Putulnacher Itikotha Review: সুমনের ছবি ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ যেন কালহীন সময়ের দলিল, কেমন হল ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’? রিভিউ পড়ুন
সেই গ্রামেরই তরুণ শশী কলকাতা থেকে ডাক্তারি পাশ করে কিছুদিনের জন্য ফিরে আসেন বিলেত যাবার আগে। কারণ তাঁর মন এবং শরীরের সাথে যে জড়িয়ে আছে এই গ্রামের সেন দিদি (অনন্যা), সূর্যের পূজারী গ্রামের জাঁদরেল যাদব পণ্ডিত (ধৃতিমান)
Putulnacher Itikotha Review: সুমনের শৈল্পিক বুনন, দুর্দান্ত অভিনয় আবির-জয়ার, সাহিত্যের মেজাজ ফিরে এল ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য়
হাইলাইটস:
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সাহিত্য ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’
- এবার তা বড় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন সুমন মুখোপাধ্যায়
- ছবির চরিত্রগুলো যেন জীবন্ত ফুটে উঠেছে ক্যামেরায়
Putulnacher Itikotha Review: সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছে এখনও। মানুষের জন্ম, জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, জীবন-যাপন, মৃত্যু, সব কিছুই ঘটে চলে যেন এক অদৃশ্য সুতোর টানে। লেখক তাঁর এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন স্বাধীনতাপূর্ব বাংলার এক দীন দরিদ্র গ্রাম। যেখানে শিক্ষার আলো তখনও তেমনভাবে এসে পড়েনি।
We’re now on WhatsApp- Click to join
‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ ছবির রিভিউ
সেই গ্রামেরই তরুণ শশী কলকাতা থেকে ডাক্তারি পাশ করে কিছুদিনের জন্য ফিরে আসেন বিলেত যাবার আগে। কারণ তাঁর মন এবং শরীরের সাথে যে জড়িয়ে আছে এই গ্রামের সেন দিদি (অনন্যা), সূর্যের পূজারী গ্রামের জাঁদরেল যাদব পণ্ডিত (ধৃতিমান), বয়স্ক বাবা (শন্তিলাল), আর প্রতিবেশী বৌদি হলেও তাকে ‘বউ’ নামে ডাকা তরুণী কুসুম (জয়া আহসান), এবং চঞ্চলা কিশোরী মোতি (সুরাঙ্গনা)। এবং অবশ্যই রয়েছে একদল সহানুভূতিশীল প্রতিবেশী। যেন এক শরৎচন্দ্রের গ্রাম। সনাতন গ্রামীণ বাংলার এমন একটি পটভূমি এবং এমন চরিত্রে জড়িয়ে থাকার গল্পটি পেয়ে লেখকের বক্তব্যকেই সরল সাদাসিধে ন্যারেটিভভাবে তুলে এনেছেন বড় পর্দায় পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়।
We’re now on Telegram- Click to join
এছাড়া, সায়ক ভট্টাচার্যের আলোকচিত্র সেই পুরনো গ্রাম বাংলার নদী, আকাশ বাতাস, বনানী ছাড়াও ভগ্নপ্রায় জমিদার এবং অবস্থাপন্ন শশীর বাড়ির পাশাপাশি দরিদ্র কুসুমের পরিবার, গ্রামের বটতলা সব দিকেই সমান নজর দিয়েছে। যা বহুদিন পর নিশ্চিন্দিপুরের কথা মনে করিয়ে দেয় যেন। কিন্তু এই গ্রাম একটু বর্ধিষ্ণু, তফাৎ এইটুকুই। জীবন চলে নিজের চলার ছন্দে।
শশীর সাথে কুসুমের সম্পর্কের চোরাটানটাও বেশ সুন্দর বজায় রেখেছেন সুমন তাঁর চিত্রনাট্যে। সেনদিদির সাথে শশীর বন্ধুর মতো সম্পর্কটাও অমলিন ভাবে রীতিমতো পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন সুমন। এবং তাঁর বাবার পরিকল্পনায়, শেষপর্যন্ত গ্রাম ছেড়ে যাওয়া হয়না শশীর। সে সেটা বুঝতেও পারে, কিন্তু ভবিতব্য এবং ভাগ্য বলে মেনে নিয়ে গ্রামের একমাত্র হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করে, আর রুগী দেখে বেড়ায় সাইকেলে করে। লেখকের আন্তরিক স্বরের সাথে একেবারে মিশে যায় শশী এবং পরিচালক সুমনের সমস্বর। আর এখানেই সমকালীন হয়ে ওঠে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। এ মুহুর্তে আমরা বুঝতে পারি যে নিজেদের কাছেই কেমন আমরা যেন অসহায় পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়ি। শেষ মুহূর্তে সুমনের ছবি তাই হয়ে ওঠে কালহীন সময়ের এক দলিল।
Read More- টান টান গল্প, রোমাঞ্চ এবং আবেগে ভরপুর সুপারম্যান! কেমন হল সুপারম্যান? রইল রিভিউ
সুমনের স্বাভাবিক পরিচালন শৈলীর সাথে একাত্ম হয়ে রয়েছে প্রধান সব কটি চরিত্রশিল্পী। সুষম অভিনয় সবকটি চরিত্রশিল্পীর। অবশ্যই প্রথম নাম অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়ের। লেখক-কথকের ভূমিকায় তিনিই। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাঁর স্বাভাবিক অভিনয়। কুসুমের আলগা লাবণ্য এবং দুষ্টুমি জড়ানো যৌনতার ইশারাগুলির প্রকাশ সুন্দর। কুসুমের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাওয়ার মুহূর্তেও দ্বিধাজড়িত অস্বস্তি, সেনদিদির সাথে খুনসুটি করা, যাদব পন্ডিতের সাথে কথার লড়াই সব মুহূর্তে মুখের মধ্যেই ফুটিয়ে তুলেছেন আবির অন্তরের দ্বন্দ্ব। সেনদিদির চরিত্রে অনন্যা চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ শরীরের যন্ত্রণার সাথে মনের লড়াইটাও যেন জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন ক্যামেরার সামনে। সুমনের এই ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ সিনেমা যেন সাহিত্যের মেজাজ যেন ফিরিয়ে এনেছে।
এইরকম আরও বিনোদন জগতের প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।