টজনেরা

হাইলাইটস:

•রবিবার কলকাতা যাদুঘরের একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বিবেক অগ্নিহোত্রী

•তাঁর সাথে ছিলেন বলিউড অভিনেতা অনুপম খেরও

•তাঁর এহেন মন্তব্যে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি

কলকাতা: গতকাল ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে অনুষ্ঠান কলকাতার জাদুঘরে। এই অনুষ্ঠানে অতিথি তালিকায় ছিলেন বলিউড অভিনেতা অনুপম খের এবং বলিউড পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। বিনোদন জগতের ব্যক্তিত্ব হলেও এনারা দু’জনই বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাঁর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি শোরগোল ফেলে দিয়েছিল গোটা দেশে। কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিতদের গণহত্যার ভয়াবহ ইতিহাস সিনেমার পর্দায় তুলে ধরার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। রবিবার অনুষ্ঠান সভা থেকে অন্যান্য গেরুয়া ব্রিগেডের নেতাদের মতোই তাঁরাও কলকাতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিশানা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী সরাসরি আক্রমণ করে বললেন, ‘রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডাহা ফেল মুখ্যমন্ত্রী।’ বিবেক অগ্নিহোত্রীই শুধু নয়, বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র আক্রমণ করতে ছাড়েননি অভিনেতা অনুপম খেরও।

এদিন বিবেক অগ্নিহোত্রী বলেন, “কাশ্মীরের ইয়াসিন মালিক বলেছিলেন, ভারতে ৫০০ কাশ্মীর বানাবেন। এই ৫০০ কাশ্মীর কোথায় রয়েছে তা তো জানি না, তবে, ৩০০-৪০০ মিনি কাশ্মীর তো বাংলাতেই রয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, “বাংলা কাশ্মীর হয়ে যাওয়ার আগে বাংলার মানুষের কথা, বাংলার কথা সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।” রবিবার সন্ধ্যে নাগাদ কলকাতার মাটিতে বসেই এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করছেন বলিউড পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। তাঁর এই মন্তব্য যথেষ্ট নিন্দনীয় বলেই মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।

বিবেক আরও বলেন, ‘আমাকে একবার আমার মা বলেছিলেন, যদি এমন মানুষদের দেখতে চাও যারা দেশ বদলাতে পারে, তাহলে বাংলায় যাও। কিন্তু আমার শুধু মনে আছে, “বুদ্ধ ইন আ ট্রাফিক জ্যাম” ছবির জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শারীরিক হেনস্থা করা হয়েছিল আমাকে।’ তাঁর টিমের লোকজনদেরও নাকি আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল বলে দাবি করেন বলিউড পরিচালক। ঠিক তাঁর পরেই তিনি বলেন, ‘বাংলা কাশ্মীরে পরিণত হওয়ার আগে বাংলার কাহিনি আমি জনতার সামনে আনতে চাই। বাংলার রাজনীতির অধঃপতন দেখানোর জন্য একটি ছবি বানাতে চাই আমি।’ অনুষ্ঠানের শেষেও বিবেকের মুখে শোনা যায় সেই একই বিতর্কিত কথা। বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের বহু জায়গায় আমি যেতে পারি না। সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী এখানকার হিংসা পরিস্থিতি সামলাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।”

শুধু বিবেক অগ্নিহোত্রীই নন, বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র আক্রমণের স্তুতি অভিনেতা অনুপম খেরের গলাতেও। বিজেপি ঘনিষ্ঠ ওই অভিনেতা জানান, তিনি আগামিকাল অর্থাৎ, সোমবারই বীরভূমের শান্তিনিকেতন যাবেন। কেউ নাকি তাঁকে জানিয়েছে, শান্তিনিকেতনের পরিস্থিতিও ভালো নয়। এরপরেই পদ্মশিবির ঘনিষ্ঠ অভিনেতার তোপ, ‘দু-চারজন ভয় পেয়ে থাকা মানুষকে তাঁর মতো শেরদিল লোক ভয় পায় না।’

বিবেক অগ্নিহোত্রীর এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েতৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “যাঁর কথা বলছেন তিনি চলচ্চিত্র জগতের কোনও পরিচিত নাম হতে পারেন। কিন্তু তিনি বাংলায় পরিযায়ী হিসেবে এসে বাংলার কৃষ্টি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার সাম্প্রদায়িক বাতাবরণকে দূষিত করছেন। বাংলা মানুষ হিসেবে ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছি।”

অন্যদিকে বিবেকের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন বঙ্গের পরিচালক অরিন্দম শীল। তাঁর মন্তব্য, “এখানে কাশ্মীর বলতে উনি কী বোঝাতে চেয়েছেন। এ তো কাশ্মীরের মানুষের অপমান। বাংলার অপমান। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যথেষ্ট রুচিশীল, তাঁরা এই সমস্ত কথা কানে তোলেন না।”

কুণাল ঘোষ বলেন, “বাংলা সম্পর্কে কুৎসা বিবেকের। দম থাকলে গুজরাটে গিয়ে গোধরা ফাইলস, উত্তর প্রদেশে গিয়ে হাথরস, উন্নাও ফাইলস, বুঝিয়ে দেবে গণতন্ত্র কাকে বলে। বাংলায় গণতন্ত্র আছে বলে এত বড় বড় কথা। হতো এটা বিজেপির মতো ফ্যাসিস্ট সরকার। এসব কথা বলার পর দাঁড়িয়ে থাকার সাহস থাকত না। করে নিন বেঙ্গল ফাইলস। কন্যাশ্রী থেকে স্বাস্থ্যসাথী।”

আবার সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ি বলেন, উনি বাংলার কিছু বোঝেন? উনি সংস্কৃতিরও কিছু বোঝেন না। ওকে আরএসএস পয়সা দিয়েছে সেই পয়সায় উনি অসত্য একটা ছবি বানিয়েছেন। উনি ভারত বোঝেন না। ভারতের সংস্কৃতি বোঝেন না। ভারত একটি বহু সংস্কৃতির দেশ। ভারতে কাশ্মীর আছে, বাংলাও আছে। এখানে দুই-ই থাকবে। বরং যারা ভারত বিরোধী তাদেরকে ভারত থেকে বিদায় দেওয়ার দরকার রয়েছে। এসব লোক দেশের পক্ষে বিপজ্জনক। সমাজের শত্রু।”

সুতরাং বলা যায়, বলিউড পরিচালকের এইরকম মন্তব্যে বাংলার রাজনীতি তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাছাড়া বাংলার বিশিষ্টজনেরাও যথেষ্ট নিন্দা জানিয়েছেন।

এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button