এই ৫টি ভিটামিনে লুকিয়ে আছে ত্বককে সুস্থ থাকার গোপন রহস্য
আপনার খাদ্যতালিকাতেও এই ভিটামিনগুলি রাখতে হবে
ত্বকের সব ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন খুবই প্রয়োজনীয়। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বলা ভালো উজ্জ্বল মোলায়েম ত্বক পেতে হলে আপনার পরিচর্যায় ভিটামিনের প্রাধান্য থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন ভিটামিন ত্বকের জেল্লা বাড়াতে, রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাব দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিনের অভাবে শুধু শারীরিক সমস্যাই না, ত্বকেরও নানা সমস্যা দেখা যায়। ভিটামিন ত্বককে কোমল ও মসৃণ হতে সহায়তা করে। এইসব ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস। কোন কোন ভিটামিন ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় এবং সেগুলো কোথা থেকে কীভাবে পাবেন, দেখে নিন। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি, ভিটামিন সমৃদ্ধ প্রোডাক্টও ব্যবহার করতে পারেন। এবার জেনে নিন ভিটামিনগুলি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য-
ভিটামিন A:
ভিটামিন A রেটিনল নামেও পরিচিত। এই রেটিনল ব্রণ ও পিম্পল কমাতে খুবই সহায়ক। ভিটামিন A-তে আছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান। তাই একাধিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে ব্যবহার করা হয় এটি। ভিটামিন A-তে আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। যা ত্বকের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে অ্যাকনে হওয়ার সম্ভাবনাও কম হয়। এটি সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে ত্বককে। সানবার্নও সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এই একই কারণে সানস্ক্রিনেও ব্যবহার করা হয় এটি। ভিটামিন A ত্বকে সিবামের উৎপাদন কমায়, যার ফলে মুখে ব্রণ ও পিম্পলের সমস্যাও কম হয়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভিটামিন A খুবই কার্যকরী বলে মনে করা হয়। ভিটামিন A সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ডিম, দুধ, ডাল এবং সবুজ শাক-সবজি।
ভিটামিন C:
ভিটামিন C-এর অ্যান্টিঅক্সিডান্ট সংক্রান্ত উপকারিতার কথা খুবই সুবিদিত এবং ত্বক বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন যে কোনও বয়সের ত্বক সুস্থ আর সুন্দর রাখতে ভিটামিন C একটি বড়ো হাতিয়ার। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ভিটামিন C ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ত্বকের কালচে দাগছোপ দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাজে লাগে ভিটামিন C। এক্ষেত্রে ঘরে বানানো বিভিন্ন ফেস প্যাক বা ফেস স্ক্রাবের মধ্যে মিশিয়ে নিতে পারেন ভিটামিন C। ভিটামিন C-এর পুষ্টিগুণ কোষস্তর থেকে ত্বকের DNA নতুন করে তৈরি করতে পারে, ফলে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ে এবং অতিবেগুনী রশ্মি জনিত ত্বকের ক্ষতিও সেরে যায়। একাধিক ত্বক বিশেষজ্ঞ ত্বক পরিচর্যার সম্পূর্ণ সুফল পেতে ভিটামিন C যুক্ত সিরাম মাখার পরামর্শ দেন। এই ভিটামিন সবচেয়ে বেশি থাকে পাতিলেবুতে। তাছাড়া কমলালেবু, ব্রকোলির মতো সবজিতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C পেতে পারেন।
ভিটামিন D:
একটি সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টির মধ্যে ভিটামিন D অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সূর্যের আলো থেকেই আমাদের শরীরে আসে ভিটামিন D। আমাদের হাড়, দাঁত এবং ত্বককে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখে এই ভিটামিন D। এই ভিটামিন আমাদের শরীরে তৈরি হয় না বা বাইরে থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণও করা যায় না। যখন আমাদের ত্বক সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে তখন ত্বক অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে। তারপর সেটাকে ভিটামিন D-তে রূপান্তরিত করে। এছাড়া বেশ কিছু খাবারেও পাওয়া যায় ভিটামিন D। দুধ এবং দুগ্ধজাত প্রোডাক্টে পেতে পারেন ভিটামিন D।
ভিটামিন E:
ভিটামিন E মুখের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এই ভিটামিনটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন E-তে হাইড্রেটিং এবং অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ফলে এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। বর্তমানে রুপচর্চায় ভিটামিন E-এর ব্যবহার অনেক বেড়েছে। ভিটামিন E মুখের নানান দাগও কমায়। তাই ত্বকের যত্নে আপনিও ভিটামিন E ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন E সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সবুজ শাক-সবজি, বাদাম এবং ভেজিটেবল অয়েল।
ভিটামিন K:
ভিটামিন K ত্বকের জন্য উপকারী এবং ত্বকের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। ডার্ক সার্কেলের সমস্যা কমাতে ভিটামিন K খুবই সহায়ক। ডার্ক সার্কেলের জন্য যেসব ক্রিম ব্যবহার করা হয়, সেগুলির প্রত্যেকটিতেই সাধারণত ভিটামিন K উপস্থিত থাকে। তাই যেকোনও আই ক্রিম ব্যবহার করার আগে, আপনার ক্রিমটিতে ভিটামিন K আছে কি না তা পরীক্ষা করে নিন। ভিটামিন K স্ট্রেচ মার্ক কমাতেও যেমন সাহায্য করে তেমন ত্বকের দাগছোপ মলিন করতেও সাহায্য করে। আবার অন্যদিকে ভিটামিন K ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ভিটামিন K সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ব্রকোলি, মাছ, পালং শাক, ডিম, ছোলা এবং মটর।
পরিশেষে বলা যায়, শরীরে যদি কোনওরকম রোগ থাকে তবে প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।