বাড়িতে বানান ফল দিয়ে তৈরি প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক
ত্বকের দাগছোপ দূর হয়ে যাবে, ঘুচবে কালিভাবও!
ফল যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনই আমাদের ত্বকের জন্যও জরুরি। কারণ ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এবং ত্বকের জন্যে খুবই প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এবং সুন্দর ও মসৃণ ত্বক পেতেও আমাদের ফল দরকার। উজ্জ্বল ত্বক সকলেরই কাম্য। ত্বক উজ্জ্বল করতে আমরা অনেকেই মেনে চলুন ঘরোয়া টোটকা। কেউ ত্বক পরিষ্কার করতে ব্যবহার করে বেসন। কেউ ত্বকের দাগ দূর করতে কেউ লাগান পাতিলেবুর রস, তেমনই ত্বকের কোনও রকম সংক্রমণ দূর করতে হলুদ লাগান। ত্বকের প্রয়োজনীয় যাবতীয় পুষ্টির জোগান দেয় ফল দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক। তাই ফল দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারলেই অনেক সময় ফেসিয়াল করারও প্রয়োজন হয় না। আপনি বাড়িতেও এই ফলের ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ফল দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক গুলি দেখে নিন-
পেঁপে:
পেঁপেতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি ভাইরাল গুণ এবং এর সাথেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A। এছাড়াও আছে বিশেষ ধরনের এনজাইম। যার মধ্যে এক্সফোলিয়েটিং গুণও আছে। এটি আপনার ত্বকের মৃত কোষকে দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এই প্যাকটি সময়ের আগে মুখে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। আপনার ত্বকের নানা দাগছোপ কমাতেও সাহায্য করে। ১/২ কাপ পাকা পেঁপে ও ২ চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে মেখে নিন। মুখকে যদি ইনস্ট্যান্ট উজ্জ্বলতা দিতে চান, তাহলে এর থেকে ভালো ফেসপ্যাক আর পাবেন না! আর এই ফেসপ্যাকের সঙ্গে ইচ্ছে হলে অল্প দুধও মিশিয়ে নিতে পারেন। তাতে আপনার মুখের উজ্জ্বলতা আরও বাড়বে।
অ্যাভোকাডো:
অ্যাভোকাডোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, E এবং অন্যান্য অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস। যা আপনার ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে এবং আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। যা আপনার ত্বকের নানা সমস্যাই সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অ্যাভোকাডো ফেসপ্যাক সেরা। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা লেবুর রসের সঙ্গে অ্যাভোকাডো মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের দাগ কমায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। এক চামচ অ্যাভোকাডো পাল্প এবং ১ চামচ লেবুর রস নিন। দুটি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে পেস্ট তৈরি করে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে তারপর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আবার এর সঙ্গে আপনি এক চামচ মধুও নিতে পারেন। একটি পাত্রে অ্যাভোকাডোটি ছাড়িয়ে নিন। এবার দুই ফল ভালো করে ব্লেন্ড করে একটি পাল্প তৈরি করে নিন। এর মধ্যে মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। সেই মিশ্রণ আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। গলায় এবং ঘাড়েও লাগিয়ে নিতে পারেন। মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শেষে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। তারপর দেখবেন আপনার ত্বক চকচক করছে।
পাকা কলা:
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন B6, ভিটামিন C, এবং পটাশিয়াম। গবেষণাতে প্রমাণিত যে, এই ধরনের উপাদান ত্বকের টানটান ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। ঘরোয়া ভাবে খুব সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন পাকা কলার ফেসপ্যাক। যা আপনার ড্যামেজ ত্বককে নিরাময় করে। কলার ফেস প্যাক তৈরি করার জন্য প্রথমেই একটি পাকা কলা কচলে নিন। এবার এর সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে এই দুই উপাদান ভালো করে ব্লেন্ড করে একটি পাল্প বানিয়ে নিতে পারেন। তা আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। গলায় এবং ঘাড়েও লাগিয়ে নিতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। যেকোনও প্রকার ত্বকের জন্যই এই প্যাক খুবই উপকারী। ভালো উপকার পেতে সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এই প্যাক ব্যবহার করলেই চেহারায় আলাদা ঝলক দেখতে পাবেন। এই ফেসপ্যাকটি একবার ব্যবহার করে দেখুন বার বার ব্যবহার করতে ইচ্ছা করবে।
কমলালেবু:
কমলালেবু যেমন আপনার স্বাস্থ্যের জন্যে খুব উপকারী তেমন একইভাবে কমলালেবুর খোসাও আপনার ত্বকের জন্য খুবই ভালো। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন C। যা আপনার ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। কমলালেবুর খোসায় এমন কিছু উপাদান থাকে যা সহজেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। আপনার ত্বকের জেল্লাও হয় চোখ ধাঁধানো। প্রথমে কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে নিন। সেগুলি ভেঙে নিন এবং ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার সেগুলি ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। তিনদিন লাগবে। তারপর সেই খোসার টুকরোগুলো গুঁড়ো করে নিতে হবে। কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো একটি বোতলে আলাদা করে রেখে দিতে পারেন। এবার এর সঙ্গে এক চামচ ওটমিল, কয়েক ফোঁটা মধু ও এক চামচ টক দই মেশান। কমলালেবুর খোসা ত্বকের মৃত কোষ ঝরাতে ও ত্বককে পরিষ্কার করতে বিশেষ সাহায্য করে। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। প্যাকটি মুখে, ঘাড়ে এবং গলায় ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠান্ডা জলটি ধুয়ে ফেলুন। অন্যদিকে তিনটে কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে নিন। সেগুলো ভেঙে নিন এবং ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার সেগুলো শুকিয়ে নিতে হবে। তিনদিন লাগবে। তারপর সেই খোসার টুকরোগুলো গুঁড়ো করে নিতে হবে। কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো একটি বোতলে আলাদা করে রেখে দিতে পারেন।
আপেল:
ফাইবার ও নানা ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর আপেল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তেমনি রূপচর্চাতেও এর রয়েছে কার্যকর ভূমিকা। ত্বক উজ্জ্বল ও পরিষ্কার রাখতে আপেলের ফেস প্যাক তৈরি করুন সহজেই- প্রথমে একটি আপেল কেটে ব্লেন্ড করে নিন। এবার তার সঙ্গে মেশান দই। ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই প্যাক লাগান মুখে তারপর ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। আবার আপেল ও গ্লিসারিন দিয়ে বানাতে পারেন আরেকটি ফেসপ্যাক। প্রথমে আপেল কেটে ব্লেন্ড করে নিন। এবার তার সঙ্গে মেশান গ্লিসারিন। ভালো করে মিশিয়ে তা মুখে লাগান। ২০ মিনিট ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। ত্বকের জন্য বেশ উপকারী আপেল ও গ্লিসারিনের এই প্যাকটি। অন্যদিকে আপেল ও পাতিলেবুর রস দিয়ে আরও একটি প্যাক বানাতে পারেন। প্রথমে আপেল কেটে ব্লেন্ড করে নিন। এবার তার সঙ্গে মেশান পাতিলেবুর রস। ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর জলে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন এই প্যাক ব্যবহার করুন ত্বকের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
সতর্কতা অবলম্বন:
•ত্বকে কোনও ফেসপ্যাক লাগানোর আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। জ্বালা করলে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আর পুনরায় ব্যবহার করবেন না।
•ত্বকের কোনও চিকিৎসা চললে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও প্যাকই ব্যবহার করবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে।
•সবসময় কোনও ফেসপ্যাক লাগানোর আগে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে।
•ফেসপ্যাক ১৫-২০ মিনিটের বেশি রাখবেন না।
•সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন, এর বেশি না।
• ফেসপ্যাক লাগিয়ে ধুয়ে ফেলার পরে অবশ্যই ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।