পুজোয় ১০ দিন ছুটি, কেন্দ্রের থেকে বেশি ছুটি মেলে রাজ্যে, বেতন কাঠামোতেও তফাৎ! এইদিন বিধানসভায় ডিএ নিয়ে বিবৃতি মুখ্যমন্ত্রীর
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এদিন একাধিক ইস্যুতে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী
হাইলাইটস:
•বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে গতকাল থেকে
•বিধানসভা দাঁড়িয়ে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে রাজ্যের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী
•ডিএ আন্দোলনকারীরা আগামী ১০ই মার্চ রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন
কলকাতা: মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত তখন আগুনে ঘি দেওয়ার মতো সেই বিক্ষোভ মঞ্চে গিয়ে সমর্থন জানিয়ে এসেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। জানিয়ে এসেছিলেন, আন্দোলনকারীদের নিঃশর্ত সমর্থন করবেন তাঁরা। আর তারপরই বিধানসভায় এ নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভায় প্রথমে ডিএ নিয়ে কথা বলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গত, রাজ্য বাজেট অধিবেশনের দিন বক্তৃতা শেষের পরে মুখ্যমন্ত্রীর একটি চিরকুট হাতে পান রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এরপরই মার্চ মাসের বেতন থেকে ৩ শতাংশ হারে বর্ধিত মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করেন তিনি। সোমবারও মুখ্যমন্ত্রীর চিরকুট মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস চন্দ্রিমার হাতে তুলে দেন দেওয়ার পরে তিনি ডিএ নিয়ে কথা বলেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীও নিজের বক্তব্য জানান।
বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনই ডিএ নিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, “১ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার জন্য খরচ হয়েছে। যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।” এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তুলনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যের কী রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আছে? ১ লক্ষ কোটি টাকা আমরা এখনও কেন্দ্রের কাছে পাই।” একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা ও উত্তরপ্রদেশ ডিএ দেয় না। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো রাজ্যের থেকে ভিন্ন। আর কেন্দ্রের সরকার কত দিন ছুটি দেয়? আমরা দুর্গাপুজোয় দশ দিন ছুটি দিই। ছট পুজোয় ছুটি দিই। সারা বছরই প্রচুর ছুটি দেওয়া হয় সরকারের তরফে।” রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা আর কী কী সুবিধা পান তাও উল্লেখ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী।
এইদিন ডিএ নিয়ে বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও আবারও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। ফের তোলেন বঞ্চনার অভিযোগ। বলেন, “একবার নিজেদের দিকে চেয়ে দেখুন। ভোট মিটলেই রেশন বন্ধ। এরপরেও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে৷ ভোট মিটলেই গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেয়। কেন্দ্রের কাছে আমাদের টাকা পাওনা আছে৷ যদিও সেই টাকা আমরা পাইনি। এরপরেও নবম শ্রেণিতে উঠলে সাইকেল দিই।” রাজ্যের আর্থিক অসুবিধার কথা জানাতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘টাকা নেই। আবাসন, রাস্তা, ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। মুসলিম ছেলেমেয়েদের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে।’’
ডিএ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বাম আমলের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। বলেন, “সিপিএম আমলের ডিএ বাকি ছিল। ৩৪ বছরে পুরো ডিএ দেয়নি। ৯৯ শতাংশ ও ৬ শতাংশ মিলিয়ে আমরা ১০৫ শতাংশ ডিএ দিয়েছি। টাকা তো আকাশ থেকে পড়বে না? এর উপর আমরা পেনশনের ব্যবস্থা করেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমার মুণ্ডু কেটে নিন, যদি তাতে সন্তুষ্ট হন। আমার আর দেওয়ার কিছু নেই। যতটা পেরেছি করেছি।” তাঁর এই বক্তব্যের পর চন্দ্রিমা ভট্টাচাৰ্যও দাবিও করেন যে, পেনশন না দিলে রাজ্যের ২০ হাজার কোটি টাকা বাঁচত।
চলতি অর্থবর্ষে সরকারি কর্মচারীদের এবং অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের জন্য ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ কিন্তু সেই ঘোষণায় বিন্দুমাত্র সন্তুষ্ট হননি রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা৷ তাদের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ডিএ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ বাড়তি ডিএ-র দাবিতে দুদিনের পেন ডাউন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারীরা। এবার আগামী ১০ই মার্চ রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা। তাতে সরকারি পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবার বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই কলকাতায় শহিদ মিনারের নীচে আন্দোলনকারীরা বলেন, “আমরা কার্যত ১০ বছর ধরে অর্ধেক বেতন পেয়ে আসছি। ওনাকে তো আমরা ছুটি দিতে বলিনি। কেন ছুটি দিচ্ছেন? উনি আমাদের পেটে দেবেন না, পিঠে দেবেন, এটা হয় না।” সবমিলিয়ে বলা যায়, ডিএ ইস্যুতে এখন বাংলার রাজনীতি তোলপাড়।
এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক খবর পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।