এইবছরও হচ্ছে না বিশ্বভারতীতে বসন্ত উৎসব, এই বিষয়ে ঠিক কী জানালেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য
সাধারণকে বাদ দিয়েই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত-বন্দনা পালিত হচ্ছে
হাইলাইটস:
•এবারেও বন্ধ বিশ্বভারতীতে বসন্ত উৎসব
•বসন্ত উৎসবের বদলে হবে বসন্ত বন্দনা উৎসব
•ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
২০১৯ সালে শেষবার বসন্ত উৎসব হয়েছিল বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণে। তাতে অংশ নিয়েছিলেন শিক্ষার্থী থেকে সবাই। পাশাপাশি অংশ নিয়েছিল বহু পর্যটক। সেটাই ছিল শেষবার। তারপরই করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সবকিছুই। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ২০২ও এবং ২০২১ সালে কোভিডের জন্য বন্ধ ছিল উৎসব। ২০২২ সালে দোলের দিন নয়, তার পরে বিশ্বভারতী নিজেদের ছাত্রছাত্রী, কর্মী এবং অধ্যাপকদের নিয়ে নিজদের মতো করে বসন্ত উৎসব পালন করে। বাইরের কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। এবারও শান্তিনিকেতনে হচ্ছে না বসন্ত উৎসব। বুধবার এমনটাই জানালেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
প্রতি বছর দোলের দিন ভিড়ের চোটে শান্তিনিকেতনে পা রাখা যায় না। হাজির হন দেশ বিদেশের পর্যটকরা, হলুদ শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে যোগ দেন রঙের উৎসবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আমল থেকে চলে আসা বসন্ত উৎসব ২০২০ সালে প্রথম বন্ধ করা হয় শান্তিনিকেতনে। তবে প্রতিবারের মত সেবারও ভিড় জমান দেশ বিদেশের পর্যটকরা। যদিও বিশ্বভারতী চত্বরে ঢোকা বন্ধ ছিল তাদের। ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়বিশ্বভারতী সংলগ্ন রাস্তা। রঙের খেলায় মাততে তারা চলে যান খোয়াই-সোনাঝুরির দিকে।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে ৩রা মার্চ অর্থাৎ আজ বসন্ত-বন্দনা পালন করবে। গত বছরের মতো এবারও শুধুমাত্র বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, অধ্যাপক, কর্মীরাই বসন্ত-বন্দনায় যোগ দিতে পারবেন। তার সাথে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তে শুরু হয়েছে বিতর্ক, প্রথা ভাঙা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আশ্রমিকদের অভিযোগ, এভাবেই ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি লোপ পাচ্ছে। এই নিয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি মন্তব্য এড়িয়েছেন।
তবে বসন্ত উৎসব বিষয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘বিশ্বভারতী অল্পশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত লোকজনে ভরে গিয়েছে। বসন্ত উৎসবের নামে বসন্ত-তাণ্ডব বন্ধ করে দিয়েছি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এমন বসন্ত উৎসব চাননি। বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান জনতার জন্য নয়। বিশ্বভারতীতে তাণ্ডবের পেছনে কিছু বুড়ো খোকার ভূমিকা থাকে।’ অর্থাৎ স্পষ্টতই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশকে নিশানা করেছেন। তাই এবছরও বিশ্বভারতীর তরফে কোনও বসন্ত উৎসব হচ্ছে না। উপাচার্যর আরও দাবি, ব্রিটিশদের পদলেহনের জন্য দুর্গাপুজো চালু করা হয়েছিল।” ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তী।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ সকল স্তরের মানুষজন। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। উল্লেখ্য, গত সোমবার বসন্ত বন্দনার সূচি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়েছিল ২রা মার্চ সন্ধ্যায় গৌরপ্রাঙ্গণে লোক সংস্কৃতি উৎসব, রাত ৯ টায় বৈতালিক ও পরেরদিন সকালে “খোল দ্বার খোল” গানের তালে শোভাযাত্রা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যায় রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘মায়ার খেলা’ পরিবেশন করবেন সঙ্গীত ভবনের পড়ুয়ারা। এইভাবেই গতকাল থেকে পালিত হচ্ছে বিশ্বভারতীর বসন্ত বন্দনা উৎসব। এছাড়া দোলের দিন, ৭ই মার্চ গৌরপ্রাঙ্গণেই পূর্ণদাস বাউলের গানের অনুষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু সূচিতে শুধুমাত্র পড়ুয়া, কর্মী, অধ্যাপক- অধ্যাপিকাদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এইরকম মূল্যবান প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।