Bangla News

Dilip Ghosh: কুরুচিকর মন্তব্যের জেরে দিলীপ ঘোষের বাংলোয় কুড়মি আন্দোলনকারীদের তাণ্ডব

Dilip Ghosh: এবার কুড়মিদের রোষের মুখে দিলীপ ঘোষ

হাইলাইটস:

• কুরুচিকর মন্তব্যের জেরে দিলীপ ঘোষের উপর ক্ষিপ্ত কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ

• গতকাল ভাঙচুর চলে তাঁর খড়্গপুরের রেলওয়ে বাংলোতে

• তবে তিনি তাঁর অবস্থানে এখনও অনড়

Dilip Ghosh: বেশ কয়েকদিন ধরেই আদিবাসী কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। এবার কুড়মিদের রোষের মুখে প্রাক্তন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গত রবিবার ঝাড়গ্রামের লালগড়ে একটি জনসভা যাওয়ার মুখে বাধাপ্রাপ্ত হন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখতে থাকেন কুড়মি আন্দোলনকারীরা। তাঁর কাছে কুড়মিরা জানতে চান, কুড়মিদের জন্য তিনি কী করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, অনেককে আর্থিক সাহায্য করেছি। এরপর তাদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান কুড়মি আন্দোলনকারীরা। একইসঙ্গে ‘ঘাঘর ঘেরা’ কর্মসূচি চলাকালীন তিনি কেন লালগড়ে এসেছেন, তার জবাবও চাওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

এখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত। তার ঠিক পরেরদিন সকালে তিনি কার্যত কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “ওরা যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে সব কাপড় খুলে দেব আমি। দিলীপ ঘোষের পিছনে যেন লাগতে না আসে। হিম্মত থাকলে শ্রীকান্ত মাহাতোকে তারা রিজাইন করাক। যত মাহাতো এমপি আছে, এমএলএ আছে তাদের রিজাইন করাক। আমি ওদের সঙ্গে আছি, থাকব। আমার এলাকায় যারা বসেছিল। ধর্না দিয়েছিল দিনের পর দিন। আমি তাদের সহযোগিতা করেছি। ওরা যদি চান আমি নাম মিডিয়ার সামনে বলব।”

দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পরেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায় একাধিক মহলে। এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করা হয় কুড়মি আন্দোলনকারীদের তরফেও। পরবর্তীকালের কুড়মি প্রতিনিধিদের তরফে ২৪ ঘণ্টার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত দিলীপ ঘোষ সেভাবে কুড়মি সমাজের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। ফলে রানিবাধে তুমুল বিক্ষোভ নয়, বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কুশপুতুল পোড়ানো হয় বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির। আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘কর্মীরা কোনও নেতার কাছে হাতে পাতে না। নিজেরা চাঁদা তুলে আন্দোলন করে।’

জঙ্গলমহলে দিলীপ ঘোষকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার গতকাল সকালে খড়্গপুরে তাঁর রেলওয়ে বাংলোর সামনে জমায়েত করেন কুড়মি সম্প্রদায়ের কয়েকশো মানুষ। এরপর গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন তারা। শুধু তাই নয় বাংলোর বাইরে বেশ কিছু জিনিসও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। শুধু ভাঙচুর নয়, কাপড় খুলে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখায় তাঁরা। দিলীপ ঘোষের রেলওয়ে বাংলো ৬৭৭ এর বাইরে প্রদর্শন করে তারা। কুড়মি সমাজের আন্দোলনে উত্তাল খড়্গপুর। নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে আরো আন্দোলন তীব্র হবে বলে জানান কুড়মিরা। কুড়মি নেতা অজিত মাহাতোর নেতৃত্বে খড়্গপুরের দিলীপবাবুর বাসভবনে হামলা চালানো হয়। এরপর অজিত মাহাতো জানায়, ‘দিলীপ ঘোষকে ক্ষমা চাইতে হবে, নইলে আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে। জঙ্গলমহলের সমস্ত থানাতে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে।’ তারপর ঘটনাস্থলে পুলিশ যখন বিক্ষোভকারীদের বাংলোর বাইরে বের করে দেয়, তখন রাস্তা আটকে শুরু হয় বিক্ষোভ। ‘দিলীপ ঘোষ মুর্দাবাদ’ লেখা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় বাংলোর সামনে থাকা সমস্ত ব্যানার।

অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিলীপ ঘোষের হয়ে ক্ষমা চান কুড়মি সম্প্রদায়ের কাছে। ধুন্ধুমার বিক্ষোভের পরেও অবশ্য দিলীপ ঘোষ নিজের অবস্থানে অনড়। কুড়মিদের হুঁশিয়ারিতে একেবারেই পাত্তা দিতে নারাজ তিনি। ঘটনা ঘটাকালীন তিনি দিল্লিতে ছিলেন। তাঁর বাংলোয় ভাঙচুরের খবর পেয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘কিছু মাতাল আমার বাড়িতে হামলা করেছে। ৫০ হাজার লোক নিয়ে আসবে বলেছিল। মাত্র ২০০ লোক জোগাড় করতে পেরেছে।’ এমনকি রাজনৈতিক চক্রান্তের কারণে হামলা বলেই জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ৷ তিনি আরও বলেন, ‘আমার লোকজনও আছে। আমরা চাইলে প্রতিরোধ করতে পারতাম। আমরা তো ঝগড়া করতে যাইনি।….আগে ও ক্ষমা চাক। ওর নেতাগিরি আমি ঘুচিয়ে দেব। ওর মতন এই যে চোর দালাল যতগুলো নেতা না, সব কটার মুখোশ খুলে দেব। কে কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে আমি জানি। আমি বলিনি এখনও। কারণ ওদের মধ্যেই ঝগড়া বেঁধে যাবে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না, কেউ কাউকে মানেনা। কুড়মিদের মত সহজ সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে।’

এইদিকে গতকাল নবান্নে কুড়মি আন্দোলন নিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় কুড়মি সমাজের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে কুড়মি সমাজের পক্ষে বৈঠকে ছিলেন শুভেন্দু মাহাতো, সুনীল মাহাতো এবং বিজয় মাহাতো। এছাড়াও দুই তৃণমূল বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতো ও সুশান্ত মাহাতো এবং ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতৃত্ব রয়েছেন। কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকার। এবার দেখার পালা দিলীপ ঘোষ এবং কুড়মি সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বিরোধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটি কোন দিকে রূপ নেয়।

এইরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button