চুলের ডগা অল্প করে কেটে দিলে চুল কী তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে
চুলের সঠিক যত্ন করা উচিত
আমরা ত্বকের পাশাপাশি চুলেরও যত্ন করতে ভালোবাসি। আগেকার দিনে মা-ঠাকুমাদের দেওয়া চুলের যত্নের টিপসই আমরা মেনে আসতাম। কিন্তু সময় পাল্টেছে। এখানকার দিনের কম বয়সের ছেলে-মেয়েরা ঘরোয়া টোটকার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেয়। বর্তমান প্রজন্ম চুল নিয়ে খুবই চিন্তায় থাকে। অনেক সময় ঝোঁকের বশে তারা চুল সংক্রান্ত কিছু ভুল সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে। চুল আমাদের শরীরের ভীষণ মূল্যবান অংশ। রেশমের মতো মসৃণ, আলো পিছলোনো এক মাথা চুল পেতে কার না ইচ্ছে করে! কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না। তার জন্য পরিশ্রম করতে হবে এবং চুলের যত্নে জন্য সময়ও দিতে হবে।
এই কথা আপনিও নিশ্চয়ই শুনেছেন যে, চুলের ডগা কিছুটা কেটে দিলে নাকি খুব দ্রুত চুল বৃদ্ধি পায় এবং তার সাথে ঘনও হয়। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এই ধারণাই রয়েছে যে, তিন মাস অন্তর চুল কাটলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং চুল ভালো থাকে। কিন্তু এটি শুধুমাত্র একটি ধারণা। এর কোনও যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। চুলের ডগা কাটা কী ভালো? সত্যিই কী চুলের ডগা কেটে ফেললে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায় লম্বা? এই একটি প্রশ্ন আমাদের সবার মনেই বাসা বাঁধে।
তাহলে বুঝবেন কীভাবে যে আপনার একটা হেয়ার কাট দরকার?
•চুলের শেপ নষ্ট হয়ে গেলে চুল কাটতেই হবে আপনাকে। চুল যত লম্বা হতে থাকে তার শেপও ধীরে ধীরে নষ্ট হতে শুরু করে। এই সময় আবার চুল কেটে নিলে আবার সুন্দর শেপ ফিরে পাওয়া যায়।
•অনেকেই দু-মুখো চুলের সমস্যায় ভোগেন। এর আসল কারণ হল চুলের ডগা ফেটে যায়। এই সমস্যার সম্মুখীন হলে দ্রুত চুল কেটে ফেলুন। শুধু ওইটুকু অংশই কাটবেন যেটুকু ফেটে গিয়েছে।
•চুল বহু দিন ধরে না কাটলে চুলে জট পড়ে যায়। যতই চুল আঁচড়ে পরিপাটি রাখার চেষ্টা করুন, চুল ঘেঁটে একসা হয়ে যায়। এমনই জট পড়ছে যে, ঘুম থেকে উঠে চুল আঁচড়ানোও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চুল কাটা উচিত।
•আবার চুলের ডগা পাতলা হয়ে যায় অনেক দিন চুল না কাটলে। ধরুন আপনি সুন্দর করে বিনুনি করলেন। চুলের ডগা পাতলা হয়ে গেলে দেখতে মোটেই ভালো লাগবে না। এ ক্ষেত্রে চুলের ডগা থেকে কয়েক ইঞ্চি কেটে ফেলাই সমাধান।
লম্বা চুল পেতে কী কী করতে হবে?
চুল কতটুকু লম্বা রাখবেন সেটি আপনার সিদ্ধান্ত, কিন্তু চুলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক না হলে তাকে সুস্থ চুল বলা যায় না। ঠিক একইভাবে পুষ্টি না পেলে চুলের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। কিছু সহজ কাজ রয়েছে যার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
•অনেকেই চুলে তেল দেন না কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই শ্যাম্পু করেন। লম্বা চুল পেতে চাইলে শ্যাম্পুর পাশাপাশি তেলের দিকেও নজর দিতে হবে। সপ্তাহে দু’দিন নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে গরম করে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। বালিশে যাতে তেল না লাগে, সেভাবে মাথায় কাপড় বা নরম তোয়ালে জড়িয়ে শুয়ে পড়ুন। সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হবে ও চুল সহজে ভাঙবে না। তেল থেকে যেটুকু খাবার চুল পায়, তাও মিলবে।
•চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় নজর দিতে হবে বালিশের প্রতিও। চুল নিজেই প্রাকৃতিক উপায়ে তেল তৈরি করে তার গোঁড়াকে ভালো রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু একটানা সুতি, পলিয়েস্টার বা রেয়নের ওয়ারে শুলে চুলের তেল শুষে নেয় তারা। তাই চেষ্টা করুন সিল্কের ওয়ার ব্যবহার করতে। ঘুমানোর সময় চুল বেঁধে নিন।
•সিলিকন, সালফাইটমুক্ত কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু চুলের জন্য ভালো। অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত শ্যাম্পু স্টাইল ও ফ্যাশনে সাহায্য করলেও তা আদতে চুলের গোড়ার ক্ষতি করে ও বৃদ্ধি আটকায়। চুল খুব বেশি ঘষাও ভালো নয়। শ্যাম্পুর সময় প্রয়োজনের বেশি চুল ঘষবেন না ও কখনওই গরম জল দেবেন না চুলে।
•কন্ডিশনারের ক্ষেত্রেও বাছাইয়ের বিষয়ে খুব সাবধান হতে হবে। রাসায়নিকমুক্ত ও প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেলযুক্ত তেল, মধু ইত্যাদি সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
•চুলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখতে গেলে কিছু বিষয় এড়াতেই হবে। খুব বেশি হিট নেওয়া চলবে না। এমন কিছু স্টাইলে চুল কাটা, যেখানে প্রচুর কুচো চুল বাদ পড়ে (মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ, ক্রিয়েটিভ কাট ইত্যাদি) সেগুলি এড়াতে হবে। এতে চুলের গোছা পাতলা হয় ও সামঞ্জস্য আসা খুবই সময়সাপেক্ষ বিষয় হয়ে ওঠে।
•স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলতে হবে। প্রতিদিন প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এর সাথেই প্রয়োজনীয় মিনারেল গ্রহণ করতে হবে।
•হরমোনের ভারসাম্য ঠিক আছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি ছ’মাস অন্তর চুলের ডগা কাটলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আপনার লুকেও পরিবর্তন আসে।