পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ওবিসি পড়ুয়াদের জন্য মেধাশ্রী বৃত্তি চালু করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার
কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রীর মতোই মেধাশ্রী বৃত্তিতে উপকৃত হবে ওবিসি পড়ুয়ারা
সামনেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই ইতিমধ্যেই শাসক-বিরোধী দুই শিবিরেই নির্বাচন প্রচার তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলা সফর শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে বিরোধীরাও নানা দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর সবচেয়ে বড়ো নির্বাচন হল এই পঞ্চায়েত নির্বাচন। বাংলার গ্রামাঞ্চলকে জয় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যেমন তৃণমূল-কংগ্রেসের অস্ত্র “দিদির সুরক্ষা কবচ” কর্মসূচি তেমনই বঙ্গ বিজেপির কর্মসূচি হল “গ্রামে চলো”।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই ওবিসি পড়ুয়াদের বৃত্তি পাঠাতে তৎপর রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেধাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা যাতে ওবিসি পড়ুয়াদের কাছে চলে যায়, তা নিয়ে বিশেষভাবে রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এই প্রস্তাবে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ‘মেধাশ্রী’ প্রকল্পের গাইডলাইন-সহ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে অনগ্রসর কল্যাণ দফতর। গত শুক্রবার নবান্ন রাজ্যের প্ৰতিটি জেলাশাসকের কাছে এই বার্তা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ওবিসি পড়ুয়াদের জন্য ‘মেধাশ্রী’ বৃত্তি আগেই বন্ধ করেছে। যার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার নিজের অর্থেই এই বৃত্তি চালু রাখার সিদ্ধন্তের কথা ঘোষণা করেছে। নতুন আর্থিক বছরেই এই প্রকল্পের বৃত্তি দেওয়া হবে।
মার্চ অথবা এপ্রিলেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার একটি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। তাই একদমই সময় নষ্ট করতে চাইছে না রাজ্য সরকার। রাজ্যের প্রতিটি স্কুলে পাঠরত ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এই বৃত্তি পৌঁছে দিতে ১৫ দিনের মধ্যে নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিল নবান্ন। জনসংখ্যার নিরীখে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে অনেকটা আসনই রয়েছে ওবিসি মানুষের জন্য সংরক্ষিত। রাজ্যে সংখ্যালঘু মানুষও ওবিসি তালিকাভুক্ত। কেন্দ্রীয় সরকার নানা কৌশলে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আটকে রাখায় রাজ্যে পঞ্চায়েতের কাজ প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। তাই রাজ্য সরকার এই বৃত্তির জন্য নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের বাখ্যা, একমাত্র পঞ্চায়েত ভোটেই তফশিলি জাতি ও আদিবাসী ছাড়াও ওবিসিদের আসন সংরক্ষণের কথা আইনে বলা রয়েছে। রাজ্য সরকারের অনগ্রসর কল্যান দফতরের তরফ থেকে ‘মেধাশ্রী’ প্রকল্পের গাইডলাইন-সহ যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, সরকারি স্কুলে পাঠরত পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণির ওবিসি পরিবারের পড়ুয়ারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ৮০০ টাকা বৃত্তি পাবে। কিন্তু বেসরকারি স্কুল এবং নাইট স্কুলের ওবিসি পড়ুয়ারা এই সুবিধা পাবে না। এর জন্য জেলার স্কুল পরিদর্শক বা অতিরিক্ত পরিদর্শকদের প্রতিটি স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত শিক্ষাশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে ওবিসি পড়ুয়াদের কাছে থেকে আবেদন সংগ্রহ করে নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা পোর্টালে এই আবেদনগুলি পরীক্ষা করে আপলোড করে দেবেন। অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের গাইডলাইন অনুযায়ী বৃত্তি প্রাপক পড়ুয়াদের পরিবারের সর্বোচ্চ বার্ষিক আয় বছরে আড়াই লক্ষ টাকা হতে হবে।
ফলে বলা যায়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন হয়ে চলেছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে হাতিয়ার বানিয়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করাই এখন তৃণমূল-কংগ্রেসের একমাত্র লক্ষ্য।
এইরকম রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।