এই বছর দোল পূর্ণিমা এবং হোলি উৎসব কবে পড়েছে? জেনে নিন রঙের উৎসবের গুরুত্ব
দোল পূর্ণিমা বাংলার বসন্ত উৎস
হাইলাইটস:
•দোল পূর্ণিমা এবং হোলি উৎসবের গুরুত্ব
•এই বছর দোল পূর্ণিমার দিনক্ষণ
•হোলিকা দহন কী?
আর মাত্র কয়েকদিন পরেই উৎসবের রঙ লাগবে সকলের গায়ে। এই রঙের উৎসবে সামিল হোন আট থেকে আশি সকলেই। চলতি কথায় আছে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে অনেক উৎসবগুলির মধ্যে সকলের পছন্দের তালিকায় প্রথমের দিকেই থাকে দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব। দোল পূর্ণিমা বাংলার বসন্ত উৎসব। প্রতি বছর বাঙালিরা এই দিনটিতে রঙ খেলায় মেতে ওঠেন। দোলযাত্রা বসন্তকে আহ্বান জানায়। এই উৎসবটি যেন জানিয়ে দেয় শীত বিদায় নিয়েছে, এসেছে বসন্তের ছোঁয়া। এই দিনে বাতাসে যেন একটাই সুর বয়ে চলে “বসন্ত এসে গেছে”। এই বসন্ত উৎসবকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতি যেন এক বর্ণিল সাজে সেজে ওঠে। এই বিশেষ দিন উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় পুজো হয়।
দোল পূর্ণিমা হিন্দু ধর্মের জন্য খুব শুভ বলে মনে করা হয়। তাই রঙিন এই উৎসবের দিকে মুখিয়ে থাকেন অনেকেই। এদিন রাধা- কৃষ্ণের পুজো করা হয়। বাঙালির দোলযাত্রাটিও রাধা-কৃষ্ণকে ঘিরেই। দোল পূর্ণিমা ভিন্ন নামে অভিহিত। কোথাও এই দোল পূর্ণিমাকে দোল যাত্রা বলে। আবার ফাল্গুনী পূর্ণিমাকেও দোল পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের জন্ম হয়েছিল এই পূর্ণিমার তিথিতে, তাই দোল পূর্ণিমাকে গৌরী পূর্ণিমা বলা হয়। দোল পূর্ণিমা সম্পর্কে অনেক পৌরাণিক ঘটনা রয়েছে। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এই তিথিতে বৃন্দাবনে আবির ও গুলাল নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ, রাধা এবং তার গোপীগনের সঙ্গে হোলি খেলেছিলেন আর সেই ঘটনা থেকে উৎপত্তি হয় দোল খেলা। অন্যদিকে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত উৎসব চালু করেছিলেন।
দোলযাত্রার দিনক্ষণ:
এই বছর দোলযাত্রা পড়েছে ৭ই মার্চ (বাংলায় ২২শে ফাল্গুন)। এই দিনটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। হোলি সাধারণত দোলের পরের দিন পালিত হয়। এই বছর হোলি পড়েছে ৮ই মার্চ (বাংলায় ২৩শে ফাল্গুন)।
দোল পূর্ণিমার সময়:
৬ই মার্চ অপঃ ৪/ ১৮/ ৪৭ মিনিট থেকে ৭ই মার্চ সন্ধ্যা ৬/ ০/ ৪০ মিনিট পর্যন্ত এইবছর পূর্ণিমা থাকবে।
দোল পূর্ণিমার মূল আকর্ষণ আবির। এই দিনটি আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার দিন। তবে শুধু বাঙালিরা নয়, ভারতবর্ষের বেশিরভাগ স্থানেই রঙের উৎসব পালন করা হয় মহা সমারোহে। সারা বিশ্ব জুড়ে এই রঙের উৎসব “হোলি” নামে পরিচিত। এই হোলি কথাটি “হোলিকা” থেকে সৃষ্ট হয়েছে। যদিও গল্পটি বেশিরভাগ মানুষেরই জানা। দোল বা হোলির অর্থ এক হলেও দুটি ভিন্ন অনুষ্ঠান। দোল ও হোলি কখনওই এক দিনে পড়ে না। দোলযাত্রা বা বসন্তোত্সব একান্তই বাঙালিদের রঙিন উত্সব। আর হোলি হল অবাঙালিদের উৎসব। বাঙালিদের মধ্যে দোলযাত্রাকে বসন্তের আদমনী বার্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
হোলিকা দহন কী?
হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ এবং দিতির ছেলে হিরণ্যকশিপুর বোন। আর হিরণ্যকশিপুরের ছেলে ছিলেন প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদ অসুরবংশে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও ছিলেন প্রভু বিষ্ণুর ভক্ত। এর জন্য তার পিতা তার উপর ক্রুদ্ধ ছিলেন। কারন সে প্রভু বিষ্ণুকে তার বাবার উপর স্থান দিয়েছিলেন। তাই তার পিতা সিধান্ত নিয়েছিলেন নিজের ছেলেকে হত্যা করবেন। কিন্তু প্রহ্লাদ ধার্মিক ছিলেন। তাই তাকে হত্যা করা সহজ ছিল না। কোনোভাবেই তাকে হত্যা করা যাচ্ছিল না। তখন হিরণ্যকশিপুর তার ছেলেকে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে হোলিকা আগুনে কোন দিন ক্ষতি হবে না এই বর পেয়েছিল। তাই প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হোলিকা সিদ্ধান্ত নেয় সে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেবে। এবং সে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে একদিন আগুনে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু হোলিকার বর পাওয়া সত্ত্বেও সেদিন শেষ রক্ষা হয়নি। প্রহ্লাদ তো বিষ্ণুর আশীর্বাদে বেঁচে যায়। কিন্তু আগুনে ভস্ম হয়ে যায় হোলিকা। সে তার বরের অপব্যবহার করায় আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার সময় তার বর নষ্ট হয়ে যায় এবং সে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই দিনটি থেকে পালন করা হয় হোলি বা দোল উৎসব। হোলিকার এই কাহিনি চাঁচর বা হোলিকা দহন নামে পরিচিত, যা দোলের আগের দিন পালন করা হয়। অথবা যা সাধারণত নেড়াপোড়া বলে অভিহিত। নেড়াপোড়া দিন শুকনো ডালপালা, গাছের শুকনো পাতা দিয়ে বুড়ির ঘর করা হয়। অনেক আবার হোলিকার উদ্দেশ্যে মাটির পুতুল বানিয়ে ওই শুকনো ডালপালার ঘরে রেখে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিনটি মানুষ নানা ভাবে পালন করে থাকে। এবং পরের দিন হয় দোল উৎসব। হোলিকার উদ্দেশ্যে সেই ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হোলিকা দহন পালন করা হয়।
হোলিকা দহন উৎসব হয় গোটা উত্তর ভারত জুড়ে। মনের কালিমাকে দূরে সরিয়ে আলোর উজ্জ্বলতায় জীবনকে ভরিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতির জন্যে বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়। হোলির আগের দিন হয় হোলিকা দহন। এবছর দিনটি পড়েছে ৭ই মার্চ। এবার হোলিকাদহনের শুভ সময় – ৬ই মার্চ, বিকাল ৪.১৭ থেকে ৭ই মার্চ সন্ধ্যা ৬.০৯ পর্যন্ত। হোলির ৮ দিন আগে থেকে হয় হোলাষ্টক। এই বছর হোলাষ্টক শুরু হয়ে গেছে কাল অর্থাৎ ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে।
এইরকম মূল্যবান প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।