গত ২ বছর পর প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে দেখা যাবে বাংলার ট্যাবলো
এবারে বাংলার থিম দুর্গাপুজো
গত বছরের মতো এবছরও প্রজাতন্ত্র দিবস পালন শুরু হয়ে গেছে ২৩শে জানুয়ারি থেকে। ২৩শে জানুয়ারি দিনটিকে পরাক্রম দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর উৎযাপন শেষ হবে ৩০শে জানুয়ারি কর্তব্যপথে বিটিং রিট্রিট এবং শহিদ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে। এই বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে আসছেন মিশরের রাষ্ট্রপতি আব্দেল ফতেহ আল সিসি।
গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলার ট্যাবলোকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র-রাজ্য চাপান উতোর তুঙ্গে ছিল। প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে রাজধানীর রাজপথে কুচকাওয়াজের পর বিভিন্ন রাজ্যের সুসজ্জিত ট্যাবলো অংশগ্রহণ করে। কিন্তু প্রস্তুতির পরও ছিল না পশ্চিমবঙ্গের কোনও ট্যাবলো। কারণ নেতাজি সুভাষচন্দ্রের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে তৈরি পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো বাতিল করে দিয়েছিল কেন্দ্র। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে নেতাজিকে সামনে রেখেই ট্যাবলো পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়। এর আগে ২০২১ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসেও রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী-র মতো বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্প নিয়ে পাঠানো ট্যাবলোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে বাকযুদ্ধ চরমে ওঠে। উল্লেখ্য ২০১৭ সালেও প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলার তরফ থেকে শারদোৎসবের মাহাত্ম ও গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছিল।
অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামীকাল অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র দিবসের রাজপথে থাকছে বাংলার ট্যাবলো। এবারের থিম দুর্গাপুজো। ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা উদযাপন করতে এবার রাজধানীতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলার মা দুর্গার বিশেষ ট্যাবলো অংশ নেবে। দু’বছর পর এবার দিল্লির প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে যোগদান করছে পশ্চিমবঙ্গ। বিহার বা ওড়িশার মতো পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি এবার দিল্লির রাজপথে ট্যাবলো প্রদর্শন থেকে বাদ পড়লেও তালিকায় রয়েছে বাংলার নাম। মিলেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ছাড়পত্র।
পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলোর থিম ও বিষয় ভাবনায় রয়েছে নারী ক্ষমতায়ন। দুর্গাপুজোর সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন তুলে ধরতে দুর্গাপ্রতিমার সঙ্গে মহিলা ঢাকিরা থাকবেন। ঢাকের বাজনার সঙ্গে শোনা যাবে চণ্ডীপাঠ। তাতেও নারীশক্তির আবাহনই ফুটে উঠবে। নবান্ন সূত্রে খবর, স্বপরিবারে-লক্ষ্ণী, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিককে নিয়ে এক চিত্রে মা দুর্গার অবস্থান হবে। ট্যাবলোর অগ্রভাবে একটি কলাগাছের দু’ধারে দুই মহিলা শঙ্খ বাজিয়ে মহাশক্তির আগমণীর বার্তা দেবেন। আর দেবীকে ঘিরে থাকবেন মহিলারা। ঢাক, কাঁসর, ঘন্টা বাজিয়ে বরণ চলবে মায়ের। বিশ্বজগত সৃষ্টির মূলে রয়েছেন ‘মা’ অর্থাৎ নারী শক্তি। যার প্রতিফলন আমরা পাই মা দুর্গার মধ্যে। তাই বলা যায় দুর্গা পুজো শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের কাছে উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে। এটাই বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। এ বছর মোট ২৩টি ট্যাবলো থাকবে কর্তব্যপথে। তার মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলি থেকে ১৭টি ও বিভিন্ন মন্ত্রকের তরফ থেকে আরও ৬টি ট্যাবলো রাখা হবে। সব ট্যাবলোগুলিতেই ভারতীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া থাকবে। সেই সঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথাও তুলে ধরা হবে। মূলত ‘নারী শক্তি’র বিষয়টি তুলে ধরা হবে এবছরের অনুষ্ঠানে। তারই অংশ হিসেবে দুর্গা প্রতিমা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মাতৃপ্রতিমা ছাড়াও ট্যাবলোতে থাকবে বাংলার সংস্কৃতিক নানা উদাহরণ। বাংলার ট্যাবলো সাজানো হয়েছে বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত টেরাকোটা শিল্পকর্মের আদলে।