Top 5 Weekend Getaways From Kolkata: সপ্তাহান্তের ছুটিতে ঘোরার জন্য কলকাতার নিকটবর্তী ৫টি সেরা গন্তব্যস্থলের সন্ধান নিয়ে এসেছি আমরা
Top 5 Weekend Getaways From Kolkata: শহর কলকাতার নিকটবর্তী প্রচুর ঘোরার জায়গা রয়েছে আমাদের রাজ্যে
হাইলাইটস:
• বাঙালি মানেই ভ্রমণপিপাসু
• একটু ছুটি পেলেই তাদের মন ঘুরতে যাব, ঘুরতে যাব করে করে উঠে
• আজ আমরা সপ্তাহান্তের ছুটিতে ঘোরার জন্য কলকাতার নিকটবর্তী ৫টি গন্তব্যস্থলের সন্ধান নিয়ে হাজির হয়েছি
Top 5 Weekend Getaways From Kolkata: ভ্রমণপিপাসু বাঙালিরা একটু ছুটি পেলেই ঘুরতে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। অফিসের কাজের চাপ এবং একঘেয়ে জীবন যাপন থেকে বিরক্ত হয়ে উঠে আমরা সপ্তাহান্তের ছুটিতে কলকাতার বাইরে একটু ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। কিন্তু প্রতিবারই যেন পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। তবে আর চিন্তা করতে হবে না, আজ আমরা কলকাতার নিকটবর্তী ৫টি সেরা গন্তব্যস্থলের (Top 5 Weekend Getaways From Kolkata) সন্ধান নিয়ে হাজির হয়েছি। দেখে নিন সেই জায়গাগুলি –
১. সুন্দরবন:
সুন্দরবনের নাম শুনলেই সবার প্রথমে যে জিনিসটা মাথায় আসে, সেটা হচ্ছে সুন্দরবনের বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনে গিয়ে সবাই বাঘের দেখা পেতে চায়। কিন্তু বাঘমামাকে দেখার সৌভাগ্য কী আর সবার হয়? কলকাতা থেকে মাত্র ১০৯ কিমি দূরত্বে অবস্থিত সুন্দরবন। ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও মেঘনা এই তিনটি নদীর অববাহিকার ব-দ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জুড়ে বিস্তৃত।
নদী ও সমুদ্রের শান্ত সৌন্দর্য, বিশ্ব বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দুর্লভ চিত্রল হরিণ, প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ আর ২৭০ প্রজাতির পাখিসহ এই গভীর অরণ্যের রূপ দেখতে আপনি সপ্তাহান্তের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন এই অপূর্ব সুন্দর স্থানটি দিয়ে। বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে বছরজুড়েই পর্যটকদের আসা-যাওয়া থাকে। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে সুন্দরবনকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৭ সালে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার থেকে শুরু করে ম্যানগ্রোভ অরণ্য এইসব কিছু মিলিয়ে একটুও হতাশ হবেন না, উল্টে দারুন একটি অ্যাডভেঞ্চার প্রাপ্তি করে বাড়ি ফিরবেন।
কীভাবে যাবেন: কলকাতার অতি কাছেই ফলে বেশিরভাগ মানুষ সড়কপথই ব্যবহার করেন। তাছাড়া হাওড়া থেকে বাসও রয়েছে। শিয়ালদহ থেকে ট্রেন পরিষেবাও হয়েছে।
কোথায় থাকবেন: সুন্দরবনের ভেতরে পর্যটকদের থাকা ও খাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের সুন্দরবনে রাত্রিযাপন করতে হলে তাদের বহনকারী নৌযানেই ব্যবস্থা করতে হয়। তবে আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলে সুন্দরবনের ভেতরে থাকা বিশ্রামাগারেও রাত্রিযাপনের সুযোগ করে নিতে পারেন।
২. বকখালি সমুদ্র সৈকত:
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার আরও একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হল বকখালি। কলকাতা থেকে মাত্র ১৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাকদ্বীপের নামখানায় (কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্লক) সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি গন্তব্যস্থল হল এটি। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে অবস্থিত বিভিন্ন বদ্বীপ-এর মধ্যে এটি অন্যতম, যেগুলির বেশিরভাগই সুন্দরবনের অংশ। এর মধ্যে কিছু সংকীর্ণ খাঁড়ির ব্রিজের সাথে সংযোগ রয়েছে। কম খরচে আশেপাশে একটু সামুদ্রিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অন্যতম স্থান হল এটি। বকখালির সৈকত আর পাঁচটা সমুদ্র সৈকত থেকে অনেকটা আলাদা। ভীষণ শান্ত, নিরিবিলি একটা পরিবেশ রয়েছে এখানে। বকখালি তে সমুদ্র সৈকত ছাড়া আরো অনেকগুলি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। নামখানা থেকে বকখালি যাওয়ার জন্য নতুন ব্রিজ তৈরি হয়েছে ।তাই এখন বকখালি যেতে হলে আপনাদের নদীর পেরিয়ে যাওয়ার কোন দরকার নেই। এখানে রয়েছে বিখ্যাত হেনরি’স আইল্যান্ড। তার সাথে দেখতে পাবেন ফ্রেজারগঞ্জ- এর অকেজো বায়ু কলগুলি। তাহলে আর কী বেরিয়ে পড়তে পারেন সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে বকখালি সমুদ্র সৈকতে।
কীভাবে যাবেন: বকখালি যাওয়ার সহজ উপায় হল ট্রেনে করে যাওয়া। শিয়ালদহ থেকে নামখানা আপনি ট্রেনে করে যেতে পারবেন। তারপর ওখান থেকে বাস কিংবা টোটোতে করে আপনারা বকখালি পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়া সড়কপথেও যাওয়া যায়
কোথায় থাকবেন: এখানে প্রচুর হোটেল এবং লজ রয়েছে। যেগুলির ভাড়া আপনার সাধ্যের মধ্যেই।
৩. বোলপুর শান্তিনিকেতন:
বাঙালিদের কাছে বোলপুর খুব কাছের একটি প্রিয় স্থান। শান্তিনিকেতন যায়নি এমন বাঙালি খুব কমই আছেন। শান্তিনিকেতন শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য পরিচিত একটি স্থান। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই স্থানটি। গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়া দেখতে, বর্ষায় সবুজ রঙে রাঙায়িত হতে, শরতে যাই কাশফুল ছুঁতে, হেমন্তে যাই ঝরা পাতার শব্ধ শুনতে, শীতে শীতলতার স্পর্শ পেতে, বসন্তে পলাশ, শিমুল আর অশোকের রূপে প্রমত্ত হতে বাঙালিরা এখানে আসেন। খোয়াই হাট, কোপাই পার, বিশ্ববাংলা হাটের চাতাল, সোনাঝুরির লাল ধুলো, সৃজনী গ্রামের বহুমুখী রূপ, রায়পুর জমিদার বাড়ির ইটের পাঁজরের ইতিহাস, লাল বাঁধের লাবণ্য, ডিয়ার পার্কের চঞ্চল হরিণের চোখট, ডোঙালি কালি মন্দিরের সন্ধ্যা, কঙ্কালী তলার পবিত্রতা এইসব কিছু নিয়েই বোলপুর পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কলকাতা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন সোনাঝুরি হাটে সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে। এই জায়গাটি সপ্তাহের শেষে এক থেকে দু দিন কাটানোর জন্য একটি সুন্দর “উইকএন্ড ডেস্টিনেশন”।
কীভাবে যাবেন: শান্তিনিকেতন যাওয়ার সহজ পথ হল রেল পথ। হাওড়া থেকে ট্রেনে বোলপুর অথবা প্রান্তিক স্টেশনে নেমে সেখান থেকে টোটোতে শান্তিনিকেতন। অবশ্য অনেকে সড়কপথও বেছে নেন।
কোথায় থাকবেন: শান্তিনিকেতনে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। খোয়াই-এর ধারেও রয়েছে শকুন্তলা রিসোর্ট। অবশ্য রিসোর্ট ভাড়া করতে চাইলে খরচ বেশি হবে।
৫. মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত:
আপনি যদি কলকাতার কাছাকাছি আরও একটি নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত বেছে নিতে চান, তবে মন্দারমণি আপনার জন্য আদর্শ ঠিকানা। এটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমুদ্র উপকূলের একটি বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র। এটি বঙ্গোপসাগরের (Bay Of Bengal) উত্তরপ্রান্তের পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বড় সমুদ্র উপকূলবর্তী জায়গা। মোহনাই হল এখানের প্রধান আকর্ষণ। মন্দারমনির সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় মন ভরিয়ে দেয়। নিরিবিলিতে ছুটি কাটানোর সব থেকে সুন্দর ভ্রমণ গন্তব্য হল মন্দারমণি। কলকাতা থেকে মাত্র ১৭০ কিমি দূরে অবস্থিত মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত আপনার সপ্তাহান্তের ছুটির জন্য বেছে নিতে পারেন।
কীভাবে যাবেন: আপনি হাওড়া থেকে ট্রেনে যেতে পারেন মন্দারমণি। তবে এখানে বেশিরভাগই পর্যটক যায় তাদের নিজস্ব গাড়িতে।
কোথায় থাকবেন: এখানে ছোট বড়ো প্রচুর রিসোর্ট হয়েছে। তবে মন্দারমণি দিঘার থেকে একটু ব্যয়বহুল।
৫. জয়পুর ফরেস্ট:
এবার আসা যাক, প্রকৃতির অন্য এক রূপ এর কাছে। জল-সমুদ্র অনেক মানুষের প্রিয় কিন্তু এমন একদল মানুষ আছেন যারা ভালোবাসেন হাজারো গাছের মাঝে থাকতে, সবুজ দেখতে, বন্যপ্রাণী দেখতে আর এইরকম মানুষদের জন্যই এই জায়গাটি আদর্শ। কলকাতা থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন বাঁকুড়া জেলার জয়পুর ফরেস্টে। কলকাতা থেকে দূরত্ব মাত্র ১২৭ কিলোমিটার। সবুজের শান্ত পরিবেশে মাঝে নানান পাখির ডাক তার সাথে যত্রতত্র হরিণ ঘুরে বেড়াতে দেখা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার অন্যতম জায়গা হল এটি। সপ্তাহান্তের ছুটিতে সেরা ডেস্টিনেশন হল এটি।
কীভাবে যাবেন: সড়কপথে কলকাতা থেকে জয়পুর ফরেস্ট এর দূরত্ব মাত্র ১২৭ কিলোমিটার। সুতরাং গাড়ি করে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা।
কোথায় থাকবেন: এই ফরেস্টের প্রধান আকর্ষণ হল বনলতা রিসোর্ট। অপূর্ব সুন্দর এই রিসোর্ট-এ গিয়ে আপনি সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে পারেন।
এইরকম ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।