Bangla News

রাজধানীতে অনুব্রত! গরু পাচারের টাকা কার কার কাছে গিয়েছে, তা জানতে ইডির টানা জেরা অনুব্রত মণ্ডলকে

গত মঙ্গলবারই অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে

হাইলাইটস:

•গত মঙ্গলবার দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রত মণ্ডলকে

•তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়

•আজও তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব জারি থাকবে

গরু পাচার মামলার প্রধান অভিযুক্ত বীরভূম জেলার তৃণমূলের জেলা সভাপতি এবং দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল দীর্ঘদিন থেকে জেলবন্দিই ছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনও সঠিক তথ্য না পাওয়ায় অবশেষে বাংলা ছেড়ে অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে মঙ্গলবার অর্থাৎ দোলযাত্রার রাতে দিল্লি পাড়ি দিয়েছেন ইডির আধিকারিকরা। গভীর রাতে দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাকেশ কুমারের বাড়িতে অনুব্রতকে হাজির করানো হয়েছিল অনুব্রতকে। সেদিনই মধ্যরাতে টানটান উত্তেজনার মধ্যে বিচারকের বাড়িতে সওয়াল-জবাব পর্ব শেষ হয় অনুব্রত-র। বিচারক রাকেশ কুমার তাঁকে তিন দিনের জন্য ইডি হেফাজতে রেখে শুক্রবার ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাত দু’টোরও পরে তাঁকে নিয়ে ইডির আধিকারিকরা এ পি জে আব্দুল কালাম রোডে ইডির সদর দফতরে যান। বুধবার দুপুরে রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করানো হয়। তারপর থেকেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শুরু হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে তোলা হবে। সেখানে ইডি ফের অনুব্রতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইবে। তার আগে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আড়াই দিনে যতটা সম্ভব জিজ্ঞাসাবাদ সেরে ফেলতে চাইছেন ইডির আধিকারিকরা। তার জন্য ইডির স্পেশাল ডিরেক্টর সনিয়া নারাং, অ্যাস্টিট্যান্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমারের নেতৃত্বে দল তৈরি হয়েছে। অনুব্রতের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলে রেখেছেন। ইডির হেফাজতে থাকার সময় তৃণমূল নেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার দায় তদন্তকারীদের উপরে এসে পড়তে পারে। সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব পুরোটাই ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখা হবে।

ইডি সূত্রের খবর, গরু পাচার মামলায় একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। গরু পাচারের তদন্তে নেমে অনুব্রতের শ’খানেক সম্পত্তি-জমিজমা-চালকল-ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে ২৬টি সম্পত্তির মালিক তাঁর মেয়ে সুকন্যা। যার পরিমাণ প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। সুকন্যার ব্যাঙ্কে ৬ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট, সাত বছরে ১২ কোটি টাকার জমি কেনার সন্ধান মিলেছিল। সুকন্যাকে দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ED সূত্রের দাবি, তিনি কিছুরই উত্তর দিতে পারেননি। সবটাই বাবা জানেন বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এ বার অনুব্রতর কাছ থেকে সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর চাইছে ED। ইডি প্রথম থেকেই দাবি করে চলেছে গরু পাচারের একটা বড় অংশের টাকা নিঃসন্দেহে অনুব্রত মণ্ডলের ঝুলিতে গিয়েছে। কিন্তু গরু পাচারে আয়ের বাকি টাকা কোথায় গেল? কোন কোন রাজনৈতিক প্রভাবশালীর কাছে গরু পাচারের টাকা পৌঁছেছিল? কী ভাবে তা হাতবদল হয়েছিল? কী ভাবে গরু পাচারের কালো টাকা বিভিন্ন জায়গায় লগ্নি করে সাদা করার চেষ্টা হয়েছিল? মূলত এই চারটি প্রশ্ন সামনে রেখেই অনুব্রত মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিলেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে খবর, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অনুব্রত মণ্ডলের সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়।

গরু পাচারকাণ্ডের ‘মাথা’ এনামুল হক, অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন, হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি, অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ চালকল ব্যবসায়ী রাজীব ভট্টাচার্যর সঙ্গে তাঁকে মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।

ইডি সূত্রের খবর, বুধবারও অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তা দীর্ঘ করা যায়নি। কারণ তাঁর কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। বৃহস্পতিবার সারা দিন অনুব্রতর আইনজীবী উপস্থিত থাকবেন। বিচারকরের অনুমোদন মেনে একান্তে তাঁর সঙ্গে কথাও বলতে পারবেন অনুব্রত। কাচের ঘেরাটোপের অন্য পারে নির্দিষ্ট দূরত্বে ‘বেয়ন্ড হিয়ারিং ডিসট্যান্স’-এ অনুব্রতকে জেরার ‘দর্শক’ হবেন তাঁর আইনজীবী। বিচারক রাকেশ তাঁর নির্দেশে জানিয়েছেন, প্রতি দিন ৩০ মিনিট অনুব্রত তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে একান্তে দেখা করতে এবং কথা বলতে পারবেন। পাশাপাশি, প্রতি দিন এক বার ধৃত তৃণমূল নেতার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এবার দেখা যাক গরু পাচার মামলার তদন্তের মোড় কোন দিকে ঘোরে।

এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button