গতকালের ধর্মঘট সফল নাকি ব্যর্থ, কী বলছে নবান্ন?
এদিন সরকারি সব দপ্তরে হাজিরা ছিল বাধ্যতামূলক
হাইলাইটস:
•ডিএ বৃদ্ধির দাবীতে গতকাল রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল রাজ্য সরকারি কর্মীরা
•ধর্মঘট সফল নাকি ব্যর্থ?
•নবান্ন সূত্রের খবর, এদিন সরকারি দফতরে উপস্থিতির হার ছিল ৯০ শতাংশ
কলকাতা: কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বৃদ্ধির দাবীতে শুক্রবার রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল রাজ্যের সরকারী কর্মচারী সংগঠন। গতকাল এই ধর্মঘট নিয়ে উত্তাল ছিল রাজ্য-রাজনীতি। সেই সঙ্গে নবান্নের তরফেও দেওয়া হয়েছিল কড়া নির্দেশিকা। রাজ্য সরকার যে এই ধর্মঘট মানে না তা কার্যত লেখা ছিল নির্দেশিকায়। ধর্মঘটে সরকারি কর্মীদের দফতরে আসা বাধ্যতামূলক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল নবান্ন। শুক্রবার কোনওভাবেই কোনও ক্যাজুয়াল লিভ বা অর্ধদিবস বা পূর্ণ দিবসের ছুটি নেওয়া যাবে না। এরপরেও কেউ উপযুক্ত কারণ ছাড়া অফিসে গরহাজির থাকলে সেক্ষেত্রে ব্রেক ইন সার্ভিস সহ একদিনের বেতন কেটে নেওয়া হবে। এদিন রাজ্যের সরকারী দফতরে হাজিরা ছিল বাধ্যতামূলক। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং নজর রেখেছিলেন উপস্থিতির উপর।
সূত্রের খবর, নজিরবিহীনভাবে এদিন দিনের বিভিন্ন সময় চারবারেরও বেশি হাজিরা পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট বানানো হয়েছে। সব জেলাকেই এদিন সমস্ত দফতরের হাজিরার রিপোর্ট নবান্নকে পাঠাতে হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় নবান্নের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কাজকর্ম স্বাভাবিক ছিল। বিভিন্ন রাজ্য সরকারি দফতরে গড়পরতায় ৯০ শতাংশ হাজিরা ছিল কর্মীদের। যাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন তাঁরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন প্রাপ্য ছাড় বা সুবিধা নিয়ে ছুটি নিয়েছেন। হাজিরা সন্তোষজনক থাকলেও, কড়া পদক্ষেপের পথ থেকে সরছে না রাজ্য সরকার। বাকি যে সব কর্মীরা উপযুক্ত কারণ ছাড়া এদিন অনুপস্থিত থাকা কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নবান্নের তরফে বলা হয়েছে ৯ই মার্চের নোটিফিকেশন অনুযায়ী এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের দাবী, নবান্ন এবং রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল সর্বাধিক। শুক্রবার নবান্নে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি উপস্থিতি দেখা গেল নবান্নে। আধিকারিক এবং অশিক্ষক কর্মীরা অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি পরিমাণে উপস্থিত ছিলেন। ধর্মঘটের দিন অনুপস্থিত থাকলে শো কজ করা হতে পারে বলে কড়া নির্দেশ ছিল নবান্নের। একমাত্র মেটার্নিটি লিভ ছাড়া বাতিল করা হয়েছিল সমস্ত ছুটিও। হাজিরা স্বাভাবিক ছিল বিধানসভাতেও। এদিন সরকারী কর্মীদের উপস্থিতি দেখার পর ধর্মঘট কার্যত বিফলে গিয়েছে বলেই মনে করছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহল।
অপরদিকে আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি, ধর্মঘট সফল হয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারি পরিষদের তরফে দেবাশিস শীল বলেন, “জেলায় জেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।” খাদ্যভবন, নব মহাকরণে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় ধর্মঘটী সংগঠনগুলি জানিয়েছে, কোনওভাবেই ৯০ শতাংশ উপস্থিতি ছিল না। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কর্মচারীরা ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেছেন। বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও কোথাও অশান্তির ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। কিন্তু কর্মচারীরা কোনও হুমকির কাছে মাথানত করেনি। কর্মচারীদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটিও শুক্রবারের ধর্মঘটে শামিল হয়েছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বৃদ্ধির দাবীতে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠন। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু, এরপরেই এই মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। চলতি মাসেই সেই মামলার শুনানি হতে পারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
ডিএ বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডাকা বনধকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অধিকার আদায় করার জন্য আন্দোলন করা যেতেই পারে। কিন্তু, বাংলার মানুষ এখন আর কর্মনাশা বনধ চান না।”
এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।